জীবনে কঠিন মুহূর্ত এসে পড়লে কী করা উচিত

মাঝেমধ্যে আমাদের জীবনে খুবই কঠিন সময় আসে। কিছু ক্ষেত্রে আল্লাহ তাআলা তাঁর বান্দাদের কঠিন অবস্থায় ফেলেন, যাতে সে ফিরে আসে। অনেক মানুষ এই সময়টা কাজে লাগাতে জানে না। জীবনের কঠিন মুহূর্তগুলো আল্লাহর দিকে ফেরার আদর্শ সময়।

আজকের ঘটনা একজন তাবেয়িকে নিয়ে। তাঁর নাম ওয়াহাব ইবনে মুহাব্বিহ (রহ.)। তিনি ছিলেন বিখ্যাত সাহাবি ইবনে আব্বাস (রা.)–এর একজন ছাত্র।

ওয়াহাব (রহ.)–কে জীবনে বহুবার খুবই কঠিন পরিস্থিতিতে পড়তে হয়েছিল। শাসকদের বিরুদ্ধে কথা বলায় তাঁকে একাধিকবার জেলে ঢুকতে হয়েছিল।

একবার তাঁকে আরবের একটি জেলখানায় বন্দী করা হলো। জেলখানার বাসিন্দাদের হাতে স্বাভাবিকভাবেই অফুরন্ত সময় থাকে। কয়েদিরা নানা ধরনের কাজ করে এই সময় পার করে দিতে চায়। ওয়াহাব (রহ.)–এর সঙ্গে থাকা এক কয়েদি বলল, ‘হুজুর, আপনার কি গান পছন্দ? অথবা আমি কবিতাও আবৃতি করতে জানি। চলুন, একসঙ্গে আনন্দ করি, সময় কেটে যাবে।’

ওয়াহাব ইবনে মুহাব্বির (রহ.) ঠান্ডা মাথায় জবাব দিলেন, ‘এ মুহূর্তে আমরা কঠিন অবস্থায় আছি। হতে পারে আল্লাহ তাআলা কোনো কারণে আমাদের শাস্তি দিচ্ছেন। এখন আনন্দ করা উচিত হবে না।’ এই বলে তিনি সুরা মুমিনের ৭৬ নম্বর আয়াত পাঠ করতে লাগলেন, ‘আমি তাদের শাস্তি দিয়ে পাকড়াও করেছিলাম, কিন্তু তারা তাদের পালনকর্তার সামনে নত হলো না এবং মিনতিও করল না।’

ওয়াহাব (রহ.) এরপর জেলখানার ভেতর রোজা রাখতে শুরু করলেন। তিনি টানা তিন দিন রোজা রাখতেন। নিজে থেকে বেশি বেশি ইবাদত করতেন।

কয়েদিরা বলত, ‘আপনি এমনিতেই কঠিন পরিবেশে আছেন, এখন আবার রোজা রাখার দরকার কী?’

ওয়াহাব ইবনে মুনাব্বিহ (রহ.) বললেন, ‘আল্লাহ আমাদের কঠিন পরিবেশে রেখে যেমনটা চেয়েছিলেন আমরা তেমনটাই থাকছি। পাশাপাশি তাঁর ইবাদত করা বাড়িয়ে দিয়েছি।’

আমাদের জীবনে যখন কঠিন সময় আসে, তখন হাল ছেড়ে দিই। অনেকে আল্লাহর কাছে না এসে বরং আরও দূরে সরে যায়। অথচ আমাদের ধর্মীয় পূর্বপুরুষেরা কঠিন সময়ে আরও বেশি আল্লাহর ইবাদত করতেন। আল্লাহকে মনের কথাগুলো বলতেন। তাঁরা ঠিকই জানতেন, সহজ সময়ের ইবাদতের চেয়ে আল্লাহর কাছে কঠিন সময়ের ইবাদতের মূল্য বেশি।

নবীদের জীবনেও একই ধরনের চিত্র দেখা যায়। আমাদের পিতা আদম (আ.) বেহেশত থেকে দুনিয়ায় এসে আল্লাহর ইবাদত কমিয়ে দেননি। হজরত ইউনুস (আ.) মাছের পেটে থেকে আল্লাহর ইবাদত করেছিলেন। হজরত ইউসুফ (আ.) বিনা অপরাধে জেলখানায় গিয়েও দাওয়াতের কাজ অব্যাহত রেখেছিলেন। তিনি কয়েদিদের কাছে আল্লাহর প্রশংসা করে বলেছিলেন, ‘আমাদের জন্য শোভনীয় নয় আল্লাহর সঙ্গে ইবাদতের ক্ষেত্রে কাউকে শরিক করা। এটা মানবজাতির জন্য একটি বড় রহমত। কিন্তু অধিকাংশ মানুষ কৃতজ্ঞতা স্বীকার করে না।’

জীবনের কঠিন সময়গুলো একেকটা সুবর্ণ সুযোগ, যেটা সবাই গ্রহণ করতে জানে না। কঠিন সময়ের ইবাদতগুলো মানুষকে আল্লাহর কাছাকাছি নিয়ে যায়।

অনুবাদ: সাজিদ আল মাহমুদ