জয়নব বিনতে জাহাশ (রা.) ছিলেন রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সপ্তম স্ত্রী। পঞ্চম হিজরি সনের জিলকদ মাসে, মতান্তরে চতুর্থ হিজরিতে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। (তাহজিবুল কামাল ফি আসমাইর রিজাল, জামালুদ্দিন মিজজি, ৫৩/১৮৪; আস-সিরাতুল হালাবিয়্যাহ, আলি ইবনে বুরহান হালাবি, ৩/৩২০)
২০ হিজরি সনে জয়নব বিনতে জাহাশ (রা.)-এর ইন্তেকাল হয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) কাছ থেকে তিনি ১০-১১টি হাদিস বর্ণনা করেছেন। (উম্মুল মুমিনিন, ড. ইয়াসির ক্বাদি, ভাষান্তর: আলী আহমাদ মাবরুর ও মোহাম্মদ সাইফুল্লাহ, প্রচ্ছদ প্রকাশন, পৃষ্ঠা: ২৭৫)
জয়নব বিনতে জাহাশ (রা.)-এর বাবা ছিলেন জাহাশ ইবনে রাবাব। ইসলামপূর্ব যুগে ব্যবসার উদ্দেশ্যে তিনি মক্কায় আসেন এবং কুরাইশ নেতা আবদুল মুত্তালিবের সঙ্গে অংশীদারি কারবারে সম্পৃক্ত হন। (প্রাগুক্ত, পৃষ্ঠা: ২৭৫)
আয়েশা (রা.) বর্ণনা করেছেন যে রাসুলুল্লাহ (সা.) একবার বললেন, ‘তোমাদের মধ্যে যার হাত সবচেয়ে বেশি দীর্ঘ, সবার আগে সে আমার সঙ্গে সাক্ষাৎ করবে।’ আয়েশা (রা.) বলেন, ‘রাসুলের কথা শুনে আমরা একে অপরের হাত মেপে দেখলাম, কার হাত সবচেয়ে লম্বা! প্রকৃত অর্থে জয়নবের হাত দীর্ঘ ছিল। কারণ, হাতের দৈর্ঘ্য বলতে রাসুলুল্লাহ (সা.) দানশীলতা ও উদারতা বুঝিয়েছেন। জয়নব নিজ হাতে বিভিন্ন পণ্য তৈরি করে সদকা করতেন।’ (মুসলিম, হাদিস: ২,৪৫২)
আয়েশা আরেক জায়গায় বর্ণনা করেছেন, ‘জয়নব ছিলেন হস্তশিল্পে পারদর্শী নারী। নিজ হাতে বিভিন্ন পণ্য তৈরি করে আল্লাহর রাস্তায় দান করাতে তাঁর জুড়ি ছিল না।’ (আস-সিমতুস সামিন ফি মানাকিবি উম্মাহাতিল মুমিনিন, ইবনুল কাস, পৃষ্ঠা: ১২৮)
অনেক গবেষক বলেছেন, তিনি সরাসরি পণ্যও দান করে দিতেন। তাঁর দানশীলতার খ্যাতি ছিল। এ কারণে জনয়ব (রা.)–কে উম্মুল মাসাকিন বা অসহায়-দুস্থদের মা বলা হতো (সিয়ারু আলামিন নুবালা, জাহাবি, খণ্ড ২, পৃষ্ঠা: ২১২)। তাঁর দানশীলতার স্বীকৃতি দিয়ে আয়েশা (রা.) বলেছেন, ‘বিপুল দানশীলতার ক্ষেত্রে জয়নবের চেয়ে শ্রেষ্ঠ নারী আমি কখনো দেখিনি।’ (মুসলিম, হাদিস: ১,৮৯২)
ইতিহাসবিদ ও সিরাত রচয়িতারা জয়নব বিনতে জাহাশকে (রা.) হস্তশিল্পে পারদর্শী নারী হিসেবে উপস্থাপন করেছেন। আরবিতে তাঁকে ‘সান্নাউল ইয়াদ’ বলা হতো। (উম্মুল মুমিনিন জয়নব বিনতে জাহাশ রাদিয়াল্লাহু আনহা, আমিনা উমর আল-খাররাত, ভাষান্তর: মাওলানা মাহমুদ সিদ্দিকী, দ্বীন পাবলিকেশন, পৃষ্ঠা: ৭২)
কোনো নারী যখন হস্তশিল্পের মাধ্যমে উপার্জন করেন, আরবি পরিভাষায় তাঁকে ‘সান্নাউল ইয়াদ’ বলা হয়। (লিসানুল আরব, ইবনে মানযুর, খণ্ড ৮, পৃষ্ঠা: ২০৯)