ইসলামের অন্যতম শত্রু আবু জাহেল। তার বাবার নাম হিশাম ইবনুল মুগীরা। হিশাম ছিল পৌত্তলিক। রাসুলুল্লাহ (সা.)–এর নবুয়াত লাভের আগেই হিশাম ইন্তেকাল করে।
আসমা বিনতে মুখাররাবার প্রথম বিয়ে হয় হিশাম ইবনে মুগীরার সঙ্গে। এই স্বামীর ঘরে তাঁর দুটি ছেলে জন্ম নেয়। একজন আবু জাহেল, আরেকজন আল-হারিস। (তাবাকাত ইবনে সাদ: ৮/২০৯)
আসমার দুই ছেলের একজন ছিল ইসলামের অন্যতম শত্রু আবু জাহেল, রাসুলুল্লাহ তাকে ‘আমার উম্মতের ফেরাউন’ বলে উল্লেখ করেছেন। (মুসনাদে আহমাদ: ৬/৩৭৫)
তাঁর আরেক ছেলে আল-হারিস ইবনে হিশাম ছিলেন রাসুলের সাহাবি। তবে প্রথম দিকে তিনিও তাঁর ভাইয়ের মতো ইসলামের বিরোধিতা করেন। বদর ও উহুদ যুদ্ধে মহানবী (সা.)–এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেন। মক্কা বিজয়ের পর হারিস ইবনে হিশাম ইসলাম গ্রহণ করে সাহাবি হওয়ার মর্যাদা লাভ করেন। এর পর ইন্তেকালের আগ পর্যন্ত প্রায় সবগুলো যুদ্ধে ইসলামের পক্ষে অংশ নেন। (তারীখ আত-তাবারী: ১১/৯৭)
আসমার প্রথম স্বামী হিশাম ইবনে মুগীরা ইন্তেকাল করলে দেবর আবু রাবীয়া ইবনুল মুগীরার সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। (তাবাকাত ইবনে সাদ: ৮/২০৯)
সেকালে আরবে ভাইয়ের ইন্তেকালের পর বিধবা ভাবিকে বিয়ের প্রচলন ছিল। আসমা বিনতে মুখাররাবা (রা.) ইসলাম গ্রহণ করে রাসুলের সাহাবি হওয়ার মর্যাদা লাভ করেন। অথচ তাঁর গর্ভজাত ছেলে ছিল ইসলামের সবচেয়ে বড় শত্রু! তিনি ইসলাম গ্রহণ করে তাঁর ছেলের সঙ্গে না থেকে হিজরত করে মদিনায় চলে যান। (তাবাকাত ইবনে সাদ: ৮/২০৯)
ইসলাম গ্রহণ করার কারণে আবু জাহেল অন্য সাহাবিদের ওপর নির্যাতন করত। কিন্তু সে তার মাকে নির্যাতন করেছে বলে জানা যায় না।
দ্বিতীয় বিয়েতে আসমা (রা.)–র গর্ভে দুই ছেলে এবং এক মেয়ে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁরা হলেন আইয়্যাশ ইবনে আবি রাবীয়া (রা.), আবদুল্লাহ (রা.), উম্মে হুজাইর। (তাবাকাত ইবনে সাদ: ৮/২০৯)
আসমা বিনতে মুখাররাবা (রা.) মদিনায় বসবাস করেন। তাঁর এক ছেলে আবদুল্লাহ থাকতেন ইয়েমেনে। তিনি ইয়েমেন থেকে মায়ের জন্য আতর পাঠাতেন। আসমা সেই আতর ঘরে থাকাকালে নিজে ব্যবহার করতেন। কিছু আতর বিক্রি করতেন। মদিনার নারীদের কাছে তাঁর আতর প্রসিদ্ধ ছিল। তখনকার যুগে সবচেয়ে ভালো আতর আসত ইয়েমেন থেকে। সে জন্য মদিনার নারীরা ভালো আতর কেনার জন্য আসমা (রা.)–র বাসায় যেতেন। (তাবাকাত ইবনে সাদ: ৮/২০৯)
আসমা ছিলেন একদিকে ইসলামের ইতিহাসে সবচেয়ে কুখ্যাত ব্যক্তি আবু জাহেলের মা, আরেকদিকে সাহাবি আইয়্যাশ ইবনে আবী রাবীয়া, হারিস ইবনে হিশাম (রা.)–রও মা।
আবু জাহেল সারা জীবন ইসলামের বিরোধিতা করে গেল, এমনকি সাহাবিদের বিরুদ্ধে বদর যুদ্ধ করতে গিয়ে মৃত্যুবরণও করল; অথচ তার মা আসমা, ছেলে ইকরিমা, মেয়ে জুয়াইরিয়া ও আল-হুনফাসহ পরিবারের কয়েকজন ইসলাম গ্রহণ করেন।
আবু জাহেল চেয়েছিল দুনিয়া থেকে ইসলামের আলো নিভিয়ে দিতে। কিন্তু তার ঘরে ইসলামের আলো জ্বলে ওঠে।
সূত্র: ১০০ নারী সাহাবির জীবনী, আরিফুল ইসলাম, ইলহাম প্রকাশনী