কাজাখস্তানে ৭০ শতাংশ মুসলমান। কাজাখদের ইফতার, সাহ্রি, তারাবিহ আর ঐতিহ্যের মিশেলে রমজান মাস হয়ে উঠে উৎসব–আনন্দের মাস। দোকানিরা রমজানকে স্বাগত জানান। নামাজি মুসল্লিরাও মসজিদ ও নামাজের স্থানগুলো ধোয়ামোছায় রোজার প্রাথমিক প্রস্তুতি সমাপ্ত করেন। বিশেষ করে ছোট বাচ্চারা রাস্তায় নেমে রমজানকে স্বাগত জানিয়ে নানান আরবি গান গাইতে থাকে। সর্বত্র একটি ধর্মীয় আবেগ ইমেজ তৈরি হয়।
কাজাখদের ঐতিহ্যবাহী রীতি হলো, রমজানে সব আত্মীয়স্বজনকে দাওয়াত করা ও উপহার পাঠানো। যেসব আত্মীয়স্বজনের ভেতরে কোনো বিরোধ থাকে, রমজান আসার আগেই সে বিরোধ মিটিয়ে ফেলা হয়।
কাজাখদের প্রধান ইফতারি হলো কুমিস আর শুবাত। কুমিস তৈরি হয় ঘোড়ার দুধ দিয়ে, শুবাত উটের দুধে। এর সঙ্গে ফলমূল আর শরবত। শীতপ্রধান দেশ হওয়ায় ইফতারে শরবতের পরিবর্তে চায়ের চাহিদাও থাকে।
কাজাখদের রন্ধনশৈলী পৃথিবীজুড়ে বিখ্যাত। বাহারি রন্ধনের জন্য পর্যটকদের প্রথম পছন্দ কাজাখস্তান। উট, ভেড়া ও ঘোড়ার গোশতে প্রস্তুত হয় করা নানান ধরনের খাদ্য। উট আর ভেড়ার দুধ থেকে তৈরি করা হয় নানা ধরনের মুখরোচক ইফতারি।
কাজাখস্তানে প্রায় দুই হাজার বড় মসজিদ আছে। সব মসজিদেই রোজাদারদের জন্য উন্মুক্ত মেহমানদারির ব্যবস্থা থাকে। এই মেহমানদারির নাম মাতাইমুর রহমাহ, অর্থাৎ আল্লাহর রেস্তোরাঁ। মাতাইমুর রহমাহ পরিচালনার জন্য উন্মুক্ত দানের ব্যবস্থা আছে।
খতমে তারাবিহতে কাজাখদের আগ্রহ বেশি। সহজে কেউ খতমে তারাবিহ ছাড়তে চান না এবং মসজিদ ছাড়া কেউ একাকী তারাবিহ পড়েন না।
কাজাখস্তানের শহরের মসজিদগুলোয় একটি অপূর্ব দৃশ্য দেখা যায়। এটি কাজাখদের ঐতিহ্যের অংশ। তারাবিহর পর চালক বা গাড়ির মালিক গাড়ি নিয়ে মুসল্লিদের অপেক্ষা করেন। এরপর তাঁদের বাড়ি পৌঁছে দেন। কোনো ভাড়া নেন না। গাড়ির মালিক রমজানে অতিরিক্ত নেকি ও ফজিলত অর্জন করতে চান।
রমজানের কোরআন তিলাওয়াতেও কাজাখদের আগ্রহ। এভাবে সুন্দর সব ইবাদত আর কাজের মধ্য দিয়ে কাজাখরা রমজানকে বিদায় জানান।