ইসলামে বৃক্ষরোপণের গুরুত্ব

বৃক্ষরোপণ সদকায়ে জারিয়ার অন্তর্ভুক্ত। প্রিয় নবীজি (সা.) নিজ হাতে গাছ লাগিয়েছেন, সাহাবায়ে কিরামকে গাছ লাগাতে ও বাগান করতে উদ্বুদ্ধ করেছেন। ব্যক্তিগত ও সামাজিক বনায়নও করেছেন।

হাদিস শরিফে ফলদ গাছ লাগানোর নির্দেশ পাওয়া যায়। ‘যে ব্যক্তি কোনো বৃক্ষ রোপণ করল, আল্লাহ রাব্বুল আলামিন এর বিনিময়ে তাকে এই বৃক্ষের ফলের সমপরিমাণ প্রতিফল দান করবেন।’ (মুসনাদে আহমদ) 

‘মানুষ, পাখি বা পশু যখন তাদের আহার্য গ্রহণ করে, তখন তা তার (রোপণকারী) পক্ষে একটি সদকা (দান) হিসেবে পরিগণিত হয়।’ (বুখারি ও মুসলিম) 

আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন, ‘তিনি আসমান থেকে বারি বর্ষণ করেন; অতঃপর আমি তা দিয়ে সব ধরনের উদ্ভিদের অঙ্কুরোদ্‌গম করি, অনন্তর তা থেকে সবুজ পত্র উদ্‌গত করি, তারপর তা থেকে ঘন সন্নিবিষ্ট শস্যদানা উৎপাদন করি এবং খর্জুর বৃক্ষ মাথি থেকে ঝুলন্ত কাঁদি বের করি আর আঙুর, জলপাই-জয়তুন ও ডালিমের বাগান সৃষ্টি করি। এগুলো একটি অন্যটির সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ ও বৈসাদৃশ্যপূর্ণ। লক্ষ করো এর ফলের প্রতি, যখন তা ফলবান হয় এবং এর পরিপক্বতা প্রাপ্তির প্রতিও লক্ষ করো।’ (সুরা-৬ আনআম, আয়াত: ৯৯) 

‘তিনিই আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করেন। তাতে তোমাদের জন্য রয়েছে পানীয় এবং তা থেকে জন্মায় উদ্ভিদ, যাতে তোমরা পশুচারণ করে থাকো। তিনি তোমাদের জন্য তা দিয়ে জন্মান শস্য, জয়তুন, খেজুরগাছ, আঙুর ও বিভিন্ন ধরনের ফল।’ (সুরা-১৬ নাহল, আয়াত: ১০-১১ 

ফল ও ফসল আমাদের খাদ্য ও পুষ্টির প্রধান উৎস; যা উদ্ভিদ ও বৃক্ষ থেকে আমরা পাই। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘মানুষ তার খাদ্যের প্রতি লক্ষ করুক। আমিই প্রচুর বারি বর্ষণ করি, অতঃপর আমি ভূমিকে প্রকৃষ্টরূপে বিচূর্ণ করি এবং আমি উৎপন্ন করি শস্য, আঙুর, শাকসবজি, জয়তুন, খেজুর এবং বহুবৃক্ষবিশিষ্ট উদ্যান, ফল ও গবাদিপশুর খাদ্য, এটা তোমাদের এবং তোমাদের পশুগুলোর জীবনধারণের জন্য।’ (সুরা-৮০ আবাসা, আয়াত: ২৪-৩২) 

হজরত ইব্রাহিম (আ.) শিশুসন্তান ও স্ত্রী-পরিজনের খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করার মাধ্যমে একটি শক্তিশালী জাতি গঠনের জন্য দোয়া করেছিলেন, ‘হে আমার রব! এই দেশকে নিরাপদ করুন এবং এর অধিবাসীদের ফলমূল দ্বারা জীবিকা ও আহার্য দান করুন।’ (সুরা-২ বাকারা, আয়াত: ১২৬)। 

তাই আমাদের সব শিশুর খাদ্য, পুষ্টি ও সুস্বাস্থ্য নিশ্চিতকরণে বাড়ির আঙিনায়, আশপাশে খালি জায়গায় ফলদ গাছ লাগানো জরুরি। এর মাধ্যমে বছরব্যাপী ও দীর্ঘ মেয়াদে আমরা সুস্বাদু ও পুষ্টিকর ফলমূল পেয়ে থাকি। পাশাপাশি এর থেকে প্রয়োজনীয় অক্সিজেন, জ্বালানি ও নির্মাণ কাঠ, আসবাব ও ভবিষ্যতের আর্থিক নিরাপত্তার নিশ্চয়তাও পেতে পারি। 

শিশুদের পুষ্টিনিরাপত্তায় প্রয়োজন খাদ্যবৈচিত্র্য এবং বিচিত্র বর্ণের ও বিভিন্ন স্বাদের খাদ্য। পবিত্র কোরআনের বর্ণনা, ‘অতঃপর আমি তদ্দ্বারা বিচিত্র বর্ণের ফলমূল উৎপন্ন করি।’ (সুরা-৩৫ ফাতির, আয়াত: ২৭) 

‘তিনিই লতা, গুল্ম ও বৃক্ষের উদ্যানসমূহ সৃষ্টি করেন এবং খেজুর বৃক্ষ, বিভিন্ন স্বাদবিশিষ্ট খাদ্যশস্য, জয়তুন ও ডালিম—এগুলো একে অন্যের সদৃশ ও বিসদৃশও। তোমরা ওই ফল আহার করো, যখন তা পরিপুষ্ট হয় এবং ফল উত্তোলনের দিনে তার হক (গরিবের পাওনা ‘ওশোর’) প্রদান করো। আর তোমরা অপচয় কোরো না, নিশ্চয় তিনি অপচয়কারীদের পছন্দ করেন না।’ (সুরা-৬ আনআম, আয়াত: ১৪১) 

সঠিক পুষ্টির জন্য প্রয়োজন নির্ভেজাল খাবার। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আমি তোমাদের যে উত্তম জীবিকা দান করেছি, তা তোমরা আহার করো।’ (সুরা-২ বাকারা, আয়াত: ৫৭) 

বারোমাসি দেশি ফল ও সবজি এবং মৌসুমি ফল, শাকসবজি স্বল্প ব্যয়ে ও অল্প পরিশ্রমে আমরা নিজেরা উৎপাদন করলে আমাদের খাদ্যনিরাপত্তা ও নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত হবে। 

মুফতি মাওলানা শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী

যুগ্ম মহাসচিব, বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতি; সহকারী অধ্যাপক, আহ্ছানিয়া ইনস্টিটিউট অব সুফিজম

smusmangonee@gmail.com