মক্কা নগরের ইতিবৃত্ত ও তারপর

ইসলামের পবিত্রতম ভূমি হলো মক্কা যা মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এরও জন্মস্থান। এখানেই আছে পবিত্র কাবাঘর, যা সারাবিশ্বের মুসলমানদের কিবলা যেদিক বরাবর দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা হয়। এই কাবাকে প্রতিদিন হাজার হাজার মুসলমান আবর্তন বা তাওয়াফ করছে। আর প্রতিবছর নির্দিষ্ট একটি সময়ে পাঁচদিনের জন্য সারা দুনিয়া থেকে লাখ লাখ মুসলমান সমবেত হয় মক্কা নগরে হজ পালনের জন্য।

তবে মক্কার গুরুত্ব শুধু ধর্মীয়ভাবেই প্রবল নয়, বরং ধর্মের পরিসীমা ছাড়িয়ে এই ঐতিহাসিক নগরী গোটা বিশ্বের বিভিন্ন ঘটনাপ্রবাহের ওপর সুদূরপ্রসারী প্রভাব ফেলে চলেছে। গবেষক জিয়াউদ্দিন সরদার তাঁর মক্কা: দ্য সেক্রেড সিটি বইতে সে বিষয়েই আলোকপাত করেছেন। ইতিহাস ও স্মৃতিচারণার এক সরস মিশ্রণ ঘটেছে এতে। কীভাবে প্রায় পরিত্যক্ত ও বিরান উপত্যকা থেকে মক্কা অনেকটা আকস্মিকভাবেই একটি বৈশ্বিক সাম্রাজ্যের ধর্মীয় কেন্দ্রভূমি হয়ে উঠল, সে ইতিহাস খুঁজতে গিয়ে লেখক চলে যেতে চেষ্টা করেছেন একেবারে উৎসে। আবার নিজের ও আরো অনেকের হজের অভিজ্ঞতার কাহিনী তুলে ধরার মধ্য দিয়ে ঐতিহ্য ও আধুনিকতার মধ্যকার দ্বন্দ্বকে প্রকাশ করেছেন যা এই নগরের ইতিহাসেরই অংশ।

ভূমিকাসহ বইটি মোট ১২টি অধ্যায়ে বিন্যস্ত। ভূমিকাতে লেখক ১৯৭৫ সালের ডিসেম্বর মাসে নিজের প্রথম হজ পালন করার কাহিনী সংক্ষেপ বলার মধ্য দিয়ে কেন এই বইটি লিখেছেন, তাও কিছুটা ব্যাখ্যা করেছেন।

তাঁর ভাষায়, ‘এই বইটিতে আদর্শিক মক্কার কথা তুলে ধরা হয়নি, বরং কীভাবে এই আদর্শ দানা বাঁধল তা দেখানো হয়েছে। এটিতে প্রান্তিক ও অবহেলিত মক্কার কথা বলা হয়েছে যেখানে অসংখ্যা জীবন যাপিত হয়েছে, বীর (ও খলনায়কেরা) পদচারণা করেছে, নৃশংসতা সংঘটিত হয়েছে এবং যেখানে লোভ ও অসহিঞ্চুতাও ছিল সব।…আরও অনেক প্রাচীন বড় বড় নগর ও শহরের মতো মক্কার ইতিহাসও বড় নির্মম ও রক্তাক্ত। আর এসবের মধ্যে আমাদের জন্য অনেক শিক্ষণীয় রয়েছে, আর আছে এমন কিছু সুন্দর ও ভাল কাহিনী যা তুলে ধরা দরকার।’ পাশাপাশি লেখক এই বলেও সতর্ক করে দিয়েছেন যে বইয়ের অনেককিছুও পড়তে গিয়ে অনেক পাঠক হোঁচট খাবেন, অস্বস্তি বোধও করবেন।

বইটি আলোচনা করতে প্রখ্যাত ইতিহাসবেত্তা উইলিয়াম ডালরিম্পল বিলেতের অবজাভার পত্রিকায় লিখেছিলেন, ‘বিশ্বের অন্যতম বড় শহরের ওপর একটি তাৎপরযপূর্ণ গবেষণা যা একাধারে উপভোগ্যও বটে।’ দ্য ইকোনমিস্ট–এর মন্তব্য ছিল, ‘ভালোবাসা থেকে অথচ মোহমুক্তভাবে করা একটি কাজ যেখানে প্রাক-ইসলাম সময় থেকে আজকে পরযন্ত মক্কার কাহিনী বর্ণনা করা হয়েছে।’ আর দ্য টাইমস–এর ভাষ্য হলো, ‘আংশিক ইতিহাস, আংশিক স্মৃতিকথা আর আংশিক জ্বালামী বিতর্ক দিয়ে রচিত বইটির শেষ অধ্যায়টি সৌদি লোভ, বর্ণবাদ, অসহিঞ্চুতা, দ্বিচারিতা আর বাণিজ্যিকায়নের ওপর প্রচণ্ড আঘাত হনেছে।’

মক্কা: দ্য সেক্রেড সিটি; জিয়াউদ্দিন সরদার; প্রথম প্রকাশ ২০১৪ লন্ডন।