সুরা আলে ইমরান পবিত্র কোরআনের তৃতীয় সুরা। অবতীর্ণ হয়েছে মদিনায়। এর রুকু ২০, আয়াত ২০০। নাজরানের খ্রিষ্টানরা মদিনায় মহানবী (সা.)-এর দরবারে উপস্থিত হয়ে নিজেদের সত্য ধর্মাবলম্বী বলে দাবি করলে সব ভুল ধারণা নিরসন করতে আল্লাহ এই সুরা অবতীর্ণ করেন। মহানবী (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে এই সুরা পড়বে, সপ্ত জমিন থেকে সপ্ত আসমান পর্যন্ত তার সওয়াব হবে।
সুরা আলে ইমরানে ইমরান পরিবারের কথা বলা হয়েছে। পরিবারটি আল্লাহর ওপর অবিচলতা, পরিশুদ্ধতা এবং ধর্মের সেবার এক উজ্জ্বল নিদর্শন। এ সুরার কেন্দ্রীয় বিষয় আল্লাহর ধর্মের ওপর অবিচলতা।
সুরাটি দুই ভাগে বিভক্ত:
প্রথম ভাগের (আয়াত: ১-১২০) বিষয় চিন্তা ও দর্শনের মোকাবিলায় কীভাবে অবিচল থাকতে হয়। নাজরানের খ্রিষ্টীয় প্রতিনিধিদলের সঙ্গে রাসুলুল্লাহ (সা.) আলোচনা বিতর্কের মধ্যেই তা ফুটে উঠেছে।
দ্বিতীয় ভাগের (আয়াত: ১২১-২০০) আয়াতগুলো আমাদের সামনে স্পষ্ট করে, ধর্মের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে কীভাবে অবিচল থাকতে হয়। ওহুদের যুদ্ধ এবং এর প্রেক্ষাপটে উদ্ভূত ঘটনাপ্রবাহের পটভূমিতে এ আলোচনা করা হয়েছে।
তিনটি শিক্ষণীয় ঘটনা
সুরা আলে ইমরানে তিনটি শিক্ষণীয় ঘটনার উল্লেখ আছে। প্রতিটি ঘটনাই অভূতপূর্ব। ঘটনাগুলো আল্লাহর মহত্ত্বের ইঙ্গিত দেয়।
হজরত মরিয়ম (আ.)–এর বাবা হজরত ইমরান (আ.) আল্লাহর পুণ্যবান বান্দা ছিলেন। অনেক দিন তাদের কোনো সন্তান হচ্ছিল না। একদিন তিনি দেখলেন, একটি পাখি তার বাচ্চাকে খাওয়াচ্ছে। এ দৃশ্যটি তাঁর মনকে নাড়া দিল। তাঁর মনে সন্তান লাভের আশা জেগে উঠল। তিনি আল্লাহর কাছে দোয়া করলেন যে আল্লাহ তাঁকে কোনো সন্তান দিলে তিনি তাঁকে বায়তুল আকসায় খেদমতে ওয়াক্ফ করে দেবেন। আল্লাহ তাঁর দোয়া কবুল করেন। তাঁদের এক কন্যাসন্তান জন্ম নিল।
নিষ্পাপ মেয়ের জবাব শুনে হজরত জাকারিয়া (আ.) সন্তানের জন্য ব্যাকুল হয়ে উঠলেন। অথচ তাঁর এবং স্ত্রীর বয়স হয়েছিল। তিনি আল্লাহর কাছে দোয়া করে বললেন, ‘হে আমার প্রতিপালক, আমাকে তুমি তোমার কাছ থেকে সৎ বংশধর দান করো। নিশ্চয়ই তুমি প্রার্থনা শোনো। (আয়াত: ৩৮)
হজরত ইসা (আ.)–এর জন্ম হচ্ছে তৃতীয় শিক্ষণীয় বিষয়। পিতা ছাড়াই অলৌকিকভাবে তাঁর জন্ম হয়েছিল। ফেরেশতারা মরিয়ম (আ.)–কে সন্তান জন্মের সংবাদ দিলে তিনি বললেন, ‘হে আমার প্রতিপালক! আমাকে কোনো পুরুষ স্পর্শ করেনি, কীভাবে আমার সন্তান হবে?’ তিনি বললেন, ‘এভাবেই। আল্লাহ যা ইচ্ছা সৃষ্টি করেন। তিনি যখন কিছু স্থির করেন তখন বলেন, ‘হও’ আর তখনই তা হয়ে যায়। (আয়াত: ৪৭) ইসা (আ.)–কে আল্লাহ বহু মুজিজা দান করেছিলেন। আল্লাহ বলেন, ‘আর তারা ষড়যন্ত্র করল, আর আল্লাহও পরিকল্পনা করলেন। আর আল্লাহই তো শ্রেষ্ঠ পরিকল্পনাকারী।’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত ৫৪, কোরানশরিফ: সরল বঙ্গানুবাদ, অনুবাদ: মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান, প্রথমা প্রকাশন)