আল্লাহ একটি জনপদে দুজন রাসুল পাঠালেন। রাসুল দুজন লোকজনকে দ্বীনের পথে আহ্বান জানান। তাওহিদ, রিসালাত ও আখেরাতের ব্যাপারে মানুষকে সতর্ক করেন। কিন্তু জনপদের লোকেরা রাসুলদের অস্বীকার করে। আল্লাহ রাসুলদের দাওয়াতকে শক্তিশালী করার জন্য আরেকজন রাসুল পাঠালেন। তিনজন রাসুল মিলে দাওয়াতের কার্যক্রম চালান।
জনপদের লোকজন তিনজনকেই অস্বীকার করে। তাদের যুক্তি ছিল, রাসুলেরা তো দেখতে মানুষেরই মতো। তাঁদের কেন রাসুল বলে মেনে নিতে হবে? নুহ (আ.) তাঁর সম্প্রদায়ের লোকদের দ্বীনের দাওয়াত দিলে সেখানকার নেতৃস্থানীয় লোকেরা কী বলেছিল তা কোরআনে আছে, ‘আমি তো নুহকে তার সম্প্রদায়ের কাছে পাঠিয়েছিলাম। সে বলেছিল, হে আমার সম্প্রদায়! আল্লাহর উপাসনা করো। তিনি ছাড়া তোমাদের অন্য কোনো উপাস্য নেই, তবু কি তোমরা সাবধান হবে না! তার সম্প্রদায়ের প্রধানগণ যারা অবিশ্বাস করেছিল তারা লোকদের বলল, এ তো তোমাদের মতোই একজন মানুষ, তোমাদের ওপর নেতৃত্ব করতে চাচ্ছে। আল্লাহ ইচ্ছা করলে ফেরেশতাই পাঠাতেন। আমাদের পূর্বপুরুষদের কালে এমন ঘটেছে, আমরা তো তা শুনিনি। এ তো এক পাগল, সুতরাং এর ব্যাপারে কিছুকাল অপেক্ষা করো।’ (সুরা মুমিনুন, আয়াত: ২৩–২৪)
নুহ (আ.)–এর পর হুদ (আ.) যখন তাঁর সম্প্রদায়ে দাওয়াত দেন, সেখানকার নেতারাও একই কথা বলেছিল। কোরআনে আছে, ‘তার সম্প্রদায়ের প্রধানেরা যারা অবিশ্বাস করেছিল ও পরলোকের সাক্ষাৎকারকে অস্বীকার করেছিল এবং যাদের আমি পার্থিব জীবনে প্রচুর ভোগসম্ভার দিয়েছিলাম, তারা বলেছিল, এ তো তোমাদেরই মতো একজন মানুষ; তোমরা যা খাও, সে তো তা-ই খায়, আর তোমরা যা পান কর সে-ও তা-ই পান করে। যদি তোমরা তোমাদেরই মতো একজন মানুষের আনুগত্য কর, তবে তো তোমাদের ক্ষতি হবে।’ (সুরা মুমিনুন, আয়াত: ৩৩-৩৪)
সামুদ জাতির কাছে যখন সালেহ (আ.) দাওয়াত নিয়ে যান, তখন তারাও তাঁকে একই কথা বলে প্রত্যাখ্যান করেছিল।
আইকা জাতির কাছে শুয়াইব (আ.) দাওয়াত নিয়ে গেলে তারা বলে, কোরআনে আছে, ‘তুমি আমাদেরই মতো একজন মানুষ। আমরা মনে করি, তুমি এক মিথ্যাবাদী।’ (সুরা শোআরা, আয়াত: ১৮৬)
তারা দাওয়াত গ্রহণ তো করলই না, বরং রাসুলদের পাথরের আঘাতে হত্যা করার হুমকি দিল। তারা জানিয়ে দিল, রাসুলেরা অমঙ্গল নিয়ে এসেছেন।
তিনজন রাসুলের দাওয়াত জনপদের লোকজন গ্রহণ না করলেও শহরের অদূরের এক লোকের কাছে যখন দ্বীনের দাওয়াত পৌঁছে, তিনি ইমান আনেন। ইমান এনেই ক্ষান্ত হননি, তিনি দৌড়াতে দৌড়াতে ছুটে আসেন জনপদে। জনপদের লোকজনদের বলেন, হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা রাসুলদের অনুসরণ করো।
কোরআনে আছে, ‘ওদের কাছে এক জনপদের অধিবাসীদের দৃষ্টান্ত উপস্থিত করো, যাদের কাছে রাসুল এসেছিল। আমি ওদের কাছে দুজন রাসুল পাঠিয়েছিলাম, কিন্তু ওরা তাদেরকে মিথ্যাবাদী বলল। তখন আমি তাদেরকে তৃতীয় একজন দিয়ে শক্তিশালী করেছিলাম। আর তারা বলেছিল, আমরা তো তোমাদের কাছে প্রেরিত হয়েছি। ওরা বলল, তোমরা তো আমাদেরই মতো মানুষ। করুণাময় আল্লাহ কিছুই অবতীর্ণ করেননি। তোমরা কেবলই মিথ্যা বলছ।
তারা বলল, আমাদের প্রতিপালকের শপথ, আমরা অবশ্যই তোমাদের কাছে প্রেরিত হয়েছি, স্পষ্টভাবে প্রচার করাই আমাদের দায়িত্ব। ওরা বলল, আমরা তোমাদেরকে অমঙ্গলের কারণ মনে করি। যদি তোমরা বিরত না হও, তোমাদের অবশ্যই আমরা পাথর মেরে হত্যা করব ও নিদারুণ শাস্তি দেব। তারা বলল, একি এ জন্য যে আমরা তোমাদেরকে উপদেশ দিচ্ছি? তোমাদের অমঙ্গল তোমাদেরই, আসলে তোমরা এক সীমালঙ্ঘনকারী সম্প্রদায়। শহরের এক প্রান্ত থেকে একজন ছুটে এসে বলল, হে আমার সম্প্রদায়! রাসুলের অনুসরণ করো, অনুসরণ করো তাদের যারা তোমাদের কাছে কোনো প্রতিদান চায় না, আর যারা সৎ পথ পেয়েছে। যিনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন ও যাঁর কাছে তোমরা ফিরে যাবে, আমি তাঁর উপাসনা করব না কেন? আমি কি তাঁর পরিবর্তে অন্য উপাস্য গ্রহণ করব? করুণাময় আল্লাহ আমাকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে চাইলে ওদের সুপারিশ আমার কোনো কাজে আসবে না; আর ওরা আমাকে উদ্ধার করতেও পারবে না। এমন করলে আমি অবশ্যই স্পষ্ট বিভ্রান্তিতে পড়ব। আমি তোমাদের প্রতিপালকের ওপর বিশ্বাস রাখি, তাই তোমরা আমার কথা শোনো। (শহীদ হওয়ার পরে) তাকে বলা হলো, জান্নাতে প্রবেশ করো। সে বলে উঠল, হায়, আমার সম্প্রদায় যদি জানতে পারত, কী কারণে আমার প্রতিপালক আমাকে ক্ষমা করেছেন ও সম্মানিত করেছেন! আমি তার (মৃত্যুর) পর তার সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে আকাশ থেকে কোনো বাহিনী প্রেরণ করিনি, আর তার প্রয়োজনও ছিল না। কেবল এক মহাগর্জন হলো। ফলে ওরা নিষ্প্রাণ, নিস্তব্ধ হয়ে গেল। আমার দাসদের জন্য দুঃখ হয়, ওদের কাছে যখনই কোনো রাসুল এসেছে, তখনই ওরা তাকে ঠাট্টা–বিদ্রূপ করেছে। ওরা কি লক্ষ করে না, ওদের পূর্বে কত মানবগোষ্ঠীকে আমি ধ্বংস করেছি, যারা আর ওদের মধ্যে ফিরে আসবে না? আর ওদের সবাইকে তো আমার কাছে একত্র করা হবে।’ (সুরা ইয়াসিন, আয়াত: ১৩-৩২)