ইস্তিগফার প্রসঙ্গে কোরআনে আছে

ইস্তিগফার মানে ক্ষমা প্রার্থনা করা। আল্লাহর একটি নাম গফুর, মানে ক্ষমাশীল। গফফার মানে সর্বাধিক ক্ষমাকারী।

ইস্তিগফার একটি স্বতন্ত্র ইবাদত। কোনো পাপ মাফ করার জন্য এ ইবাদত করা হয় না যেমন নামাজ, রোজা, হজ ইত্যাদি ইবাদত আছে, যাতে গুনাহ মাফ হয়। তওবা ও ইস্তিগফার আল্লাহর পছন্দের একটি ইবাদত।

ইস্তিগফার পড়ার সময় মুমিনের মনে হবে, আল্লাহ, আপনার ইবাদতের (নামাজের) হক আদায় হয়নি। 

কোরআনে ইস্তিগফারের কথা

কোরআনের বহু আয়াতে আল্লাহ বান্দাকে ইস্তিগফার করার নির্দেশ দিয়েছেন। যারা সে নির্দেশ মেনে ইস্তিগফারের আমলের জন্য নিজেদের নিয়োগ করেছে, তারাই মুস্তাজাবুদ দাওয়ায় (যার দোয়া কবুল হয়) পরিণত হয়েছে। তারা আল্লাহর কাছে কোনো জিনিস চাইলে মহান আল্লাহ তা বান্দাকে দিয়ে দেন।

ইস্তিগফার প্রসঙ্গে কোরআনে আছে:

১. ‘তখন তুমি তোমার রবের সপ্রশংস তসবি পাঠ করো এবং তাঁর কাছে ক্ষমা চাও; নিশ্চয়ই তিনি তওবা কবুলকারী।’ (সুরা নসর, আয়াত: ৩)

২. ‘আর তুমি আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাও; নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু।’ (সুরা নিসা, আয়াত: ১০৬)

৩. ‘আর তুমি ক্ষমা চাও তোমার ও মুমিন নর-নারীর ত্রুটিবিচ্যুতির জন্য।’ (সুরা মুহাম্মদ, আয়াত: ১৯)

৪. ‘সুতরাং বলেছি, তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের কাছে ইস্তিগফার তথা ক্ষমা প্রার্থনা করো; নিশ্চয়ই তিনি মহাক্ষমাশীল। (ইস্তিগফার করলে) তিনি তোমাদের জন্য প্রচুর বৃষ্টিপাত ঝরাবেন। তিনি তোমাদের ধনসম্পদ ও সন্তান-সন্তুষ্টিতে পূর্ণ করবেন এবং তোমাদের জন্য স্থাপন করবেন জান্নাত তথা বহু বাগান ও প্রবাহিত করবেন নদ-নদী।’ (সুরা নুহ, আয়াত: ১০-১২)

৫. ‘আর যে ব্যক্তি মন্দকাজ করবে কিংবা নিজের প্রতি জুলুম করবে, তারপর আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইবে; সে আল্লাহকে পাবে ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু।’ (সুরা নিসা, আয়াত: ১১০)

৬. ‘হে আমার কওম, তোমরা তোমাদের রবের কাছে ক্ষমা চাও; এরপর তার কাছে তওবা করো, তাহলে তিনি তোমাদের ওপর মুষলধারে বৃষ্টি পাঠাবেন এবং তোমাদের শক্তির সঙ্গে আরও শক্তি বৃদ্ধি করবেন। আর তোমরা অপরাধী হয়ে বিমুখ হয়ো না।’ (সুরা হুদ, আয়াত: ৫২)

৭. ‘আর আল্লাহ এমন নন যে তাদের আজাব দেবেন এ অবস্থায় যে তুমি তাদের মাঝে বিদ্যমান এবং আল্লাহ তাদেরকে আজাব দানকারী নন এমতাবস্থায় যে তারা ক্ষমা প্রার্থনা করছে।’ (সুরা আনফাল, আয়াত: ৩৩)

৮. ‘আর তোমরা তোমাদের রবের কাছে ক্ষমা চাও। তারপর তার কাছে ফিরে যাও, (তাহলে) তিনি তোমাদেরকে নির্ধারিত সময় পর্যন্ত উত্তম ভোগ-উপকরণ দেবেন এবং প্রত্যেক আনুগত্যশীলকে তার আনুগত্য মোতাবেক দান করবেন। আর যদি তারা ফিরে যায়, তবে আমি নিশ্চয়ই তোমাদের ওপর বড় একদিনের আজাবের ভয় করছি।’ (সুরা হুদ, আয়াত: ৩)

নবী (সা.) প্রতিদিন ইস্তিগফার করতেন। হাদিসের অনেক বর্ণনাতেও ইস্তিগফারের কথা এসেছে:

১. হজরত উমর (রা.) বলেছেন, ‘আমরা এক মজলিশে গণনা করতাম। রাসুলুল্লাহ (সা.) একশবার বলতেন, ‘রাব্বিগফিরলি, ওয়া তুব আলাইয়্যা; ইন্নাকা আংতাত তাউয়্যাবুর রাহিম।’ অর্থাৎ, হে আমার রব! তুমি আমাকে ক্ষমা করো এবং আমার তওবা কবুল করো; নিশ্চয় তুমি তওবা কবুলকারী ও দয়াশীল।’ (তিরমিজি, আবু দাউদ)

২. রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘সেই সত্তার শপথ, যাঁর হাতে আমার জীবন। যদি তোমরা গুনাহ না করো, তবে আল্লাহ তোমাদের নিয়ে যাবেন; এমন এক সম্প্রদায় নিয়ে আসবেন; যারা গুনাহ করবে এবং আল্লাহর কাছে তওবা করবে। এর পর আল্লাহ–তাআলা তাকে ক্ষমা করে দেবেন।’ (মুসলিম)

৩. হজরত আলী (রা.)–কে একজন এমন এক ব্যক্তি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেছিল, যে গুনাহ করে তওবা করে; আবার গুনাহ করে। আবার তওবা করে আবার গুনাহ করে। আবার গুনাহের কাজে মশগুল হয় এবং আবার তওবা-ইস্তিগফার করে। এমন করতে থাকা ব্যক্তির কী অবস্থা হবে? হজরত আলী (রা.) বলেছেন, তার কর্তব্য হলো সব সময় তওবা-ইস্তিগফার করতে থাকা। কেননা তওবা-ইস্তিগফার অব্যাহত থাকলে শয়তান ব্যর্থ হয়ে যাবে। শয়তান বলবে, এ ব্যক্তিকে গুনাহর কাজে সর্বদা মশগুল রাখতে আমি অক্ষম।

৪. হজরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) বর্ণনা করেছেন যে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের কাছে তওবা করতে থাক। কেননা আমি নিজে দিনে একশবার তওবা করি।’

৫. হজরত আবু আইয়ুব (রা.) বলেছেন, আমি নবীজি (সা.)–এর কাছে এ কথা শুনেছি যা তোমাদের কাছ থেকে গোপন রেখেছিলাম; তিনি বলেছেন, যদি তোমরা গুনাহ করে আল্লাহ–তাআলার মহান দরবারে তওবা-ইস্তিগফার না করতে, তবে আল্লাহ–তাআলা এমন এক মাখলুক সৃষ্টি করতেন, যারা গুনাহ করে আল্লাহ তাআলার দরবারে তওবা করত, তখন আল্লাহ তাদেরকে ক্ষমা করতেন। (মুসলিম)

৬. নবী (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি নিয়মিত ইস্তিগফার (তওবা) করবে, আল্লাহ ওই বান্দাকে তার সব সংকট থেকে উত্তরণের পথ বের করে দেবেন, সব দুশ্চিন্তা মিটিয়ে দেবেন এবং অকল্পনীয় উৎস থেকে তার রিজিকের ব্যবস্থা করে দেবেন।’ (আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ)