জীবন, সম্পদ ও সম্মানের সুরক্ষা সব নাগরিকের অধিকার। আর প্রকৃত সুরক্ষাদাতা ও নিরাপত্তা বিধানকারী হলেন মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন।
আল্লাহ তাআলার ঘোষণা, ‘তিনিই আল্লাহ, তিনি ছাড়া কোনো উপাস্য নেই। তিনিই অধিপতি, তিনিই পবিত্র, তিনিই শান্তিবিধায়ক, তিনিই নিরাপত্তাবিধায়ক, তিনিই রক্ষাকারী, তিনিই পরাক্রমশালী, তিনিই প্রবল, তিনিই অতীব মহিমান্বিত। তারা (অবিশ্বাসীরা) যাকে শরিক স্থির করে, আল্লাহ তা হতে পবিত্র, মহান।’ (সুরা-৫৯ হাশর, আয়াত: ২৩)
‘যিনি তাদের ক্ষুধায় অন্ন দান করেন এবং শঙ্কায় তাদের নিরাপত্তা দান করেন।’ (সুরা-১০৬ কুরাইশ, আয়াত: ৪)
প্রিয় নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ছোটদের স্নেহ করে না এবং বড়দের সম্মান করে না, সে ব্যক্তি আমার উম্মতভুক্ত নয়।’ (তিরমিজি: ১৯২০, সহিহ্ আলবানী: ৫৪৪৫)
ইসলাম মানবজীবনকে পবিত্র ও মূল্যবান মনে করে। শুধু অন্যের জীবনই নয়, নিজের জীবন নিজে হরণ (আত্মহত্যা) করাকেও ইসলাম হারাম করছে
‘সে সত্যিকারের মুসলিম, যার হাত ও জিহ্বার অনিষ্ট থেকে অন্য মুসলিম নিরাপদ। প্রকৃত হিজরতকারী ওই ব্যক্তি, যে বিরত থাকে এমন কাজ থেকে, যা থেকে আল্লাহ নিষেধ করেছেন।’ (বুখারি, পৃষ্ঠা: ৬; মুত্তাফাকুন আলাইহি)
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘হে লোক সকল! তোমাদের পরস্পরের জানমাল ও সম্মান পরস্পরের জন্য কিয়ামত পর্যন্ত এই মক্কা নগর, এই জিলহজ মাস ও এই আরাফার দিনের মতো হারাম সাব্যস্ত করা হলো।’ (আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া)
কোনো ব্যক্তি বিশ্বাসী বা মুমিন হলেই এ নীতির আওতায় পড়বে। যে ব্যক্তিই কালিমা উচ্চারণ করবে এবং মুখে এই কথা স্বীকার করবে যে, ‘আল্লাহ ব্যতীত কোনো ইলাহ বা মাবুদ নাই এবং হজরত মুহাম্মদ (সা.) আল্লাহর রাসুল’ তাঁর জন্যই ইসলামের এই নীতি প্রযোজ্য।
হাদিস শরিফে রয়েছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘আল্লাহর শপথ! সে বিশ্বাসী নয়, আল্লাহর শপথ!! সে বিশ্বাসী নয়, আল্লাহর শপথ!!! সে বিশ্বাসী নয়’; বলা হলো, “কে (বিশ্বাসী নয়)? হে আল্লাহর রাসুল।” তিনি বললেন, যার প্রতিবেশী তার অনিষ্ট থেকে নিরাপদ থাকে না।’ (বুখারি, খণ্ড: ২, পৃষ্ঠা: ৮৮৯)
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে আল্লাহ তাআলার প্রতি ও আখিরাতের প্রতি ইমান রাখে, সে যেন মেহমানকে সম্মান করে; যে আল্লাহ তাআলার প্রতি ও আখিরাতের প্রতি ইমান রাখে, সে যেন প্রতিবেশীকে কষ্ট না দেয়, যে আল্লাহ ও আখিরাতের প্রতি ইমান রাখে, সে যেন ভালো কথা বলে বা চুপ থাকে।’ (বুখারি, খণ্ড: ২, পৃষ্ঠা: ৮৮৯)
ইসলাম মানবজীবনকে পবিত্র ও মূল্যবান মনে করে। শুধু অন্যের জীবনই নয়, নিজের জীবন নিজে হরণ (আত্মহত্যা) করাকেও ইসলাম হারাম করছে।
পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘আর তোমরা নিজেদের হত্যা করো না। নিঃসন্দেহে আল্লাহ তাআলা তোমাদের প্রতি দয়ালু। আর যে কেউ সীমা লঙ্ঘন বা জুলুমের বশে এরূপ করবে, তাকে শিগগিরই আগুনে নিক্ষেপ করা হবে।’ (সুরা-৪ নিসা, আয়াত: ২৯-৩০)
‘মমিন’ অর্থ নিরাপত্তা বিধানকারী, ‘মুসলিম’ অর্থ শান্তি স্থাপনকারী। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘একজন সত্যিকারের ইমানদার সে, যার কাছ থেকে মানুষ তার জানমালের ব্যাপারে সম্পূর্ণ নিরাপদবোধ করে।’ (ইবনে মাজাহ)
এখানে মানুষ বলতে বিশ্বাসী ও অবিশ্বাসী সব ধরনের মানুষই ইমানদারদের কাছে নিরাপদ। এমনকি যুদ্ধকালেও ইসলাম অসামরিক ব্যক্তি, যাঁরা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেননি; নারী, শিশু, বৃদ্ধ এবং সাধু-সন্ন্যাসী, পাদরি-পুরোহিত বা ধর্মযাজক—যাঁরা উপাসনায় লিপ্ত, তাঁদের হত্যা করা নিষিদ্ধ করেছে।
ইসলামের এ নিরাপত্তার বিধান প্রাণিকুল-পশুপাখি, কীটপতঙ্গ এমনকি উদ্ভিদজগৎ-গাছপালা তরুলতা পর্যন্ত বিস্তৃত। একজন মুসলিম অন্য মুসলিমের সঙ্গে সাক্ষাতে প্রথম যে শুভেচ্ছা বিনিময় করে, তা হলো, ‘আপনার ওপর শান্তি বর্ষিত হোক।’ মুমিন মুসলমানদের কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যস্থল বেহেশতের এক নাম ‘দারুস সালাম’ বা শান্তি নিবাস। এখানে তাঁরাই থাকবেন, যাঁরা সমাজে শান্তি স্থাপন করবেন।
মুফতি মাওলানা শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী
যুগ্ম মহাসচিব, বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতি; সহকারী অধ্যাপক, আহ্ছানিয়া ইনস্টিটিউট অব সুফিজম
smusmangonee@gmail.com