আবদুল্লাহ্ ইবনে উমরের মুক্তি পাওয়া দাস নাফি ইবনে উমরের বরাত দিয়ে বলেছেন, আমার বাবা মুসলমান হওয়ার পর বলেছিলেন, ‘তোমাদের মধ্যে কে সবচেয়ে দ্রুত খবর চালান করতে পারো?’ একজন জামিল ইবনে মা-মার আল-জুমাহির নাম বলল। তিনি তার কাছে গেলেন। আমি গেলাম তার পেছন পেছন, কী করেন দেখার জন্য। আমি তখন খুব ছোট, কিন্তু সব বুঝতাম। জামিলের কাছে গিয়ে তিনি বললেন, তিনি মুসলমান হয়েছেন, মুহাম্মদের (সা.) ধর্ম গ্রহণ করেছেন, এ কথা জামিল জানে কি না। তার কথা শেষ হতে না হতেই, আল্লাহ্র কসম, সে লাফ মেরে উঠে মাটি থেকে জামাটা তুলেই এক দৌড়, তার পেছনে উমর আর বাবার পেছনে আমি। মসজিদের দরজায় এসে সে প্রাণপণে চিৎকার করে উঠল, ‘উমর ধর্ম ত্যাগ করেছে!’ কাবার সভাস্থলে তখন কোরাইশরা বসা ছিল। জামিলের পেছনে চিৎকার করে বলে উঠলেন উমর, ‘মিথ্যা কথা! ও একজন মিথ্যাবাদী! আমি ধর্ম ত্যাগ করিনি, আমি মুসলমান হয়েছি। আশহাদু আল্লাহ্, ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়া মুহাম্মদান আবদুহু ওয়া রাসুলুহু।’
সবাই উঠে এসে একযোগে তাঁকে আক্রমণ করল। যুদ্ধ চলল দুপুর পর্যন্ত। উমর মার খেতে খেতে আধমরা হয়ে গেলেন। তিনি বসে পড়লেন। ওরা সবাই তাঁকে ঘিরে দণ্ডায়মান। তিনি বললেন, ‘তোমাদের যা খুশি করো, আমি আল্লাহ্র নামে কসম খাচ্ছি, আমি একা না হয়ে যদি আমার সঙ্গে তিন শ জন লোক থাকত, তাহলে সমানে সমানে যুদ্ধ করতে পারতাম।’
ঠিক তক্ষুনি কোরাইশদের একজন শেখ এলেন সেখানে। ইয়েমেনি আলখাল্লা আর হাতের কাজ করা জামা তাঁর গায়ে। তিনি এসে দাঁড়ালেন, জিজ্ঞেস করলেন কী বিষয়। উমরের ধর্মান্তর গ্রহণের কথা তাঁকে বলা হলো। তিনি বললেন, ‘কেউ যদি নিজের ধর্ম বেছে নেয়, তাহলে বাধাটা কিসের? তোমরা কী করতে চাচ্ছ? তোমরা কি মনে করো, বনু আদি তাদের একটা মানুষকে তোমাদের হাতে এমনি করে ছেড়ে দেবে? ওকে ছেড়ে দাও বলছি।’
আল্লাহ্র কসম, ওরা সব সরে গেল, মনে হলো যেন সমস্ত কাপড় খুলে খসে পড়ল।
আমার বাবা মদিনা চলে যাওয়ার পর একদিন আমি তাঁকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, যেদিন তিনি মুসলমান হলেন, কোরাইশরা তাঁকে আক্রমণ করলে পরে একটা লোক এসে সবাইকে তাড়িয়ে দিয়েছিল, সে লোকটা কে। তিনি বলেছিলেন, সে ছিল আমার ছেলে, আল-আস ইবনে ওয়াইল আল-সাহমি।
উমরের গোত্রের কি পরিবারের লোক হবেন আবদুর রহমান ইবনে আল-হারিস। তিনি বলেছেন যে উমর বলেছেন, ‘আমি যে রাতে মুসলমান হলাম, সে রাতেই আমার ইচ্ছা হচ্ছিল, রাসুলের (সা.) সবচেয়ে দুর্ধর্ষ শত্রু কে হতে পারে, আমি বের করব এবং তাকে গিয়ে বলব যে আমি মুসলমান হয়েছি। আবু জেহেলের কথা আমার মনে এল।’ এদিকে উমরের মতো হলেন হানতামা বিনতে হিশাম ইবনে আল-মুগিরা। পরদিন সকালে আমি তাঁর দরজায় গিয়ে আওয়াজ করলাম। ও বেরিয়ে এল, বলল, ‘এসো এসো, কী খবর ভাতিজা?’ আমি বললাম, আমি তাঁকে বলতে এসেছি, আমি আল্লাহ্, তাঁর রাসুল এবং তিনি যা এনেছেন তাতে বিশ্বাস স্থাপন করেছি। ও সশব্দে দরজা বন্ধ করে দিল আমার মুখের ওপর। বলল, ‘ঈশ্বরের অভিসম্পাত পড়ুক তোমার ওপর। লানত পড়ুক তোমার এই সংবাদের ওপর।’
অনুবাদ: শহীদ আখন্দ
প্রথমা প্রকাশন থেকে প্রকাশিত ‘সিরাতে রাসুলুল্লাহ (সা.)’ বই থেকে