পবিত্র হজ শুরু হতে আর কয়েক দিন বাকি। হজ পালন করতে আসা ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা আজ মক্কায় জুমার নামাজে সমবেত হন। জুমার নামাজ আদায় করতে সকাল ৯টা থেকেই লাখ লাখ মুসল্লি কাবা শরিফে আসতে থাকেন। কাবা শরিফের কাছাকাছি মাতাফ (যেখানে তাওয়াফ করা হয়) বেজমেন্ট, নিচতলা, একতলা, দোতলা ও ছাদ কানায় কানায় ভরে ওঠে।
আজ নামাজের তিন ঘণ্টা আগে পবিত্র কাবা শরিফের চারপাশের সব সড়ক যানবাহন চলাচলের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়। মুসল্লিদের নিরাপত্তায় ছিল বিপুলসংখ্যক পুলিশ। পবিত্র মসজিদুল হারামের প্রবেশপথে ছিল কড়া নিরাপত্তাব্যবস্থা। ইমামের খুতবা শোনার জন্য মসজিদের বাইরে ছিল পর্যাপ্ত মাইক ও সাউন্ড সিস্টেমের ব্যবস্থা। খুতবায় বিশ্বের সব মানুষের জন্য দোয়া করা হয়। বলা হয় হজযাত্রীরা আল্লাহর মেহমান, তাঁরা বড়ই ভাগ্যবান। হজের প্রতিদানস্বরূপ আল্লাহ তাঁদের জান্নাত দান করবেন।
জুমার নামাজ আদায়ের পর কথা হয় সিরাজগঞ্জের আলোকদিয়া গ্রাম থেকে হজ করতে আসা মো. মাহবুব হোসেনের সঙ্গে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘শুকরিয়া জানাই আল্লাহর কাছে। এত বড় জামাতে জুমার নামাজ আদায় করেছি। এভাবে হজের কাজগুলোও যেন ভালোভাবে আদায় করতে পারি।’
নামাজ শেষে কয়েকজনের জানাজা হয়। পবিত্র হজ পালন করতে এসে তাঁরা মারা গেছেন। একদিক থেকে তাঁরা পরম সৌভাগ্যবান। কারণ, পবিত্র কাবা শরিফে জুমার নামাজ শেষে লাখো মুসল্লি তাঁদের জানাজায় শরিক হয়েছেন। আর তাঁদের শেষশয্যা হবে পবিত্র মক্কার মাটি।
ঢাকার ক্রিসেন্ট রোড এলাকার বাসিন্দা আতিকুজ্জামান রিপন স্ত্রীসহ হজ পালন করতে এসেছেন। কাবা শরিফে জুমার নামাজ আদায়ের পর কথা হলো তাঁর সঙ্গে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘হজের আগে সবচেয়ে বড় জামাতে জুমার নামাজ আদায় করলাম। এত বড় জামাতে শরিক হতে পেরে নিজেকে ভাগ্যবান মনে হচ্ছে।’
কড়া নিরাপত্তাব্যবস্থা
হজ উপলক্ষে মক্কার চারপাশ ঘিরেই কড়া নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সেখানে ঢুকতে হজযাত্রীদের নুসুক কার্ড (হজযাত্রীদের অনুমতিপত্র) অথবা ইকামা (সৌদি আরবে থাকার বৈধ কাগজপত্র) দেখাতে হয়। কোনো অমুসলিম সেখানে ঢুকতে পারেন না। পথেঘাটে তল্লাশি চলে যখন-তখন। সঙ্গে পরিচয়পত্র রাখতে হয়।
পবিত্র মসজিদুল হারামের ভেতর ঢোকার জন্য ছোট-বড় শতাধিক প্রবেশপথ আছে। প্রতিটি পথে পুলিশ তল্লাশির কাজে ব্যস্ত থাকে। কারও সঙ্গে ব্যাগ থাকলে তা পরীক্ষার পর ভেতরে ঢোকার অনুমতি মেলে। ক্যামেরা ও বড় ব্যাগ থাকলে মসজিদের ভেতর ঢোকা যায় না। সে ক্ষেত্রে মসজিদের বাইরের প্রাঙ্গণে নামাজ আদায় করতে হয়। নারীদের ব্যাগ মহিলা নিরাপত্তাকর্মীরা তল্লাশি করেন। মক্কার মসজিদুল হারামের সব জায়গাতেই প্রবেশ করার সুযোগ রয়েছে। তবে ওমরাহ পালনকারীদের ক্ষেত্রে যাঁদের ইহরামের কাপড় পরা আছে, শুধু তাঁরা মসজিদুল হারামের নিচতলার মাতাফে (যেখানে তাওয়াফ করা হয়) যেতে পারবেন। ভিড় এড়ানোর জন্য শুধু ওমরাহ পালনকারীদের এই ব্যবস্থা করে দিয়েছে সৌদি কর্তৃপক্ষ। স্বাভাবিক পোশাক (পাঞ্জাবি–পায়জামা, শার্ট–প্যান্ট) পরে মাতাফে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না।
হাজিদের অবাধ চলাচলের সুবিধা নিশ্চিত করতে রাস্তায় পার্ক করা গাড়ি রেকার দিয়ে টেনে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। আর কাবা শরিফে নিরাপত্তার জন্য এর ভেতর ও বাইরে অসংখ্য ক্লোজড সার্কিট (সিসি) ক্যামেরা ও নিরাপত্তা সরঞ্জাম বসানো আছে। মুসল্লিদের নিরাপত্তার জন্য পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন মসজিদের বাইরে প্রবেশপথ এবং ভেতরের বিভিন্ন স্থানে দায়িত্ব পালন করেন।
মসজিদের ভেতর চিকিত্সাসেবা কেন্দ্রে পর্যাপ্ত স্বাস্থ্যকর্মী ও বাইরে অ্যাম্বুলেন্স সার্বক্ষণিক অবস্থান করে। মুসল্লিদের অনেকেই সঙ্গে জায়নামাজ নিয়ে আসেন। দিন-রাত অসংখ্য মানুষ কাবা শরিফে তাওয়াফ করছেন। নানা দেশের মানুষ মিলিত হচ্ছেন এক কাতারে। চলছে মাকামে ইবরাহিমে নামাজ আদায়, সাফা-মারওয়ায় দৌড়ানো ও জমজমের পানি পান। কেউ ভিড়ের মধ্যে হারিয়ে গেলে তাঁকে নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছে দেন মক্কার স্থানীয় লোকজন। বাংলাদেশ হজ মিশনের কর্মীরাও হাজিদের নানাভাবে সাহায্য করেন।
পবিত্র হজ পালনে সারা বিশ্ব থেকে লাখ লাখ মুসলমান মক্কায় জমায়েত হয়েছেন। পবিত্র হজের মূল আনুষ্ঠানিকতা শুরু হচ্ছে ১৪ জুন। আর ১৬ জুন সৌদি আরবে পবিত্র ঈদুল আজহা উদ্যাপিত হবে।