ইসলামের অন্যতম সৌন্দর্য হলো সচেতনতা। কয়েকটি সচেতনতার নমুনা কথা জানা যাক। আল্লাহর হুকুমে আগুন পোড়ায়, আগুনের নিজস্ব কোনো শক্তি নেই। তবে সঙ্গে এও বিশ্বাস করতে হবে যে আল্লাহ আগুনকে পোড়ানোর শক্তি দিয়েছেন। সেই শক্তি দিয়েই আগুন পুড়িয়ে ছাই করে দেয় সবকিছু। নমরুদের জ্বলন্ত অগ্নিকুণ্ডে নিক্ষিপ্ত হয়েও হজরত ইবরাহিম (আ.) নিরাপদ ছিলেন।
হজরত আনাস ইবনে মালিক ( রা.) বর্ণনা করেছেন, এক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ (সা.)–কে জিজ্ঞেস করলেন, ‘ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমি কীভাবে আল্লাহর ওপর ভরসা করব? আমার উটটি ছেড়ে দিয়ে, না বেঁধে রেখে?’ রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, প্রথমে তোমার উটটি বাঁধ, এরপর আল্লাহর ওপর ভরসা কর। (তিরমিজি, হাদিস: ২৫১৭)
হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাদের এই শিক্ষা দেয় যে উট ছেড়ে দিলে তা চলে যাবে কোথাও, হারিয়ে যাবে এটাই স্বাভাবিক। তাই উটটি ছেড়ে না দিয়ে বেঁধে রাখ, এরপর আল্লাহর ওপর ভরসা করো। একমাত্র আল্লাহই পারেন উটটি রক্ষা করতে। বাঁধার পরও তো উটটি আক্রান্ত হতে পারে কোনো বিপদে। তাই সাধ্যমতো সচেতনতাটুকু অবলম্বন করে আল্লাহর ওপর ভরসা করতে হবে।
আল্লাহর ওপর ভরসা রাখা বিশ্বাসীদের অপরিহার্য অংশ। তবে ইসলাম একটি যুক্তিপূর্ণ ধর্ম। সে কারণে আল্লাহর নামে অযৌক্তিক কাজ করলে চলে না। কারণ আল্লাহ আমাদের বুদ্ধি–বিবেচনা দিয়ে আশরাফুল মখলুকাত হিসেবে পয়দা করেছেন। আল্লাহ ভরসা বলে স্বেচ্ছায় আগুনে ঝাঁপিয়ে পড়া তো আর ইসলামের শিক্ষা নয়।
রোগ যখন ছোঁয়াচে
এক রোগীর ছোঁয়ায় আরেকজনের দেহে সংক্রমিত রোগকে আমরা বলি ছোঁয়াচে রোগ। রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, ছোঁয়াচে কোনো রোগ নেই। তখন এক গ্রাম্য সাহাবি দাঁড়িয়ে বলল, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমরা তো দেখি, একটা পাঁচড়াযুক্ত উট যখন কোনো পালে থাকে, তখন পুরো উটের পালে পাঁচড়ায় আক্রান্ত করে দেয়? রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, এই হলো ভাগ্য, বলো, প্রথমটির পাঁচড়া হলো কীভাবে? (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস: ৮৬)
রাসুলুল্লাহ (সা.) বুঝিয়েছেন, প্রথম উটটিকে যিনি পাঁচড়ায় আক্রান্ত করেছেন, তিনিই অন্যগুলোকেও এ রোগ দিয়েছেন। যেকোনো প্রকার রোগ হোক, তা কেবল আল্লাহর হুকুমে কাউকে আক্রান্ত করতে পারে কিন্তু এখানেও একই কথা, আল্লাহ কিছু রোগকে সংক্রামক করে দিয়েছেন। আল্লাহর এই সংক্রমণ শক্তির কারণেই এক রোগী থেকে আরেক রোগীতে তা সংক্রমিত হয়।
আরেকটি হাদিসে আছে, কুষ্ঠ রোগী থেকে দূরে থাক, যেভাবে তুমি সিংহ থেকে দূরে থাক। (বুখারি, হাদিস: ৫৭০৭) এই হাদিসটি আমাদের সচেতনতার শিক্ষা দেয়। সতর্কতা অবলম্বনের প্রয়োজনীয়তা শেখায়।