নবীজি (সা.) ছিলেন আমাদেরই মতো মানুষ। স্বাভাবিক মানুষের মতোই তিনি আহার-নিদ্রা করতেন, উঠতেন-বসতেন। এমনকি এসব কাজে কখনো তিনি নিজের বিশেষ কোনো মহিমা প্রকাশ করতেন না। আরাম করতেন, মার্জিত থাকতেন। তিনি রাজা ছিলেন না, রাজকীয় ভাবও পছন্দ করতেন না। সাহাবীদের মধ্যে নবীজি(সা.) বিশেষ হয়ে থাকতেন না, থাকতেন তাদেরই মতো একজন হয়ে। তাই নতুন কেউ এলে নবীজিকে আলাদা করে চিনতে পারতেন না। জিজ্ঞেস করে জেনে নিতে হতো। যিমাম ইবনে সালাবা (রা.)–র ক্ষেত্রে এমনই ঘটেছিল। তিনি মসজিদে প্রবেশ করে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, মুহাম্মদ (সা.)কে? উপস্থিত সাহাবিরা বলে দিলেন, এই ফর্সা ব্যক্তিটি, যিনি হেলান দিয়ে আছেন। (বুখারি, হাদিস: ৬৩)
যেভাবে আরাম করতেন
আব্বাদ ইবনে তামিম (র.) তার চাচার সূত্রে বর্ণনা করেন যে তিনি নবীজি (সা.)–কে মসজিদে চিৎ হয়ে এক পায়ের ওপর অপর পা রেখে আরাম করতে দেখেছেন। (বুখারি, হাদিস: ৪৭৫)
হাদিস-বিশারদগণ বলেছেন, পায়ের উপর পা রেখে আরাম করায় কোনো দোষ নেই।
যেভাবে হেলান দিতেন
তিনি কখনো মাটিতে বসে যেতেন, বসতে চাটাইয়ের উপর, অথবা বালিশে হেলান দিয়ে। কখনো মসজিদে গা এলিয়ে পায়ের ওপর পা রাখতেন। (মুসলিম, হাদিস: ২,১০০)
কখনো বালিশে হেলান দিয়ে বসতেন, তখন বালিশ থাকতো তার বাঁয়ে। (তিরমিজি, হাদিস: ২,৭৭০, ২,৭৭১)
তখন তার আচরণ ছিলো মার্জিত; অতিরঞ্জন এবং লৌকিকতা থেকে দূরবর্তী। আবু বকর (রা.) বলেন, নবীজি (সা.) একবার কবিরা গুনাহ সম্পর্কে আলোচনা করছিলেন। সে-সময় তিনি কিছুক্ষণ বালিশে হেলান দেওয়া ছিলেন। কথা বলতে বলতে তিনি কিছুটা উত্তেজিত হয়ে পড়লেন, তাই সোজা হয়ে বসলেন। (বুখারি, হাদিস: ২,৬৫৪) এভাবে হাদিস বর্ণনার সময়ও তাকে হেলান দিতে দেখা গেছে।
কিন্তু হেলান দিয়ে খেতে পছন্দ করতেন না। আবু জুহাইফা বলেন, নবীজি (সা.) বলেছেন, আমি হেলান দিয়ে খাবার খাই না। (নাসাই, হাদিস: ৬,৭০৯)
মসজিদে বসা
আবু সায়িদ খুদরি (রা.) বলেন, নবীজি(সা.) কখনও মসজিদে ইহতিবা আকারে বসতেন। (আবু দাউদ, হাদিস: ৪,৮৪৮)
দুই উরুকে পেটের সাথে লাগিয়ে নিতম্বের উপর ভর দিয়ে বসা এবং দুই হাত দিয়ে পায়ের গোছা পেঁচিয়ে ধরাকে ইহতিবা বলা হয়। সাধারণত আরামের জন্যেই এভাবে বসা হয়।
যেভাবে ঘুমাতেন
তিনি ঘুমাতে যাওয়ার সময় ডান কাত হয়ে শুতেন। মাঝেমধ্যে গালের নিচে হাত রাখতেন। (বুখারি, হাদিস: ২৪৭)
আবু কাতাদ বলেন, রাতে বিশ্রাম নিলে তিনি ডান কাতে বিশ্রাম নিতেন এবং ভোর হওয়ার উপক্রম হলে যখন ঘুম ভেঙে যেত, তিনি ডান হাত কনুইতে ভর করে হাতের তালুর উপর মাথা রাখতেন। (মুসলিম, হাদিস: ১,৫৯৭)
ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, কখনও তাকে নাক ডাকতেও দেখা যেত। মাঝেমধ্যেই তিন নাক ডাকতেন। (মুসলিম, হাদিস: ১,৮২৪)
নবীজির (সা.)শয়ন সম্পর্কিত হাদিসের সংখ্যা অপ্রতুল। তবে শয়ন দোয়া সংক্রান্ত বহু হাদিস রয়েছে। আমরা কেবল শয়নের পূর্বে নবীজির(সা.) অবস্থা সম্পর্কেই জানতে পারি এবং বিভিন্ন সফরে দিনের বেলা তিনি শয়ন করলেই কেবল তার অবস্থা সাহাবিরা দেখতেন। তবে কোনো হাদিস থেকেই নবীজির (সা.) বেসামাল ও এলোমলো হয়ে ঘুমিয়েছেন বলে প্রমাণ পাওয়া যায় না।