জিজিয়া শব্দগত অর্থ সামরিক কর্তব্য থেকে অব্যাহতিজনিত কর। খিলাফতের আমলে এবং উসমানীয় সাম্রাজ্যে স্বীকৃত অমুসলিম একেশ্বরবাদীদের (জিম্মি) ওপর এই কর ধার্য করা হতো। মূলত আরবের কতিপয় খ্রিষ্টান ও ইহুদি গোত্র মহানবীকে এই কর প্রদান করত।
প্রাথমিক যুগের খলিফাদের আমলে বিজিত এলাকাগুলোর সব জিম্মি সম্প্রদায়কে এই শর্তে জিজিয়া প্রদান করতে হতো যে, তার বিনিময়ে রাষ্ট্র তাদের সব ধরনের নিরাপত্তা দেবে। অষ্টম শতকের শেষ ভাগে শাসনতান্ত্রিক ও আর্থিক ব্যবস্থার উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে জিজিয়ার সংজ্ঞা ও প্রকৃতিতেও কিছু পরিবর্তন ঘটে।
এ পর্যায়ে জিজিয়া বলতে সুনির্দিষ্টভাবে ভূমি-রাজস্ব খারাজ হতে সম্পূর্ণ আলাদা ‘মাথাপিছু কর’ বোঝাত এবং করদাতাদের অর্থনৈতিক অবস্থা অনুযায়ী এর হার নির্ধারিত হতো। মহিলা, শিশু, যাজক বা সন্ন্যাসী এবং দৈহিক ও মানসিকভাবে পঙ্গু ব্যক্তিরা এই কর থেকে অব্যাহতি পেত। উসমানীয় তুরস্কে ঊনবিংশ শতকের মধ্যভাগ পর্যন্ত জিজিয়া বলবৎ ছিল। মধ্যযুগে পৃথিবীর অন্যান্য মুসলিমশাসিত দেশেও অমুসলমানদের ওপর জিজিয়া কর ধার্য করা হয়।
মুসলমানদের বাধ্যতামূলকভাবে সামরিক বিভাগে যোগদান করতে হতো বলে তার পরিবর্তে অমুসলমানদের ওপর এই কর ধার্য করা হতো। সব ধর্মের নাগরিকদের সামরিক বাহিনীতে যোগদান করা বাধ্যতামূলক হওয়ার পর স্বাভাবিকভাবেই এই করেরও বিলুপ্তি ঘটে। ভারতে সম্রাট আকবর এই কর রহিত করেন, কিন্তু আওরঙ্গজেবের আমলে তা পুনঃপ্রবর্তিত হয়।
পবিত্র কোরআনের সুরা তওবা-র ২৯ আয়াতে বলা হয়েছে, ‘যাদের ওপর কিতাব অবতীর্ণ হয়েছে তাদের মধ্যে যারা আল্লাহয় বিশ্বাস করে না ও পরকালেও না এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসুল যা হারাম করেছেন তা যারা হারাম করে না ও সত্যধর্ম অনুসরণ করে না, তাদের সঙ্গে যুদ্ধ করবে যে পর্যন্ত না তারা বশ্যতা স্বীকার করে আনুগত্যের নিদর্শনস্বরূপ স্বেচ্ছায় জিজিয়া দেয়।’
সূত্র: `জিজিয়া' যার যা ধর্ম, মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান, প্রথমা প্রকাশন, ২০১৪