তারাবিতে আজ: ৫

হালাল খাবার গ্রহণ ও অসিয়তের গুরুত্ব

আজ খতমে তারাবিহতে পবিত্র কোরআনের সুরা মায়িদার ৮৩ থেকে সুরা আরাফের ১১ নম্বর আয়াত পর্যন্ত তিলাওয়াত করা হবে। সপ্তম পারা এবং অষ্টম পারার প্রথমার্ধ—মোট দেড় পারা। এ অংশে সত্যানুরাগীদের প্রশংসা, অহেতুক প্রশ্ন করা থেকে বিরত থাকার নির্দেশ, হালাল খাবারের গুরুত্ব, শপথ ভাঙার কাফফারা, ভ্রমণ, অসিয়ত, পৃথিবী সৃষ্টি ও ঈসা (আ.)-এর অলৌকিক ঘটনা, দুনিয়া-আখেরাতের জীবন, কোরআন নাজিলের প্রয়োজনীয়তা, কাফিরদের শাস্তি, মানুষ সৃষ্টির ইতিহাসসহ নানা বিষয় বিবৃত হয়েছে।

ইবাদত কবুলের পূর্বশর্ত হালাল খাবার

আজকের তারাবিহতে ছয়বার হালাল খাবার গ্রহণ–সম্পর্কিত আয়াত পাঠ করা হবে। সুরা মায়িদার ৮৮ নম্বর আয়াতে আল্লাহ হালাল খাবার গ্রহণের নির্দেশ দিয়ে বলেন, ‘আল্লাহ তোমাদের যে রিজিক দিয়েছেন, তা থেকে হালাল, উৎকৃষ্ট বস্তু খাও এবং যে আল্লাহর প্রতি তোমরা ইমান রাখো, তাঁকে ভয় করে চলো।’ বিশ্বাসী মানুষের ইমানি দায়িত্ব হালাল খাবার গ্রহণ করা ও হারাম থেকে বেঁচে থাকা। হালাল উপার্জনের আহার মানুষকে পবিত্র করে। স্বভাব-চরিত্র সুন্দর করে। সৎসাহসী করে। ইবাদত কবুলের পূর্বশর্তও হালাল খাবার গ্রহণ। হারাম খাবার খেয়ে ইবাদত করলে কবুল হয় না। আল্লাহকে ডাকলে তিনি শোনেন না।

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘এক ব্যক্তি দীর্ঘ সফরে থাকা অবস্থায় এলোমেলো চুল ও ধূলিধূসরিত দেহ নিয়ে আকাশের দিকে হাত তুলে হে প্রভু বলে মোনাজাত করে, অথচ সে যা খায় তা হারাম, যা পান করে তা হারাম, যা পরিধান করে তা হারাম এবং হারামের দ্বারাই সে পুষ্টি অর্জন করে। তার মোনাজাত কীভাবে কবুল হবে?’ (মুসলিম, হাদিস: ১০১৫)

ইসলামে অসিয়তের গুরুত্ব

সুরা মায়িদার ১০৬ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তাআলা অসিয়তের নীতিমালা বর্ণনা করেছেন। অসিয়ত হলো জীবিত থাকা অবস্থায় উত্তরসূরিদের প্রতি নির্দেশনা। অসিয়ত করা সচেতন বিশ্বাসীদের গুণ। ওয়ারিশদের ঠকানো কিংবা তাঁদের বঞ্চিত করার জন্য অসিয়ত হারাম। মৃত্যুর পর ঋণ পরিশোধ, দাফন-কাফন, জানাজার নামাজ পড়ানো, সম্পত্তির বাঁটোয়ারা, মসজিদ-মাদ্রাসা নির্মাণ ও জনকল্যাণমূলক যেকোনো কাজের বিষয়ে অসিয়ত হতে পারে। নামাজ, রোজা, জাকাত, হজসহ আল্লাহ ও বান্দার যেসব হক অনাদায় থেকে যায়; সে সম্পর্কে অসিয়ত করে যাওয়া ওয়াজিব। অসিয়ত করার সময় দুজন সাক্ষী রাখা জরুরি। সম্পদের এক-তৃতীয়াংশের বেশি অসিয়ত করা যাবে না।

ঈসা (আ.)-এর প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ

এ সুরার ১১০ থেকে ১১৮ আয়াতে আল্লাহ তাআলা ঈসা (আ.)-কে দেওয়া অনুগ্রহের কথা আলোচনা করেছেন; যেমন পবিত্র আত্মার মাধ্যমে তাঁকে সাহায্য করা, কোলে থেকেও কথা বলতে পারা, কিতাব প্রদান, প্রগাঢ় জ্ঞান, তাওরাত ও ইঞ্জিলের শিক্ষাদান, কাদামাটি দিয়ে প্রতিকৃতি বানিয়ে তাতে আল্লাহর আদেশে ফুঁ দিলে তা পাখি হয়ে যাওয়া এবং আল্লাহর আদেশে জন্মান্ধ ও কুষ্ঠরোগীকে নিরাময় করে দেওয়া। মৃতদের জীবিত করে ফেলা ইত্যাদি।

জীবজন্তুর আলাপ আছে সুরা আনআমে

কোরআনের ষষ্ঠ সুরা আনআম, মক্কায় অবতীর্ণ। আয়াত সংখ্যা ১৬৫। আনআম অর্থ জীবজন্তু। এ সুরায় প্রাণী–সম্পর্কিত আলোচনা থাকায় এর নাম হয়েছে আনআম। এ সুরার শুরুতে একত্ববাদ, রিসালাত ও আখেরাতের কথা এসেছে।

ভ্রমণে দেখা মেলে সৃষ্টি আর সৌন্দর্যের

পুরো পৃথিবী ভ্রমণ করেছেন, এমন মানুষ হাতে গোনা কয়েকজন। পৃথিবীজুড়ে আছে নানা রঙের নানা গঠনের মানুষ, বিচিত্র ভাষা এবং কত রকম দেশ আর তার বহুধর্মী সৌন্দর্য। এই যে আল্লাহর বৈচিত্র্যময় সৃষ্টি আর সৌন্দর্য, এসব দেখতে হলে বের হতে হবে ভ্রমণে। ভ্রমণে গিয়ে আল্লাহর সৃষ্টির অপার বিস্ময় দেখে মানুষের ইমান বাড়ে। আল্লাহ কোরআনে ১৩ বারের বেশি ভ্রমণের নির্দেশ দিয়েছেন। সুরা আনআমের ১১ আয়াতে ভ্রমণের নির্দেশ দিয়ে বলেন, ‘বলে দিন, তোমরা পৃথিবীতে পরিভ্রমণ করো। অতঃপর দেখ, মিথ্যা আরোপকারীদের পরিণাম কী হয়েছে?’

মূর্তিকে গালি দেওয়া নিষেধ

হজরত মুহাম্মদ (সা.) ছিলেন উত্তম চরিত্রের অধিকারী। মানুষের জন্য তাঁর মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ। তিনি কখনো কোনো মানুষকে, এমনকি জীবজন্তুকেও গালি দেননি। সম্ভবত সে সময় কোনো সাহাবি মূর্তি-প্রতিমার সম্পর্কে কঠোর কথা বলেছিলেন। মুশরিকরা সেটাকে গালি মনে করে রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বললেন, ‘আপনি আমাদের প্রতিমাদের গালিগালাজ করা থেকে বিরত না হলে আমরা আপনার আল্লাহকেও গালিগালাজ করব।’ এ পরিপ্রেক্ষিতে সুরা আনআমের ১০৮ নম্বর আয়াত নাজিল হয়। আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা মুশরিকদের প্রতিমাকে ও আল্লাহকে ছেড়ে তারা যাদের উপাসনা করে, তাদের মন্দ বলো না। অন্যথায় নিজেদের ভ্রষ্টতা ও অজ্ঞতার কারণে তারাও আল্লাহকে মন্দ বলা শুরু করবে।’

১০ হারাম কাজ

এ সুরার ১৫১ থেকে ১৫৩ আয়াতে আল্লাহ মানুষের জন্য ১০টি কাজ হারাম করেছেন। এগুলো থেকে বিরত থাকা বিশ্বাসী মানুষের গুণ; যেমন ১. আল্লাহর সঙ্গে শিরক করা। ২. মা-বাবার সঙ্গে অসদ্ব্যবহার। ৩. দারিদ্র্যের ভয়ে সন্তান হত্যা। ৪. অশ্লীল কাজ করা। ৫. কাউকে অন্যায়ভাবে হত্যা করা। ৬. এতিমের সম্পদ অবৈধভাবে আত্মসাৎ করা। ৭. মাপে কম দেওয়া। ৮. সাক্ষ্য ও বিচারকাজে অন্যায়–অবিচার করা। ৯. আল্লাহর অঙ্গীকার পূর্ণ না করা এবং ১০. আল্লাহর দেখানো পথ ছেড়ে ভিন্ন পথ অবলম্বন করা।

সুরা আরাফের বিষয়বস্তু

কোরআনের সপ্তম সুরা আরাফ মক্কায় অবতীর্ণ। এর আয়াত সংখ্যা ২০৬। আজ খতমে তারাবিহতে সুরা আরাফের ১১ নম্বর আয়াত পর্যন্ত তিলাওয়াত করা হবে। এখানে কোরআন নাজিলের উদ্দেশ্য, পূর্ববর্তী যুগে আল্লাহর কালাম যারা অস্বীকার করেছে তাদের পরিণাম, এখনো কেউ না মানলে তাদেরও সেই শাস্তি প্রদান, নবী-রাসুল প্রেরণ এবং মানব সৃষ্টির ইতিহাস আলোচিত হয়েছে।

 আবু আশফাক মুহাম্মাদ : লেখক ও আলেম