কোরআনকে ভালোবাসার ঘটনা

আমি কোরআনকে ভালোবাসি। কথাটি অনেকের মুখে শোনালেও জীবনে প্রয়োগ করার বেলায় কোরআনকে অনেকেই ভুলে যাই। আজকের গল্পটি এমন একজনকে নিয়ে, যিনি সত্যি সত্যিই কোরআনকে ভালোবেসেছিলেন।

ঘটনাটি বর্ণনা করেছেন হজরত আনাস ইবনে মালিক (রা.)। তিনি বলেন, ‘মদিনার আনসারদের মধ্যে একজন লোক ছিল যে মসজিদে কুবাতে ইমামের দায়িত্ব পালন করত। আনসাররা তাঁর পেছনে নামাজ পড়তেন। আমিও ছিলাম তাঁদের মধ্যে একজন।’

মসজিদে কুবা ছিল ইসলামের প্রথম সারির মসজিদ। হাজিরা মদিনায় গিয়ে অনেকেই এখানে নামাজ আদায় করতে আসেন। এই মসজিদে নামাজ পড়া সুন্নত। আল্লাহ তাআলা কোরআনে এই মসজিদের কথা উল্লেখ করে বলেন, এটি তাকওয়ার ওপর তৈরি হয়েছে।

আনাস (রা.) বলেন, ‘কুবা মসজিদের একজন বিশেষ ইমাম ছিলেন, যিনি প্রতি রাকাতে সুরা ইখলাস পাঠ করতেন। সুরা ফাতিহার পর তিনি প্রথমে সুরা ইখলাস পাঠ করে এরপর অন্য সুরাতে যেতেন।’

সাহাবিরা মিলে তাঁকে একদিন এই বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘আচ্ছা, তুমি প্রতি রাকাতে সুরা ইখলাস তিলাওয়াত করছ কেন? যেকোনো সুরা দিয়েই তো নামাজ পড়া যায়। হয় প্রতি রাকাতে শুধু এখলাস পড়ো না হলে অন্য সুরা পড়ো।’

সাহাবিদের প্রশ্নের জবাবে ইমাম বললেন, ‘দেখ, আমার কিরাত (কোরআন পাঠ) যদি তোমাদের ভালো না লাগে তাহলে অন্য কাউকে ইমাম নিযুক্ত করো। আমি এভাবেই নামাজ পড়াই।’

আনাস (রা.) বলেন, ‘তাঁকে ইমামের পদ থেকে বাদ দেওয়ার কোনো উপায় ছিল না, এই কাজে তিনিই ছিলেন সেরা। সাহাবিরা তাঁকে বাদ দিতে চাচ্ছিলেন না।’

শেষ পর্যন্ত ঘটনাটি মহানবী (সা.)-এর কানে পৌঁছাল। তিনি সেই ইমামকে ডেকে পাঠালেন। মহানবী (সা.) তাঁকে বললেন, ‘সাহাবিরা যা বলছে তা করা থেকে কিসে তোমাকে বাধা দিল।’

ইমাম খুবই সুন্দর একটি উত্তর দিলেন। তিনি বললেন, ‘দেখুন, আমি এই সুরাকে ভালোবাসি।’ এতটুকু বলেই থেমে গেলেন, আর কিছু বললেন না।

মহানবী (সা.) তাঁর দিকে তাকিয়ে বুঝলেন, সে সত্যি কথাই বলছে। এরপর মহানবী (সা.) বললেন, ‘এই সুরার প্রতি ভালোবাসাই তোমাকে একদিন জান্নাতে নিয়ে যাবে।’ অর্থাৎ মহানবী (সা.) তাঁর এই কাজকে সমর্থন দিলেন। সাহাবিরা মহানবীর সিদ্ধান্তে খুশি হয়ে ফিরে গেলেন।

এখন প্রশ্ন হলো, আমাদেরও কী তাহলে সুরা ফাতিহার সঙ্গে সুরা এখলাস পড়া উচিত? আসলে মহানবী (সা.)-এর সুন্নাহ বা আদর্শ কয়েকটি উপায়ে আসে। প্রথমত, তাঁর মুখনিঃসৃত বাণী এবং তাঁর কাজ হলো সুন্নাহ। এ ছাড়া কিছু কাজ মহানবী (সা.) নিজে করেননি, তবে সাহাবিদের করতে দেখে উৎসাহিত করেছেন। এগুলোও সুন্নাহ হিসেবে বিবেচিত।

এ ছাড়া কিছু কাজ মহানবী (সা.) সাহাবিদের করতে দেখেছেন, কিন্তু উৎসাহিত করেননি। জ্ঞানীদের অভিমত, ইমামের কাজটি এই শ্রেণিতে পড়ে। অর্থাৎ প্রতি রাকাতে সুরা ইখলাস পাঠ করলেও নামাজ হয়ে যাবে, তবে কাজটি তিনি আবশ্যক করেননি।

অনুবাদ: সাজিদ আল মাহমুদ