আল্লাহ যে নারীর ডাক শুনেছিলেন

ঘটনাটি ইসলামের একজন নারী সাহাবিকে নিয়ে। তাঁর নাম খওলা বিনতে সালামা (রা.)। তাঁর স্বামী ছিলেন আওস ইবনে সামেত।

খওলা (রা.) বলেন, ‘একবার আমার আর আওসের মধ্যে কথা-কাটাকাটি শুরু হয়। আওস ইবনে সামেত রাগের মাথায় বলেন, তোমাকে দেখলে আমার মায়ের পেছন দিকের কথা মনে হয়। অর্থাৎ তুমি আমার মায়ের মতো দেখতে। আমি তোমার সঙ্গে আর কখনো স্ত্রী–সুলভ সম্পর্ক রাখতে পারব না।’

স্ত্রীকে মায়ের সঙ্গে তুলনা করা এটা ছিল আরবের একটি কুপ্রথা। স্বামী যখন তাঁর স্ত্রীর ওপর রেগে যেতেন, তখন এভাবে স্ত্রীদের অপমান করতেন। কিন্তু তাঁরা দুজনই ইতিমধ্যে ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন।

খওলা (রা.) বলেন, ‘সেদিন রাতেই সে আবার আমার কাছে আসতে চাইল। আমি নিষেধ করায় আমাকে জোর করতে চাইল। আমি তার চেয়ে শক্তিশালী ছিলাম। তাকে ধাক্কা দিয়ে আমি ঘর থেকে বের হয়ে আসি। এরপর মহানবী (সা.)- এর কাছে গিয়ে সবকিছু খুলে বলি।’

‘আমি ভেবেছিলাম আল্লাহ তাআলা হয়তো এই ব্যাপারে কোনো গোপনীয় আয়াত নাজিল করবেন। কিন্তু আল্লাহ একটি সম্পূর্ণ সুরা নাজিল করে দিলেন এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে।’

সুরা মুজাদালা এর প্রথম আয়াত, ‘আল্লাহ শুনেছেন সেই নারীর কথা, যে তার স্বামীর বিষয়ে তোমার সঙ্গে বাদানুবাদ করেছে এবং আল্লাহর নিকট ফরিয়াদ করেছে। আল্লাহ তোমাদের কথোপকথন শোনেন; আল্লাহ সর্বশ্রোতা, তিনি সবকিছুই দেখেন।’

এই আয়াত থেকে প্রমাণিত হয়, ইসলাম নারীদের অধিকারের ব্যাপারে কতটা সচেতন।

আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, এটাই কোরআনের একমাত্র সুরা, যার প্রতিটি আয়াতে ‘আল্লাহ’ শব্দটি উল্লেখ আছে। আল্লাহ যেন নারীদের উদ্দেশ্যে বলছেন, তিনি সবই শুনতে পান। তিনি সবার ডাকে সাড়া দেন।

এই সুরা নাজিলের পর আরবে একটা সংস্কৃতি তৈরি হয়ে গিয়েছিল, যেখানে নারীদের কথা মানুষ খুবই গুরুত্ব দিয়ে শুনত।

ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা ওমর (রা.)-এর কথা হয়তো সবাই জানি। দ্বীন পালনের দিক দিয়ে তিনি ছিলেন খুবই শক্ত মনের মানুষ। তাঁকে সবাই সমীহ করে চলত।

একবার ওমর (রা.) বাজার দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন। তাঁর সঙ্গে ছিলেন সাহাবি জারুদ (রা.)। হঠাৎ এক বৃদ্ধ নারী তাঁদের পথ আটকে দাঁড়ালেন। তিনি ওমর (রা.)–কে ধমকের সুরে বললেন, ‘হে ওমর, আমার ঠিক মনে আছে তুমি যখন ছোট ছিলে, বাজারের ভেড়াদের সঙ্গে খেলছিলে। আল্লাহকে ভয় করো আর তোমার দায়িত্ব সম্পর্কে আরও সচেতন হও। তুমি এখন খলিফা। মানুষের দায়িত্ব এখন তোমার কাঁধে। মনে রেখো, যাঁরা আল্লাহকে ভয় করে, তাঁদের উচিত স্মরণ করা, সেই দিন আর বেশি দূরে নেই, যখন সবকিছুর বিচার হবে।’

কথাগুলো ওমর (রা.)-কে বলে শিশুর মতো কাঁদতে শুরু করলেন। জারুদ (রা.) বললেন, ‘হে বৃদ্ধা, তোমার কী হয়েছে যে তুমি আমিরুল মুমিনিনকে বকছ?’

হজরত ওমর (রা.) জারুদ (রা.)-কে ধরে বললেন, ‘তুমি কি জানো তুমি কার সঙ্গে কথা বলছ? উনি সেই খওলা, যাঁর ডাক আল্লাহ তাআলা আরশের ওপর থেকে শুনেছেন।’

ইবনে কাসির (রা.)-এর তফসির থেকে জানা যায়। একদিন ওমর (রা.) প্রভাবশালী এক লোকের সঙ্গে কথা বলছিলেন। এমন সময় খওলা (রা.) এসে ওমর (রা.)-কে ডাকতে শুরু করলে তিনি দৌড়ে গেলেন। তিনি ততক্ষণ পর্যন্ত সেখানে দাঁড়িয়ে ছিলেন, যতক্ষণ না খওলা (রা.) কথা শেষ করেন।

অনুবাদ: সাজিদ আল মাহমুদ