তালাক এড়ানো

আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) সম্পর্কে খুব সুন্দর একটি গল্প আছে। আমরা মনে করি, সাহাবিদের জীবন খুব নিখুঁত ছিল। তাঁদের জীবনে কোনো সমস্যাই ছিল না। বস্তুত তাঁরাও ছিলেন মানুষ। তাঁরাও এমন সব পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে গেছেন, যার মধ্য দিয়ে আমাদেরও যেতে হয়।

একবার স্ত্রীর সঙ্গে আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.)-এর খুব বাজে ধরনের ঝগড়া হয়ে যায়। তাঁরা একে অন্যের সঙ্গে তর্কে লিপ্ত হয়ে ঝগড়া করেই চললেন। স্ত্রীর সঙ্গে তীব্র তর্কবিতর্কে জড়িয়ে পড়ে তিনি বাড়ি ছেড়ে চলে যান। সিদ্ধান্ত নেন, স্ত্রীকে তালাক দেবেন।

রাস্তা দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে তিনি মনে মনে ভাবলেন, ‘আমি এখন কী করব? কী করা উচিত? আল্লাহ আমার কাছে কী চান? এ ক্ষেত্রে রাসুল (সা.)–এর সুন্নতের নিকটবর্তী কোন কাজটি করা শ্রেয় হবে?’ এসব ভাবতে ভাবতে তিনি যখন মদিনার রাস্তা দিয়ে হাঁটছিলেন, তখন হঠাৎ তিনি শুনতে পেলেন, কে যেন সুরা আন নিসার ১৯তম আয়াত তিলাওয়াত করছে, ‘আর তোমরা তাদের সঙ্গে সদ্ভাবে বসবাস করো। আর যদি তোমরা তাদের অপছন্দ করো, তবে এমনও হতে পারে যে তোমরা কোনো কিছুকে অপছন্দ করছ আর আল্লাহ তাতে অনেক কল্যাণ রাখবেন।’ (৪: ১৯)

অর্থাৎ আপনার জীবনসঙ্গী সম্পর্কে আপনি যা পছন্দ করেন, তার প্রতি আলোকপাত করুন। এখন আপনার জীবনসঙ্গীর যে বিষয়গুলো আপনি পছন্দ করছেন না, ভবিষ্যতে সেগুলোই হয়তো সুফল বয়ে আনবে। তাই আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) এই আয়াতকে আল্লাহর পক্ষ থেকে নিদর্শন হিসেবে নিলেন। তিনি যখন ঘর থেকে বের হয়ে হাঁটছিলেন এবং স্ত্রীকে তালাক দেওয়ার কথা ভাবছিলেন, ঠিক সেই মুহূর্তে এই আয়াতটি তাঁর কানে আসে, আপনার স্ত্রীর যে বিষয়গুলো আপনি পছন্দ করেন তাতে মনোযোগ দিন, আশাবাদী হন, তালাকের ব্যাপারে তাড়াহুড়ো করবেন না।

আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) বাড়ি ফিরে গিয়ে তাঁর স্ত্রীর সঙ্গে মিটমাট করলেন। তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন, স্ত্রীকে তালাক দেবেন না।

কিছুদিন পর তাঁর স্ত্রী গর্ভবতী হয়ে সালেম নামে এক পুত্রসন্তানের জন্ম দিলেন। সালেম পরবর্তী সময়ে আবদুল্লাহ ইবনে ওমরের (রা.) সবচেয়ে প্রিয় ও শ্রেষ্ঠ সন্তান হয়ে ওঠেন। তিনি ছিলেন মদিনার একজন শ্রেষ্ঠ আলেম এবং হাদিস বর্ণনাকারী। জ্ঞানে–গরিমায় তিনি তাঁর পিতার উত্তরাধিকারকে ধরে রাখেন।

আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) যখনই সালেমের দিকে তাকাতেন, তিনি বলে উঠতেন, ‘আল্লাহ সত্যবাদী, আল্লাহ সত্যবাদী, আমি যদি এর মাকে তালাক দিতাম তাহলে এ সন্তান আমার হতো না। সুবহানাহু ওয়া তাআলা! দেখুন, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা এই শিশুর মধ্যে কী সুন্দর সম্ভাবনা রেখেছেন।’

অনেক সময় এমন হয় যে কিছু কিছু শিশুর জন্মের সঙ্গে সঙ্গেই বিশেষ কিছু বৈশিষ্ট্য পরিলক্ষিত হয়। সালেম যখন জন্মগ্রহণ করেছিলেন, তখন তিনি এতই বিশেষ ছিলেন যে আয়েশা (রা.) এই শিশুসন্তানকে দেখে তার এক বোনকে বলেছিলেন ওকে বুকের দুধ খাওয়াতে, যাতে সে পরে তাঁর মাহরাম হতে পারে, যাতে সালেম বড় হয়ে তাঁর সঙ্গে একা সময় কাটাতে পারে, তাঁর কাছ থেকে শিখতে পারে এবং তাঁর ছাত্রদের একজন হতে পারে।

ইমাম মালিক রহিমুল্লাহ বর্ণনা করেছেন, সালেমকে আয়েশা (রা.)-এর বোনের দশবার স্তন্য দেওয়ার কথা ছিল, কিন্তু ঘাটতির কারণে তিনি তাঁকে মাত্র দু-তিনবার দুধ পান করান। তাই সালেম কখনোই আয়েশার (রা.) মাহরাম হননি, কিন্তু বড় হয়ে একজন শ্রেষ্ঠ আলেম হয়েছিল।

এ ঘটনা বৈবাহিক জীবনে আমাদের জন্য একটা মূল্যবান শিক্ষা বহন করে। বিবাহবিচ্ছেদের ব্যাপারে কখনোই তাড়াহুড়া করা উচিত নয়। এটি একটি বিকল্প। এ পথ খোলা আছে এবং কখনো কখনো প্রয়োজনীয়ও বটে। তবে জীবনসঙ্গীর তেমন বিষয়ের প্রতি বেশি আলোকপাত করা উচিত নয়, যা আপনাকে অস্থির করে তোলে। অসংগতিগুলো অতিক্রম করে সামনে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করুন।

বিশেষ করে যদি আপনি আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলার সন্তুষ্টির জন্য সংগত কারণে বিয়ে করেন, তবে মনে করার চেষ্টা করুন কেন আপনি তাঁকে বেছে নিয়েছিলেন? কেন প্রথমে তাঁর সঙ্গে থাকতে চেয়েছিলেন? তাঁর ভালো গুণের প্রতি মনোযোগ দিন। আপনি কখনোই জানেন না, এই সম্পর্কের মধ্যে থেকে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা কী আশীর্বাদ বয়ে আনবেন।

আমরা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলার কাছে প্রার্থনা করি, যেন তিনি আমাদের নেক জীবনসঙ্গী এবং সালেমের মতো ধার্মিক সন্তান দান করেন।

অনুবাদ: ফাহমিনা হাসানাত