দুনিয়ার ভোগ–বিলাস নিয়ে সুরা তাকাসুরের সতর্কতা

সুরা তাকাসুর পবিত্র কোরআনের ১০২ তম সুরা। সুরাটি মক্কায় অবতীর্ণ হয়েছে। এর রুকু ১, ৮ আয়াত। তাকাসুর শব্দের অর্থ প্রাচুর্যের প্রতিযোগিতা। প্রাচুর্যের প্রতিযোগিতায় মোহাচ্ছন্ন মানুষেরা জাহান্নাম প্রত্যক্ষ করবে। সেদিন তাদের আরাম–আয়েশ সম্পর্কে প্রশ্ন করা হবে।

যারা কেবল দুনিয়ার ভোগ–বিলাসকেই জীবনের লক্ষ্য করে তুলেছে, এই সুরায় তাদের পরিণাম নিয়ে কথা বলা হয়েছে। বিলাস–ব্যসনে নিমগ্ন জীবনে মৃত্যু এসে উপস্থিত হবে হঠাৎ। সব জৌলুস নিভে যাবে। এ ব্যাপারে সবাইকে সতর্ক করা হয়েছে। কেয়ামতের দিন এসব ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা হবে।

সুরার প্রথম আয়াতে বলা হয়েছে, ‘প্রাচুর্যের প্রতিযোগিতা তোমাদের মোহাচ্ছন্ন করে রাখে।’ দুনিয়ায় মোহ মানুষকে ফিরিয়ে রেখেছে। একজন আরেকজনের কাছ থেকে বেশি পাওয়ার প্রতিযোগিতায় মেতে থাকে। একটি সচ্ছল ও শান্তিপূর্ণ জীবন কামনা করা খারাপ নয়। কিন্তু পাওয়ার লালসা বড় হয়ে উঠলে এর পেছনে ছোটাই হয়ে ওঠে জীবনের মূল উদ্দেশ্য। এই প্রতিযোগিতায় নিজের অহংকার ফুলে–ফেঁপে ওঠে এবং অন্যকে পিছিয়ে দেওয়ার মন্দ ইচ্ছা মন দখল করে নেয়।

দ্বিতীয় আয়াতে বলা হয়েছে, ‘যতক্ষণ না তোমরা কবরের সম্মুখীন হও।’ কবরে যেতে হবেই। আর সেটাও স্থায়ী নয়। দুনিয়ার মতো সেখানেও শুধু সফর করতে হয়। তুচ্ছ বিষয় অর্জনের প্রতিযোগিতায় প্রাণান্ত হয়ে ছুটতে থাকায় আর কখন মৃত্যুর ঘনিয়ে এসেছে। সব ছেড়ে একদম খালি হাতে কবরে প্রবেশ করতে হয়।

কবর এক ভ্রমণপথ। নির্দিষ্ট সময় অব্দি কবরে থাকার পর শুরু হয় কিয়ামত। এর পর বিশ্বাসীদের কাম্য গন্তব্য হলো জান্নাত।

তৃতীয় আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘এ ঠিক নয়, তোমরা শিগগিরই তা জানতে পারবে।’ আল্লাহ এই ধারণা ও কর্মকাণ্ডকে সঠিক নয় বলে অভিহিত করেছেন এবং জানার ঘাটতির কথা তুলে ধরেছেন। সঠিকভাবে নিজের জ্ঞান ও বুদ্ধি-বিবেক প্রয়োগ না করায় এমনটি হয়। মানুষ আগে তা বুঝতে না পারলেও অচিরেই তারা জানতে পারবে বলে আল্লাহ নিশ্চয়তা দিয়েছেন।

 চতুর্থ আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘আবার বলি, এ ঠিক নয়, তোমরা শীঘ্রই জানতে পারবে।’ আগের আয়াতের কথাই আবার বলা হয়েছে। এখানে পর পর দুই বার বলার কারণ এটার গুরুত্ব যে বেশি তা বোঝানোর জন্য।

পঞ্চম আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘তোমাদের যদি সঠিক জ্ঞান থাকত।’ আল্লাহই আসলে জ্ঞানের মূল উৎস। আল্লাহ জ্ঞান না দিলে আমাদের নিজেদের পক্ষে জানা কখনই সম্ভব না।

ষষ্ঠ আয়াতে বলা হয়েছে, ‘তোমরা তো জাহান্নাম দেখবেই।’ আল্লাহ নিশ্চিত করছেন যে জাহান্নামকে দেখতে পাওয়া যাবে। অনেকে মনে করে, মৃত্যুতেই সবকিছুর শেষ। তাদের জন্য তো বটেই, সবার জন্যই আল্লাহ বললেন, জাহান্নাম অবশ্যই আছে এবং তা নিজ চোখেই দেখা পাবে।

সপ্তম আয়াতে আল্লাহ বলেছেন, ‘আবার বলি, তোমরা তো তা দেখবেই চাক্ষুষ প্রত্যয়ে।’ মানুষ জাহান্নাম দেখবে তখন বিশ্বাস স্থাপন করবে।

সব শেষ অষ্টম আয়াতে বলা হয়েছে, ‘তারপর সেদিন তোমাদেরকে তোমাদের আরাম–উপভোগ সম্পর্কে প্রশ্ন করা হবে।’ এখানে পরকালে জিজ্ঞাসাবাদ করার বিষয়টি এসেছে। দুনিয়ার আরাম–আয়েশ লাভ করতে সে দিকে বেশি ঝুঁকে গিয়ে অনেকে আল্লাহ–বিমুখ হয়ে পড়ে। এ নিয়ে প্রশ্ন করা হবে।

শেষ আয়াতে বলা হয়েছে যে, নেয়ামতসমূহ সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। নিয়ামতগুলো কী, তার একটা ধারণা এই সুরায় শুরু থেকে দেওয়া হয়েছে। সেগুলো হলো: সময়, জ্ঞান, চোখ, প্রশ্ন।

সময়: সময় মানুষের জন্য অনেক বড় নেয়ামত, তা কীভাবে ব্যয় করা হবে তার ওপর অনেক কিছুই নির্ভর করে।

জ্ঞান: এই নেয়ামতটিই মানুষকে অন্য সব সৃষ্টি থেকে শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছে। জ্ঞান কাজে লাগিয়েই মানুষ ভালোমন্দ বুঝতে পারে।

চোখ: চোখ তথা অন্যান্য ইন্দ্রিয় আল্লাহর দেওয়া বড় নেয়ামত। এসব ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমেই মানুষ আল্লাহর নিদর্শন উপলব্ধি করে। প্রশ্ন: প্রশ্ন মানে বিচার। এই প্রশ্ন বা বিচারের কারণেই মানুষ ভালো পথে থাকতে চেষ্টা করে।

সুরা তাকাসুরে বর্ণনা করা হয়েছে যে মানুষ গাফিলতিতে আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে এবং সে অবস্থাতেই সে কবরে পৌঁছায়। আর তা–ই তাকে শেষ পর্যন্ত জাহান্নামে নিয়ে যায়।