কাবাঘরের চারদিকে এই সাত চক্করে পুরুষদের আরও একটি ভিন্ন কাজ করতে হবে, যেটাকে বলা হয় ‘রমল’—যার অর্থ হলো বীরদর্পে একটু জোরে হাঁটা বা হালকা দৌড়ানো। এটি পুরুষদের করতে হবে প্রথম তিন চক্করে, শেষের চার চক্করে এটি করতে হবে না; স্বাভাবিক গতিতে হাঁটলে হবে। আর নারীদের রমল নেই।
কিছু গুরুত্বপূর্ণ জিনিস মনে রাখবেন, তাওয়াফের সময় দুনিয়াবি কথা বলা যাবে না; এ সময়ের জন্য নির্দিষ্ট কোনো দোয়াও নেই। তবে আপনি যেকোনো সুরা পড়তে পারেন অথবা কোরআন তিলাওয়াত করতে পারেন, আবার কোনো কিছু না-ও পড়তে পারেন; সেটা আপনার ইচ্ছা। এ সময় দল বেঁধে অনেককে উচ্চ স্বরে বিভিন্ন দোয়া পড়তে দেখবেন, তাঁদের অনুসরণ করার দরকার নেই। কারণ, এ পদ্ধতি সুন্নাহসম্মত নয়।
যা হোক, তাওয়াফের সময় যদি নামাজের জামাত শুরু হয়ে যায়, তাহলে তাওয়াফ ভেঙে জামাতে নামাজ আদায় করুন। মনে রাখবেন, কতগুলো চক্কর আপনি সম্পন্ন করেছিলেন। জামাতের পর বাকি চক্করগুলো শেষ করুন। এবার আবারও দূর থেকে হাজরে আসওয়াদের দিকে মুখ করে দাঁড়ান, দুই হাত তুলুন; বলুন—‘আল্লাহু আকবার’ এবং আবার চক্কর শুরু করুন। চক্করের সংখ্যা ভুলে গেলে যেটা কম ও আপনি নিশ্চিত, সেখান থেকে শুরু করুন; চক্কর বেশি দেওয়া ভালো, কম নয়। উত্তম হচ্ছে রাতে, অর্থাৎ এশার নামাজের পর একটু দেরি করে তাওয়াফ করা। এতে নামাজে জামাতের ব্যাপারও থাকবে না, আর রাতে তাওয়াফের সময় আবহাওয়া অপেক্ষাকৃত ঠান্ডা থাকে।
তাওয়াফ শেষ! আলহামদুলিল্লাহ। এবার আপনার ডান ঘাড় কাপড় দিয়ে ঢেকে নিন আর মাকামে ইব্রাহিমের দিকে যান। এবার মাকামে ইব্রাহিমের পেছনে যেকোনো জায়গায় দাঁড়িয়ে দুই রাকাত সুন্নত নামাজ আদায় করুন। যদি ভিড়ের জন্য জায়গা না পান, তাহলে মসজিদের ভেতরে যেকোনো জায়গায় মাকামে ইব্রাহিমের পেছনে নামাজ আদায় করুন। তবে এই নামাজের সময় যেন জামাত করা না হয়, আলাদা আলাদাভাবে আদায় করুন। রাসুল (সা.) এই নামাজের প্রথম রাকাতে সুরা ফাতিহার পরে সুরা কাফিরুন ও দ্বিতীয় রাকাতে সুরা ফাতিহার পর সুরা ইখলাস পড়তেন। তাই আপনিও এভাবে নামাজ আদায় করুন।
‘কুল ইয়া আইয়ুহাল কাফিরুন। লা আবুদু মাতাবুদুন।
ওয়ালা আনতুম আবিদুনা মা আবুদ। ওয়ালা আনা আবিদুম মাআ বাদ্তুম।
ওয়ালা আনতুম আবিদুনা মা আবুদ। লাকুম দিনুকুম ওলিয়াদিন।’
‘কুল হুওয়াল্লাহু আহাদ। আল্লাহুস সামাদ। লাম ইয়ালিদ ওয়া লাম ইয়ুলাদ
ওয়ালাম ইয়া কুল্লাহু কুফুওয়ান আহাদ।’
দুই রাকাত সুন্নত নামাজ শেষ; এরপর আপনি সাফা পাহাড়ের দিকে রাখা জমজম পানির কনটেইনারের কাছে যান এবং মনভরে জমজমের পানি পান করুন। কনটেইনারের ওপর ‘নট কোল্ড’ বা ‘কোল্ড’ লেখা থাকবে, আর সঙ্গেই ডিসপোজেবল গ্লাসও থাকবে; আপনার ইচ্ছামতো যেটি ইচ্ছা সেটি পান করুন। তবে প্রচণ্ড গরমে ঠান্ডা জমজমের পানি পান করে অনেকেই অসুস্থ হয়ে যান, তাই ‘নট কোল্ড’ খাওয়াই ভালো। মনে রাখবেন, এটি দোয়া কবুলের সময়, তাই জমজমের পানি খাওয়ার সময় বিসমিল্লাহ বলুন; তারপর আল্লাহর কাছে প্রাণ খুলে দোয়া করুন।
জমজমের পানি দিয়ে মাথাও ধুয়ে নিতে পারেন। রাসুল (সা.) জমজমের পানি দাঁড়িয়ে পান করেছেন। মনে রাখবেন, অনেক গাইড বইয়ে জমজমের পানি খাওয়ার বিভিন্ন দোয়া ও প্রকার বর্ণনা করা হয়েছে, যা নতুন আবিষ্কার, কোরআন ও সুন্নাহসম্মত নয়। শুধু ‘বিসমিল্লাহ’ বলুন, জমজমের পানি পান করুন এবং মনে আছে যে দোয়া, সেগুলো করুন। পরবর্তী কাজ সাঈ।