হজরত আবদুর রহমান ইবনে আউফ (রা.) যখন মক্কায় যেতেন, তাঁর আগে বাড়িঘরের দিকে ফিরেও তাকাতেন না। লোকেরা জিজ্ঞেস করলেন, ‘আপনার বাড়িঘরের প্রতি আপনি এত নাখোশ কেন?’ উত্তরে তিনি বললেন, ‘ওইগুলো তো আমি আমার আল্লাহর জন্য ছেড়ে দিয়েছি।’ হজরত আবদুর রহমান ইবনে আউফ (রা.) ছিলেন তাকওয়াবান।
আল্লাহর পথে দানের ক্ষেত্রে আবদুর রহমান ইবনে আউফ (রা.) ছিলেন অনন্য। সম্পূর্ণ খালি হাতে তিনি মদিনায় এসেছিলেন। মদিনায় আসার দ্বিতীয় দিন থেকেই তিনি কায়নুকার বাজারে ঘি আর পনির দিয়ে ব্যবসা শুরু করেন। কালক্রমে তিনি একজন সেরা ব্যবসায়ী হয়ে ওঠেন। হজরত উসমান (রা.)–এর পর সাহাবিদের মধ্যে তিনিই ছিলেন সবচেয়ে ধনী। অথচ সম্পদের প্রতি তাঁর লোভ ছিল না। আল্লাহর পথে ও মানবকল্যাণে অকৃপণ হাতে সম্পদ ব্যয় করতেই তিনি আনন্দ পেতেন।
নবম হিজরিতে তাবুক অভিযানের প্রাক্কালে সংকটময় পরিস্থিতিতে আবদুর রহমান ইবনে আউফ (রা.) আট হাজার দিনার রাসুল (সা.)–এর হাতে তুলে দেন। মক্কা বিজয়ের সময় তিনি রাসুলুল্লাহর (সা.) সঙ্গেই প্রিয় মাতৃভূমিতে বিজয়ীর বেশে প্রবেশ করেন।
হজরত আবু বকর (রা.)–এর খিলাফতকালে যে আটজন বিশিষ্ট সাহাবিকে ফতোয়া ও বিচারের দায়িত্ব দেওয়া হয়, তাঁদের মধ্যে আবদুর রহমান (রা.)–ও ছিলেন। হজরত ওমর (রা.) তাঁর মৃত্যুর আগে খিলাফতের আমির হওয়ার মতো যোগ্য ছয়জন সাহাবির নাম বলে গিয়েছিলেন। আবদুর রহমান ইবনে আউফ (রা.) ছিলেন তাঁদের একজন।
হজরত ওমর (রা.) তাঁর খিলাফতকালে এক বক্তৃতায় বলেন, যাঁরা ফিকাহ সম্পর্কে জানতে চান, তাঁরা যেন আবদুর রহমান ইবনে আউফের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলে।
হজরত ওমর (রা.)–এর ইন্তেকালের পর আবদুর রহমান (রা.) খলিফা হতে রাজি ছিলেন না। তবে তিনি খলিফা নির্বাচনের দায়িত্ব পালন করেছিলেন। ওমর (রা.)–এর মৃত্যুর পরপরই তিনি অত্যন্ত নিষ্ঠা ও আমানতদারীর সঙ্গে ক্রমাগত তিন দিন তিন রাত মতবিনিময় করেন। অধিকাংশ মানুষ হজরত উসমান (রা.)–এর পক্ষে মত দিলে তিনি সবার সামনে খলিফা হিসেবে তাঁর নাম ঘোষণা করেন।
খলিফা হিসেবে হজরত উসমান (রা.)–এর নাম ঘোষিত না হওয়া পর্যন্ত আবদুর রহমান (রা.) মসজিদে নববির ইমামতি ও প্রশাসনের যাবতীয় দায়িত্ব পালন করেন। হজরত উসমান (রা.)–এর শাসনামলে তাঁর মৃত্যু হয়।