আল্লাহ কোরআনকে বরকতময় করে নাজিল করেছেন। এর প্রতিটি হরফেই সওয়াব। তাই সমগ্র কোরআন ফজিলতপূর্ণ। তবে কিছু কিছু সুরা রয়েছে, যা অন্যদের থেকে আলাদা মর্যাদা রাখে। এমন কিছু আয়াত রয়েছে, যেগুলোর ফজিলত নিয়ে স্বতন্ত্র বহু হাদিসও আছে।
সে রকমই কিছু সুরা ও আয়াতের ফজিলত জেনে নেওয়া যাক।
সব রোগের ওষুধ
আবু সাঈদ খুদরী (রা.) বলেছেন, একবার আমরা সফরে যাচ্ছি। পথে এক স্থানে এক বালিকা এসে বলল, ‘এখানকার গোত্রের সরদারকে সাপে কেটেছে। আমাদের পুরুষেরা বাড়িতে নেই। আপনাদের মধ্যে এমন কেউ কি আছেন যিনি ঝাড়-ফুঁক করতে পারেন?’
আমাদের মধ্য থেকে একজন ওই বালিকার সঙ্গে গেল। আমরা জানতাম না, সে ঝাড়-ফুঁক জানে। ওখানে গিয়ে সে ঝাড়-ফুঁক করলে গোত্রপতি সুস্থ হয়ে উঠল। এতে সর্দার খুশি হয়ে তাকে তিরিশটি বকরি দান করলেন এবং আমাদের সবাইকে দুধ খাওয়ালেন।
ফিরে আসার পথে আমরা জিজ্ঞেস করলাম, তুমি ভালোভাবে ঝাড়-ফুঁক করতে জানো? সে বলল, না তো, আমি কেবল সুরা ফাতিহা-দিয়েই ঝাড়-ফুঁক করেছি।’
আমরা তখন বললাম, ‘নবীজি (সা.)-এর কাছে পৌঁছে তাঁকে জিজ্ঞেস না করা পর্যন্ত কেউ কিছু বলবে না।’
এরপর আমরা মদিনায় পৌঁছে নবীজি (সা.)-এর কাছে ঘটনাটি বললাম। তিনি বললেন, ‘সে কেমন করে জানল যে সুরা ফাতিহা আরোগ্যের জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে? তোমরা নিজেদের মধ্যে এগুলো বণ্টন করে নাও এবং আমার জন্যও এক ভাগ রেখো।’ (বুখারি, হাদিস: ৫০০৭, মুসলিম, হাদিস: ২২০১)
নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের ঘরগুলো কবরের মতো করে রেখো না। নফল নামাজগুলো বাড়িতে করবে। কারণ, যে ঘরে সুরা বাকারা পাঠ করা হয় শয়তান সে ঘর থেকে পালিয়ে যায়।’ (সহিহ্ মুসলিম, পৃ. ১৭০৯)
নবীজি (সা.) আরও বলেন, ‘কেউ যদি রাতে সুরা বাকারার শেষ দুটি আয়াত পাঠ করে, সেটাই তার জন্য যথেষ্ট।’ (বুখারি: ৫০০৯)
নাওয়াস ইবনু সামআন (রা.) বলেছেন, ‘আমি নবী (সা.)-কে বলতে শুনেছি যে কিয়ামতের দিন কোরআন ও কোরআন অনুযায়ী যারা আমল করত তাদের আনা হবে। সুরা বাকারা এবং সুরা আল ইমরান অগ্রভাগে থাকবে। রাসুলুল্লাহ (সা.)সুরা দুটি সম্পর্কে তিনটি উদাহরণ দিয়েছিলেন। এ সুরা দুটি দুখণ্ড ছায়াদানকারী মেঘের আকারে অথবা দুটি কালো চাদরের মত ছায়াদানকারী হিসেবে আসবে, যার মাঝখানে আলোর ঝলকানি অথবা সারিবদ্ধ একঝাঁক পাখির আকার আসবে এবং এর পাঠকারীদের পক্ষ নিয়ে যুক্তি দিতে থাকবে।’ (মুসলিম, হাদিস: ১৭৬১)
নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘সুরা হুদ, ওয়াকিয়া, মুরসালাত, নাবা এবং সুরা তাকভীর আমাকে বৃদ্ধ বানিয়ে দিয়েছে।’ (তিরমিজি: ৩২৯৭)
আয়েশা (রা.) বলেন, ‘নবীজি (সা.) সুরা জুমার এবং সুরা বনী ইসরায়েল না পড়ে ঘুমাতেন না।’ (তিরমিজি)
নবীজি (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি সুরা কাহাফের প্রথম দশ আয়াত (আরেক বর্ণনা অনুযায়ী শেষ দশ আয়াত) মুখস্থ করবে, তাকে দাজ্জালের ফিতনা থেকে রক্ষা করা হবে।’ তিনি আরও বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি জুমার দিন সুরা কাহাফ পড়বে, তার জন্য পরবর্তী জুমা পর্যন্ত নুর চমকাবে।’
নবীজি(সা.) বলেন, ‘কোরআনে ৩০ আয়াতের একটি সুরা রয়েছে। এটি ব্যক্তির জন্য সুপারিশ করবে। তখন তাকে মাফ করে দেওয়া হবে। সেই সুরাটি হলো সুরা মুল্ক।’ (তিরমিজি)
যে সুরা ওয়াকিয়া পাঠ করে এবং শেখায়, তার নাম গাফেলদের তালিকায় লেখা হবে না। সে তার পরিবারসহ দারিদ্র্যে জর্জরিত হবে না।’
আবদুল্লাহ ইবন খুবায়ব তাঁর পিতার থেকে বিবরণ পেয়েছেন; তিনি বলেন, এক বর্ষণমুখর রাতে গভীর অন্ধকারে আমাদের জন্য দোয়া করার উদ্দেশ্যে আমরা রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে তালাশ করতে বের হলাম। এক স্থানে গিয়ে আমি তাঁকে পেলাম। তখন তিনি বললেন, বলো। আমি কিছুই বললাম না। তিনি আবার বললেন, বলো। আমি কিছুই বললাম না। পুনরায় আমাকে বললেন, বলো। আমি জিজ্ঞেস করলাম, কী বলব? তিনি বললেন, ‘সকাল-সন্ধ্যায় কুল হুয়াল্লাহু আহাদ (সুরা ইখলাস) এবং সুরা ফালাক, নাস তিন বার পাঠ করবে; তবে তা সবকিছুর ক্ষেত্রে তোমার জন্য যথেষ্ট হবে।’ (তিরমিজি: ৩৫৭৫)