আল্লাহ তাআলা যখন সুরা হুজরাত নাজিল করেন, তখন সাহাবিরা খুব ভয়ে ছিলেন। এই সুরাকে বলা হয় আদব শেখানোর সুরা। নবী করিম (সা.)-এর সঙ্গে কীভাবে আচরণ করা উচিত, তাঁর সামনে কীভাবে কথা বলা উচিত, অনুমতি না নিয়ে তাঁর ঘরে প্রবেশ থেকে বিরত থাকা উচিত ইত্যাদি বিষয়গুলো এই সুরায় স্থান পেয়েছে।
সুরা হুজরাত-এর দ্বিতীয় আয়াত, ‘হে ইমানদারগণ, তোমরা নবীর আওয়াজের ওপর তোমাদের আওয়াজ উঁচু কোরো না এবং তোমরা নিজেরা পরস্পর যেমন উচ্চ স্বরে কথা বলো, তাঁর সঙ্গে সেভাবে কথা বোলো না। এর ফলে তোমাদের সব আমল নিষ্ফল হয়ে যাবে অথচ তোমরা উপলব্ধিও করতে পারবে না।’ এই আয়াতে আল্লাহ তাআলা সাহাবিদের উপদেশ দিয়েছেন, নবীর সামনে উঁচু গলায় কথা না বলতে।
হাদিস থেকে জানা যায়, আবু বকর (রা.) এবং ওমর (রা.) দুজনই উঁচু গলায় কথা বলতেন। এই আয়াত নাজিলের পর হজরত ওমর (রা.) মহানবীর সামনে এত নিচু গলায় কথা বলতেন যে নবী (সা.) তাঁর কথা বুঝতেই পারতেন না। তিনি আবার জিজ্ঞাসা করতেন, ‘কী বলছ ওমর, আবার বলো।’
তবে এই আয়াতে কারণে সবচেয়ে বেশি আতঙ্কিত হয়েছিলেন আরেকজন সাহাবি। তিনি হলেন সাবিত ইবনে কায়েস (রা.)। সাবিত (রা.)–কে বলা হতো ‘খতিবুল আনসার’ বা ‘আনসারদের বক্তা’। তিনি মদিনার আনসারদের প্রতিনিধিত্ব করতেন। সংগত কারণেই তাঁর গলার স্বর ছিল বেশ উঁচু। এমনকি যুদ্ধের সময়ও তিনি আনসারদের উঁচু আওয়াজে পরিচালনা করতেন।
সুরা হুজরাতের আয়াত নাজিল হওয়ার পর সাবিত (রা.) যেন অদৃশ্য হয়ে গেলেন। তাঁকে খুঁজেই পাওয়া যাচ্ছিল না। মহানবী (সা.) বিষয়টা লক্ষ করলেন। তিনি সাদ ইবনে মুয়াজ (রা.)–কে জিজ্ঞেস করলেন, ‘তুমি কি সাবিতকে দেখেছ। আমি বেশ কিছুদিন ধরে তাকে দেখছি না। সে কি অসুস্থ?’
হজরত সাদ ইবনে মুয়াজ রাও বলেন, ‘এমন তো হওয়ার কথা না। আমি তো তাঁর বাড়ির পাশেই থাকি। সে অসুস্থ হলে আমার জানার কথা। আমি খোঁজ নিয়ে জানাচ্ছি, হে নবী।’
এরপর সাদ (রা.) সাবিত ইবনে কায়েস (রা.)-এর ঘরে প্রবেশ করলেন। তিনি দেখলেন তাঁর চোখ রক্তবর্ণ হয়ে আছে। তিনি প্রচুর কান্না করেছেন।
সাদ (রা.) জিজ্ঞাসা করলেন, ‘কী হয়েছে, সাবিত? তুমি কাঁদছ কেন?’
সাবিত (রা.) বলেন, ‘আমি নিশ্চিত জাহান্নামে যাচ্ছি। তোমরা তো জানো মহানবীর সামনে সবচেয়ে উঁচু গলায় কথা বলা ব্যক্তিটি হচ্ছে আমি। আমার চেয়ে উঁচু গলায় আর কেউ কথা বলে না। আর আল্লাহ তাআলা আয়াতটি আমার উদ্দেশ্যেই নাজিল করেছেন। আমার আর বোধ হয় বাঁচার কোনো সম্ভাবনা নেই।’
হজরত সাদ ইবনে মুয়াজ (রা.) মহানবী (সা.)-এর কাছে গিয়ে সব খুলে বললেন। মহানবী (সা.) বললেন, ‘সে জাহান্নামি নয়, বরং সেই আসলে জান্নাতি।’
সাবিত (রা.) এই কথা শুনে এত খুশি হয়েছিলেন যে তিনি জোরে জোরে আল্লাহু আকবার (আল্লাহ মহান) বলে তকবির দিতে লাগলেন।
মহানবী (সা.) অন্য এক হাদিসে বলেছিলেন, ‘মানুষ সারা জীবন এমন কাজ করে, যা তাঁকে জাহান্নামে নেওয়ার জন্য যথেষ্ট। কিন্তু হঠাৎ সে এমন কিছু করে ফেলে, যা তাকে জাহান্নাম থেকে নিশ্চিত জান্নাতের দিকে নিয়ে যায়।’
সাবিত (রা.) ছিলেন এমনই একজন। তিনি তাঁর ভুল থেকে শিক্ষা নিয়েছিলেন। ভুলকে গুরুত্ব দিয়েছিলেন। আর আল্লাহ তাআলা তাঁদেরই পছন্দ করেন, যাঁরা ভুল করার পর বারবার ভালোর দিকে ফিরে আসেন।