মানুষকে তার জীবনের লক্ষ্য অনুধাবন করে সফল হওয়ার জন্য আল্লাহ তাআলা যে বিধান দিয়েছেন, তার নাম ইসলাম। ইসলামি বিধিবিধান শরিয়াহ নামে পরিচিত। শরিয়াহ অর্থ পথ বা পন্থা। যে পথে চললে মানুষ দুনিয়াতে শান্তি ও পরকালে মুক্তি লাভ করতে পারবে, তার নাম শরিয়াহ। শরিয়তের বিধিবিধানের দর্শন বা অন্তর্নিহিত পাঁচটি লক্ষ্যকে পরিভাষায় মাকাসিদুশ শরিয়াহ বলা হয়। যথা জীবনের সুরক্ষা, সম্পদ বা জীবিকা তথা জীবনোপকরণের সুরক্ষা, জ্ঞানের সুরক্ষা, বংশধারার পবিত্রতা বা প্রজন্ম সুরক্ষা, ধর্ম-কর্ম বিশ্বাসের সুরক্ষা।
মহান আল্লাহ ভালোবেসে কুল কায়েনাত সৃজন করেছেন। মানুষ সৃষ্টি করেছেন তাঁর ইবাদতের জন্য। মানুষকে দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন খিলাফতের দায়িত্ব দিয়ে। যাঁরা এই দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করবেন, তাঁদের সম্মানিত করা হবে বেলায়াত বা বন্ধুত্বের মর্যাদায়।
মানুষ ‘আবদুল্লাহ’ তথা আল্লাহর বান্দা, দাস বা গোলাম; যে আল্লাহর বিধান বাস্তবায়ন করবেন। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘জিন ও ইনসানকে আমি আমার ইবাদতের জন্যই সৃষ্টি করেছি।’ (সুরা-৫১ জারিয়াত, আয়াত: ৫৬)। ‘নিশ্চয়ই আমি দুনিয়াতে খলিফা বা প্রতিনিধি পাঠাচ্ছি।’ (সুরা-২ বাকারা, আয়াত: ৩০) ‘আল্লাহ তাদের বন্ধুরূপে বরণ করেন, যারা প্রকৃত বিশ্বাসী। তিনি তাদিগকে অন্ধকার হতে আলোয় নিয়ে আসেন। আর যারা অকৃতজ্ঞ, অবিশ্বাসী, তাদের বন্ধু ও অভিভাবক হলো তাগুত। ওরা তাদেরকে আলো থেকে অন্ধকারে নিয়ে যায়। তারাই নরকবাসী, তারা সেথায় চিরকাল থাকবে।’ (সুরা-২ বাকারা, আয়াত: ২৫৭)
‘আর আমি আদমসন্তানকে সম্মানিত করেছি। তাদেরকে জলে-স্থলে চলাচলের বাহন দিয়েছি, উত্তম রিজিক দান করেছি এবং আমি তাদেরকে বহু সৃষ্টির ওপর শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছি।’ (সুরা-১৭ ইসরা-বনি ইসরাইল, আয়াত: ৭০)
আল্লাহ কোরআন মজিদে তাঁর প্রিয় বান্দাদের পরিচয় উল্লেখ করে বলেন, ‘দয়াময় আল্লাহর প্রকৃত বান্দা তারাই, যারা পৃথিবীতে নম্রভাবে চলাফেরা করে এবং তাদের যখন অজ্ঞ লোকে মূর্খতাসুলভ সম্বোধন করে, তখনো তারা বলে: সালাম। ...আল্লাহ যার হত্যা নিষেধ করেছেন, যথার্থ কারণ ছাড়া তাকে হত্যা করে না এবং ব্যভিচার করে না, যারা এগুলো করে, তারা শাস্তি ভোগ করবে। ...তবে তারা নয়, যারা তওবা করে ইমান আনে ও সৎকর্ম করে। আল্লাহ এদের পাপ পুণ্যের দ্বারা পরিবর্তন করে দেবেন; আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। ...আর যারা মিথ্যা সাক্ষ্য দেয় না এবং অসার ক্রিয়াকলাপের সম্মুখীন হলে স্বীয় মর্যাদার সহিত তা উপেক্ষা করে চলে। আর যারা তাদের প্রতিপালকের নিদর্শন স্মরণ করিয়ে দিলে তার প্রতি অন্ধ ও বধিরের মতো আচরণ করে না এবং যারা প্রার্থনা করে, হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের জন্য এমন স্ত্রী ও সন্তানসন্ততি দান করুন, যারা আমাদের জন্য নয়নপ্রীতিকর হবে এবং আমাদিগকে মুত্তাকিদের জন্য অনুসরণযোগ্য করিয়ে দিন।’ এদেরকে প্রতিদান হিসেবে দেওয়া হবে জান্নাতের সুউচ্চ কক্ষসমূহ, যেহেতু তারা ছিল ধৈর্যশীল। তাদেরকে সেখানে অভ্যর্থনা জানানো হবে অভিবাদন ও সালাম সম্ভাষণসহকারে। (সুরা-২৫ ফুরকান, আয়াত: ৬৩-৭৫)
শ্রেষ্ঠ মানুষের আচরণ কেমন হবে, এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘মুহাম্মদ (সা.) আল্লাহর রাসুল এবং তাঁর সাথে যারা আছে, তারা অবিশ্বাসী কাফিরদের প্রতি কঠোর এবং তাদের নিজেদের মধ্যে সহানুভূতিশীল, দয়ার্দ্র। তাদের তুমি দেখবে আল্লাহর অনুগ্রহ ও সন্তুষ্টি কামনায় রুকু ও সিজদায় অবনত। তাদের চেহারায় সিজদার প্রভা প্রস্ফুটিত।’ (সুরা-৪৮ ফাতহ, আয়াত: ২৯)।
● মুফতি মাওলানা শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী
যুগ্ম মহাসচিব, বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতি; সহকারী অধ্যাপক, আহ্ছানিয়া ইনস্টিটিউট অব সুফিজম
smusmangonee@gmail.com