কারও বাড়ি বা ঘরে প্রবেশ করার আগে অবশ্যই মৌখিকভাবে অনুমতি নিতে হবে বা দরজায় কড়া নেড়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করতে হবে। নইলে উভয়ের জন্যই তা হবে বিব্রতকর।
পবিত্র কোরআনে আল্লাহ কারও ঘরে প্রবেশ করার ক্ষেত্রে কিছু নিয়মকানুন মেনে চলার নির্দেশ দিয়েছেন। আল্লাহ বলেছেন, ‘হে বিশ্বাসীগণ, তোমরা নিজেদের বাড়ি ছাড়া অন্য কারও বাড়িতে বাসিন্দাদের অনুমতি না নিয়ে ও তাদের সালাম না দিয়ে প্রবেশ করো না। এই তোমাদের জন্য শ্রেয়, যাতে তোমরা সাবধান হও। যদি তোমরা বাড়িতে কাউকে না পাও, তাহলে তোমাদের যতক্ষণ না অনুমতি দেওয়া হয়, তোমরা সেখানে প্রবেশ করবে না, যদি তোমাদের বলা হয় “ফিরে যাও”, তবে তোমরা ফিরে যাবে। এই তোমাদের জন্য ভালো। আর তোমরা যা করো, সে সম্বন্ধে আল্লাহ ভালো করেই জানেন।’ (সুরা নুর, আয়াত: ২৭-২৮)
‘মুয়াত্তায়ে মালিক’ গ্রন্থে এসেছে, এক সাহাবি রাসুল (সা.)–এর কাছে প্রশ্ন করেন, ‘আমি কি মায়ের ঘরে প্রবেশ করার আগেও অনুমতি চাইব?’ নবীজি (সা.) বলেন, ‘হ্যাঁ, অবশ্যই।’ তিনি বললেন, ‘আমরা দুজন একই বাড়িতে থাকি।’ রাসুল (সা.) বললেন, ‘তারপরও অনুমতি চাইবে।’ সাহাবি বললেন, ‘কিন্তু আমি তো তাঁর সেবাও করি।’ রাসুল (সা.) আবার বললেন, ‘তুমি কি তোমার মাকে বিব্রতকর কোনো অবস্থায় দেখা পছন্দ করবে?’ এবার তিনি বললেন, ‘না, তা কখনোই করব না।’ তখন রাসুল (সা.) বললেন, ‘তাহলে তার ঘরে প্রবেশ করার আগে অবশ্যই অনুমতি চাইবে।’ (মুয়াত্তা: ১৭৩৮)
সব সময় পরিধেয় বস্ত্র যে ঠিকঠাক থাকবে, এমন কথা নিশ্চিত করে বলা যায় না। তাই ঘরে প্রবেশ করার আগে অনুমতি গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
সাহাবি তালহা ইবনে উবায়দুল্লাহ (রা.)-এর সন্তান মুসা বলেন, ‘আমার বাবা একবার আমার মায়ের ঘরে প্রবেশ করলেন। আমিও তাঁর সঙ্গে সেই ঘরে প্রবেশ করলাম। আমার বাবা আমাকে থামিয়ে দিলেন এবং জোর করে বসিয়ে দিলেন। তারপর বললেন, “তুমি তোমার মায়ের ঘরে অনুমতি না নিয়ে কীভাবে প্রবেশ করতে পারলে?”’
আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা.)-এর ছাত্র নাফি বলেন, ইবনে উমর (রা.)-এর কোনো ছেলে সাবালক হলে তার ঘর আলাদা করে দেওয়া হতো। ইবনে উমর (রা.) তাঁর কোনো সন্তানকেই অনুমতি ছাড়া ঘরে প্রবেশ করতে দিতেন না।
তাবেয়ি আতা ইবনে আবি রাবাহ বর্ণনা করেন। তিনি একবার আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.)-কে প্রশ্ন করলেন, ‘আমি যখন আমার দুই বোনকে দেখতে যাব, তখনো কি অনুমতি চাইব?’ ইবনে আব্বাস (রা.) বললেন, ‘অবশ্যই।’ আতা ইবনে আবি রাবাহ বললেন, ‘কিন্তু আমি তো তাদের অভিভাবক। তাদের যাবতীয় ভরণপোষণের দায়িত্বও আমার।’ ইবনে আব্বাস (রা.) এবার বললেন, ‘তুমি কি তাদের কোনো বিব্রতকর অবস্থায় দেখা ভালো মনে করো?’ তারপর তিনি কোরআনের সেই আয়াতটি পড়লেন, ‘আর তোমাদের সন্তানসন্ততি বয়ঃপ্রাপ্ত হলে, তাদের বয়োজ্যেষ্ঠদের অনুমতি চায়। এভাবে আল্লাহ তোমাদের তাঁর নির্দেশ স্পষ্টভাবে বয়ান করেন। আল্লাহ সর্বজ্ঞ, তত্ত্বজ্ঞানী।’ (সুরা নূর: ৫৯)
এমনকি নিজের স্ত্রীর ঘরে প্রবেশের সময়ও স্বামীর অনুমতি নেওয়া প্রয়োজন। তা না হলে, এমন কোনো দৃশ্য স্বামীর চোখে পড়তে পারে, যা হয়তো তার ভালো লাগবে না। কিংবা এমন কোনো পরিস্থিতিতে তিনি স্ত্রীকে দেখে ফেলতে পারেন, যেভাবে হয়তো স্ত্রী নিজেকে উপস্থাপন করতে চাননি।
আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.)-এর স্ত্রী জয়নাব (রা.) বলেন, ‘যখনই আমার স্বামী ইবনে মাসউদ ঘরের দরজার কাছে আসতেন, তিনি একটু শব্দ করতেন। তিনি আমাদের বিস্মিত করতে ভয় পেতেন এবং বিব্রতকর কোনো পরিস্থিতি এড়িয়ে চলার সর্বোচ্চ চেষ্টা করতেন।’ সূত্র: তাফসিরে তাবারি ও তাফসিরে ইবনে কাসির।
ইমাম আহমাদ (রহ.) বলেন, যখন কোনো স্বামী তার স্ত্রীর ঘরে প্রবেশ করতে চাইবে, তার উচিত অন্তত কাশি দিয়ে একটু শব্দ করা। আবার এমনও হতে পারে, স্বামী একটু শব্দ করে নিজের জুতা সরাতে পারেন, তাহলে স্ত্রী হয়তো নিজেকে গুছিয়ে নেওয়ার জন্য একটু সময় পাবেন।