রোজার প্রতিটি মুহূর্তই দামি। রমজানের প্রতিটি মুহূর্তেই রহমত বর্ষিত হয়। এর মধ্যেও সবচেয়ে বেশি রহমত থাকে রমজানের শেষ ১০ দিনে। কারণ, ওই সময়ে রয়েছে শবে কদর। এই সময়ে বহু কিছু আমল করার আছে।
১. অল্প আমলেও এ সময় হাজার মাসের সওয়াবের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন আল্লাহ। এটা শবে কদরের মাধ্যমে সম্ভব। শেষ ১০ দিন আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করতে হবে। আত্মার পরিচর্যার দিকে জোর দিতে হবে।
২. সহিহ্ বুখারিতে আছে যে আয়েশা (রা.) বলেছেন, ‘শেষ ১০ দিন শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নবীজি (সা.) ইবাদতে ব্যস্ত থাকতেন এবং পরিবারের সদস্যদের ও সারা রাত জেগে ইবাদত করতে বলতেন।’
৩. পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে ইতিকাফ করা যায়।
৪. একটি হাদিসে আছে, রাসুল (সা.) রমজানে শেষ ১০ দিন এমনভাবে ইবাদতে ব্যস্ত থাকতেন, যা বছরের অন্য কোনো সময় থাকতেন না। শেষ ১০ দিন তিনি রাত জেগে নামাজ আদায় করতেন, জিকিরে ব্যস্ত থাকতেন, কোরআন তিলাওয়াত করতেন।
এই সুন্নত মনে রেখে ইবাদতে বৈচিত্র্য আনতে হবে। শরিয়তসম্মত যেকোনো আমল বেছে নেওয়া যায়। কেউ নামাজ, কেউ জিকির, কেউ কোরআন তিলাওয়াত পছন্দ করেন। নিজের পছন্দের ইবাদতগুলো বেছে নিয়ে সেসব বারবার আমল করা যায়।
৫. যাঁকে যত বেশি ভালোবাসেন, তাঁর সঙ্গে একান্তে সময় কাটাতে ততই পছন্দ করেন। তেমনি বান্দা যত বেশি তাঁর রবকে জানেন, তাঁর সঙ্গে একান্তে সময় কাটাতে ততই প্রশান্তি অনুভব করে, আনন্দিত হয়। ইতিকাফই সেই ইবাদত। এটি সবকিছু থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে আল্লাহর সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের সুবর্ণ সুযোগ এনে দেয়।
ইতিকাফে ব্যক্তি তাঁর পরিবার, ব্যবসা-বাণিজ্য—দুনিয়ার সবকিছু ছেড়ে আসে। তওবা, ইস্তিগফার, কিয়াম, কোরআন তিলাওয়াত, জিকিরে মশগুল থাকেন সর্বক্ষণ।
রোজার শেষ ১০ দিন প্রথম ২০ দিনের মতো নয়। আগামী রোজা আদৌ পাওয়া যাবে কি যাবে না, তা কারও জানা নেই। সে অনিশ্চয়তার কথা ভেবেই মনে করতে হবে, রমজানের শেষ ১০ দিন ইবাদতের জন্য জীবনের সেরা সময়।
নাজাতের ১০ দিনে করণীয়
রমজান মাসের শেষ ১০ দিন নাজাত বা মুক্তির। এ সময়ে করণীয় হলো দুনিয়ার সবকিছুর আকর্ষণ ও মোহ থেকে মুক্ত হয়ে আল্লাহর প্রেমে বিভোর হওয়া।
আল্লাহর স্বনির্ভরতা, মুক্ততা ও নিরপেক্ষতা-সংক্রান্ত নামগুলো জেনে মুখস্থ করা। নামের বৈশিষ্ট্য জেনে আত্মস্থ করার চেষ্টা করতে হবে।
আল্লাহর স্বনির্ভরতা ও মুক্ততাসুলভ নামগুলো হলো:
আল আহাদু (একক), আল ওয়াহিদু (এক), আস সামাদু (স্বনির্ভর, অমুখাপেক্ষী), আল আদলু (ন্যায়ানুগ), আল হাক্কু (সত্য), আল কাবিউ (সুদৃঢ়), আল মাতিনু (শক্তিমান), আল কাদিরু (ক্ষমতাবান), আন নুরু (জ্যোতির অধিকারী, আলোক দানকারী), আর রশিদু (দিব্যজ্ঞানী), আল জামিলু (সুন্দর), আল বাররু (সৎকর্মশীল), আল মুহসিনু (সুকর্তা) ইত্যাদি। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘দুনিয়ার আকর্ষণ সব পাপের মূল।’ (বুখারি, মুসলিম ও তিরমিজি)