ইমামদের বিচক্ষণতা

ইসলামের স্বর্ণযুগের কথা। একবার ইমাম আবু হানিফা (রহ.)–এর সঙ্গে একদল লোকের বিতর্ক ঠিক হলো। তারা ছিল সে সময়ের নাস্তিক, যারা স্রষ্টায় বিশ্বাস করত না। তাদের বলা হতো ‘আদ–দাহরি’। তারা বিশ্বাস করত সবকিছু এসেছে শূন্য থেকে এবং আমাদের চারপাশের প্রকৃতি ও পরিবেশ সবকিছু সৃষ্টির জন্য দায়ী।

এক বিতর্কের দিন ইমাম আবু হানিফা (রহ.) সভায় পৌঁছালেন এক ঘণ্টা দেরি করে। তিনি আসার পর আদ–দাহরিরা ক্ষেপে গেল। তারা বলতে লাগল, ‘আপনার দেরিতে আসাই ইঙ্গিত দিচ্ছে, আপনার এই স্রষ্টার ধারণা কতটা দুর্বল। আপনি আমাদের সঙ্গে কথা বলতেই ভয় পাচ্ছেন।’

তখন ইমাম আবু হানিফা (রহ.) বললেন, ‘আসলে না। আমি যখন পথ দিয়ে হেঁটে আসছিলাম, তখন আমার সামনে বিশাল এক নদী চলে এল। কিন্তু আমার সঙ্গে তো কোনো নৌকা ছিল না। আমি তখন সেখানে বসে ভাবতে লাগলাম। আমি দেখলাম, হঠাৎ একটি গাছ কেটে তক্তা হয়ে যাচ্ছে। এরপর বাতাসের তীব্র বেগে সেই তক্তাগুলোয় পেরেক ঢুকে যাচ্ছে। আমার চোখের সামনে সব কটি তক্তা মিলে একটি সুন্দর নৌকা তৈরি হয়ে গেল। আমি সেই নৌকায় চড়ে নদী পার হয়ে এই সভায় এসে পৌঁছেছি। প্রকৃতির এই বিচিত্র খেলা দেখতে গিয়ে আমার এক ঘণ্টা দেরি হয়ে গেল।’

ইমাম আবু হানিফা (রহ.)–এর মুখে এই গল্প শুনে আদ–দাহরিরা একে অপরের সঙ্গে হাসিঠাট্টা করতে লাগল। তারা বলল, ‘আপনি নিজের দোষ স্বীকার না করে এই বানানো গল্প আমাদের বিশ্বাস করতে বলছেন?’ তখন আবু হানিফা (রহ.) বললেন, ‘একই প্রশ্ন আপনাদের কাছেও করা যাক। সামান্য এই নৌকা যে আপনাআপনি তৈরি হতে পারে, সেটা বিশ্বাস করতে আপনাদের এত কষ্ট হচ্ছে অথচ এই বিশ্ব–আকাশ–পর্বত–নদীনালা–মানুষ—এগুলো সব আপনাআপনি সৃষ্টি হয়েছে, সেটা কী করে বিশ্বাস করে ফেললেন?’

ইমাম আবু হানিফা (রহ.)-এর যুক্তি ছিল খুবই সরল। এ পৃথিবীতে কিছু না কিছু আমাদের নিয়ে এসেছে। একদম শূন্য থেকে কোনো কিছু আসতে পারে না। প্রতিটি জিনিসের পেছনে কারণ আছে। প্রতিটি সৃষ্টির পেছনে একজন স্রষ্টা আছেন।

ইমাম শাফেয়ি (রহ.) এ বিষয়ে আরও বিস্তারিত ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন। এক ব্যক্তি এসে ইমাম শাফেয়ি (রহ.)–কে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘আপনি কীভাবে জানেন যে আমাদের একজন স্রষ্টা আছেন?’ তখন শাফেয়ি (রহ.) বলেছিলেন, ‘তুতগাছের এই পাতার দিকে কিছুক্ষণ খেয়াল করো। এর নকশাগুলো দেখো। তুমি কি খেয়াল করেছ, একটি পাতার সঙ্গে আরেকটি পাতার কত মিল? এই পাতা যদি একটি রেশম পোকা খায়, এটি হয়ে যায় রেশম; মৌমাছি এটি খেলে, এটি হয়ে যায় মধু; যখন এই পাতা কোনো ভেড়া খায়, তখন এটি হয়ে যায় দুধ; আবার যখন কোনো হরিণ এটি খায়, তখন এটি হয়ে যায় মেশক বা সুগন্ধি। একজন স্রষ্টা ছাড়া এটা কীভাবে সম্ভব? এতটা বৈচিত্র্য কি আপনাআপনি হতে পারে?

এরপর তিনি সুরা মুমিনুনের আয়াত তিলাওয়াত করলেন, ‘নিপুণতম স্রষ্টা আল্লাহ, তিনি কতই না কল্যাণময়!’

অনুবাদ: সাজিদ আল মাহমুদ