আজ খতমে তারাবিহতে পবিত্র কোরআনের সুরা কাহাফের ৭৫ নম্বর আয়াত থেকে সুরা মারইয়াম ও সুরা তোয়াহা তিলাওয়াত করা হবে। ১৬তম পারা পড়া হবে। আজকে আল্লাহর সাক্ষাৎ, তাঁর সঙ্গে শরিক করা, তাঁর অস্তিত্ব, মুসা (আ.) ও খিজির (আ.)-এর ঘটনা, জুলকারনাইনের ঘটনা, ইয়াজুজ-মাজুজের ফিতনা, মরিয়ম ও ঈসা (আ.)-এর বর্ণনা, পুনরুত্থান, হিসাব-নিকাশ, তওবা, বুড়ো বয়সে জাকারিয়া (আ.)-এর সন্তান লাভ, ইবরাহিম (আ.)-এর একত্ববাদের ঘোষণা ও তাঁর বাবার অস্বীকার, মুমিনের প্রতি আল্লাহর ভালোবাসা, মহানবী (সা.)–কে সান্ত্বনা ও অবিশ্বাসীদের শাস্তি ইত্যাদি বিষয়ের বর্ণনা রয়েছে।
মুসা (আ.) ও খিজির (আ.)
আল্লাহ মুসা (আ.)-কে জানালেন, দুই নদীর মোহনায় তাঁর চেয়ে জ্ঞানী এক ব্যক্তি আছেন। মুসা ওই ব্যক্তির সন্ধানে বেরিয়ে পড়লেন। সমুদ্রের কাছে গিয়ে খিজির (আ.)-কে পেলেন। তাঁর সঙ্গে সময় কাটানোর অনুমতি চাইলেন। খিজির (আ.) মুসাকে শর্ত দিলেন। একাধিক শর্ত মানার অঙ্গীকারে তাঁরা পথ চললেন।
তাঁদের সফরে তিনটি ঘটনা প্রকাশ পেল। ১. খিজির (আ.) একটি নৌকা ছিদ্র করে ফেলেন, যার মালিক তাঁদের বিনা ভাড়ায় নদী পার করেছিল। ২. তিনি একটি নিষ্পাপ শিশুকে হত্যা করেন। ৩. তিনি এক সম্প্রদায়ের পতনোন্মুখ একটি দেয়াল মেরামত করে দেন। অথচ সে সম্প্রদায়ের লোকেরা তাদের খাবার খাওয়াতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিল।
মুসা (আ.) তিনটি ঘটনায় প্রশ্ন করেছিলেন। আপত্তি জানিয়েছিলেন। শেষে খিজির (আ.) একসঙ্গে পথচলার বিষয়টি নাকচ করে দেন। তবে তিনি তিনটি ঘটনার ব্যাখ্যা দিয়েছেন।
প্রথম ঘটনার ব্যাখ্যা: ওই অঞ্চলে ছিল এক অত্যাচারী বাদশাহ। সে বল প্রয়োগ করে মানুষের নৌকা ছিনিয়ে নিত। তবে ছিদ্র করা নৌকা নিত না। নৌকাটি ছিল কয়েকজন গরিব-মিসকিনের। তারা এটা দিয়ে জীবিকা অন্বেষণ করত। নৌকাটি ছিদ্র করে দেওয়ার ফলে বাদশাহর ছিনিয়ে নেওয়া থেকে রেহাই পেল।
দ্বিতীয় ঘটনার ব্যাখ্যা: শিশুটি বড় হয়ে অবিশ্বাসী হবে; যা তার মা-বাবার জন্য আজাবের কারণ হয়ে দাঁড়াবে। তার মা-বাবা ছিল বিশ্বাসী মানুষ।
তৃতীয় ঘটনার ব্যাখ্যা: দেয়ালটি ছিল দুজন এতিমের। তাদের মা-বাবা বিশ্বাসী নেক মানুষ ছিলেন। প্রাচীরের নিচে তাদের নেককার বাবার রক্ষিত গুপ্তধন ছিল। সুরা কাহাফের ৬০ থেকে ৮২ নম্বর আয়াতে মুসা (আ.) ও খিজির (আ.)-এর এসব ঘটনার বিবরণ রয়েছে।
বাদশাহ জুলকারনাইন ও ইয়াজুজ-মাজুজের কাহিনি
মুসা ও খিজির (আ.)-এর ঘটনার পর এই সুরার ৮৩ থেকে ১০১ নম্বর আয়াতে জুলকারনাইন ও ইয়াজুজ-মাজুজের ঘটনার আলাপ আছে। কোরআনে তাঁকে জুলকারনাইন বলা হয়েছে। তাঁর প্রকৃত নাম সিকান্দার। তিনি একজন ন্যায়পরায়ণ, সৎ ও আল্লাহ বিশ্বাসী বাদশাহ ছিলেন। তিনি পুরো পৃথিবী শাসন করেছেন। সফর করেছেন পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্ত। সফরকালে নির্যাতিত, বঞ্চিত, শাসকের হাতে শোষিত লোকদের সাহায্য করেছেন। মানুষের কল্যাণে কাজ করেছেন।
সফরকালে একবার দুই পাহাড়ের মাঝে এমন এক জনগোষ্ঠীকে খুঁজে পেলেন, যারা ইয়াজুজ-মাজুজ জনগোষ্ঠীর আক্রমণের কবলে পড়তে যাচ্ছিল। ওই জাতি তাঁর কাছে সাহায্য চাইল। তিনি একটি শক্তিশালী প্রাচীর নির্মাণ করে দেন। ফলে বেঁচে যায় তারা।
‘আল্লাহকে যে পাইতে চায়’
এ সুরার ১১০ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তাআলা তাঁকে পাওয়ার জন্য তিনটি আবশ্যকীয় আমলের কথা বলেছেন। ১. নেক আমল করা। ২. আল্লাহর প্রতি অবিচল বিশ্বাস। ৩. ইবাদতে তাঁর সঙ্গে কাউকে শরিক না করা।
নারীর নামে সুরার নাম
৯৮ আয়াতবিশিষ্ট সুরা মারইয়াম মক্কায় অবতীর্ণ। এটি কোরআনের ১৯তম সুরা। এ সুরার একটি অংশজুড়ে মরিয়ম (আ.)-এর আলোচনা রয়েছে, তাই এর নাম রাখা হয়েছে সুরা মারইয়াম। জাকারিয়া (আ.), ইসা (আ.), ইবরাহিম (আ.), মুসা (আ.), হারুন (আ.) ইসমাইল (আ.) ও ইদরিস (আ.)-এর আলোচনা রয়েছে এ সুরায়।
হজরত মরিয়ম (আ.)-এর মৃত্যু কামনা
হজরত মরিয়ম (আ.) তখন মসজিদুল আকসায়। জিবরাইল (আ.) মানুষের বেশে এলেন। মরিয়ম (আ.) ভয় পেয়ে বসেন। জিবরাইল পরিচয় দিলেন। সন্তান হওয়ার সুসংবাদ দিয়ে তাঁকে ফুঁ দিলেন। আল্লাহর কুদরতের নিদর্শন হিসেবে মরিয়ম (আ.) গর্ভবতী হলেন। প্রসবের সময় ঘনিয়ে এলে তিনি মসজিদ ছাড়লেন। স্বামী ছাড়া সন্তান হবে; এটা তিনি নিতে পারছিলেন না। ফলে মরে যেতে চাইলেন। মানুষের স্মৃতি থেকে মুছে যেতে চাইলেন। যেখানে জিবরাইল (আ.) তাঁকে বলেছেন, ‘এই সন্তান আল্লাহর পক্ষ থেকে, তিনি এই সন্তানের মাধ্যমে মানবজাতির জন্য নিদর্শন ও রহমত বানাবেন।’
সন্তান কোলে একদিন তিনি নিজ গ্রামে ফেরেন। মানুষজন তাঁকে অপবাদ দিল। নানান কথা বলল। তিনি কোলের শিশুকে দেখিয়ে দেন। শিশু মায়ের সৎ চরিত্রের সাক্ষ্য দেন। সুরা মরিয়মে ১৬ থেকে ৪০ নম্বর আয়াতে এ ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনা আছে।
বাবা-ছেলের কাহিনি
এই সুরার ৪১ থেকে ৫০ নম্বর আয়াতে ইবরাহিম (আ.) ও তাঁর বাবার কাহিনি আলোচনা হয়েছে। তাঁর বাবা ছিল অবিশ্বাসী। তিনি তাকে একাত্ববাদের দাওয়াত দেন। কিন্তু বাবা তাঁর কথা শোনেনি। ইবরাহিম একদিন ইমান বাঁচাতে দেশ ছেড়ে চলে যান। পরে তাঁর বংশেই মুহাম্মাদ (সা.)-সহ অনেক নবীর জন্ম হয়।
সুরা তহায় মুসা (আ.)-এর জীবনের গল্প
কোরআনের ২০তম সুরা তহা মক্কায় অবতীর্ণ। এর আয়াতসংখ্যা ১৩৫। এ সুরার শিশু মুসাকে আল্লাহর আদশে বাক্সে ভরে নদীতে ভাসিয়ে দেওয়া, শত্রুর ঘরে মায়ের কোলে লালন-পালন, নবুওয়াত অর্জন, আল্লাহর সঙ্গে সরাসরি কথোপকথন, ফেরাউনকে দ্বীনের দাওয়াত, জাদুকরদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় মুসার বিজয়, জাদুকরদের ইসলাম গ্রহণ, বনি ইসরাইলকে নিয়ে মিসর ত্যাগ, ফেরাউনের ধাওয়া ও নদীতে ডুবে ফেরাউনসহ পুরো বাহিনীর মৃত্যু, বনি ইসরায়েলের অকৃজ্ঞতা, গো-বাছুরের পূজা ও তুর পাহাড়ে ধ্যানে গিয়ে মুসা (আ.)-এর তওরাত লাভ, কেয়ামতের ভয়াবহ চিত্র, অবিশ্বাসীদের শাস্তির বিবরণ, আদম ও ইবলিসের কাহিনি এবং দাওয়াতের কাজে অবিচল থাকা ইত্যাদির বর্ণনা রয়েছে।
আবু আশফাক মুহাম্মাদ: আলেম ও লেখক