আল্লাহকে নিয়ে আলাপ

‘সৃষ্টিকর্তা কি আসলেই আছেন?’ বিশেষ করে যাঁরা তরুণ ও ইসলাম নিয়ে ভাবতে শুরু করেছেন, তাঁদের অনেকের মনে এ ধরনের প্রশ্ন আসাটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। এখন প্রশ্ন হলো, কেউ যদি এ ধরনের চিন্তা মাথায় আনে, তাহলে সে গুনাহগার হবে?

মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) একবার এক সভায় বসা ছিলেন। সেখানে তাঁর কিছু সাহাবি আল্লাহর মাহাত্ম্য, আল্লাহর এই সুন্দর সৃষ্টির কথা বর্ণনা করছিলেন। হঠাৎ একজন বলে উঠলেন, ‘কিন্তু আল্লাহকে কে সৃষ্টি করেছে?’ হাদিসটি সহিহ মুসলিমে আছে।

আরও একটি হাদিসে একই ধরনের বর্ণনা পাওয়া যায়। মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন, ‘মানুষ যখন আল্লাহকে নিয়ে চিন্তা করে, তখন শয়তান এসে মানুষের মাথায় প্রশ্ন ছুড়ে দেয়, আল্লাহ সবকিছু সৃষ্টি করেছেন কিন্তু আল্লাহকে কে সৃষ্টি করেছে?’

দুটি হাদিসের ক্ষেত্রেই মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) আমাদের উপদেশ দিয়েছেন—এই ধরনের কোনো চিন্তা এলে বলবে ‘আমানতু বিল্লাহ’, অর্থাৎ আমি আল্লাহর ওপর বিশ্বাস করি। এটা বলার মাধ্যমে তুমি শয়তান পরাজিত করবে এবং মূল বিশ্বাসে ফিরে আসবে।

কিন্তু কারও মনে যদি এ ধরনের চিন্তা বারবার আসতে থাকে, তাহলে কি সে গুনাহগার হবে?

একদমই না।

হজরত আবদুলাহ ইবনে আব্বাস (রা.) ও আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস (রা.) একবার কোনো এক বিষয়ে আলোচনা করছিলেন। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) জিজ্ঞাসা করলেন, ‘পুরো কোরআনের ভেতর কোন আয়াতটি মানুষের জন্য প্রশান্তিদায়ক বলে তুমি মনে করো?’ আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) তখন সুরা জুমারের ৩৯ নম্বর আয়াত পাঠ করে শোনালেন, ‘বলো, হে আমার বান্দাগণ, যারা নিজেদের ওপর বাড়াবাড়ি করেছ, তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। অবশ্যই আল্লাহ সব পাপ ক্ষমা করে দেবেন। নিশ্চয় তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’

আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) মাঝেমধ্যে খুবই হতাশায় ভুগতেন। তখন এ আয়াতটি তাঁকে প্রশান্তি দিত।

এবার আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) জিজ্ঞাসা করলেন, ‘হে আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস, আপনার পছন্দের আয়াত কোনটি?’ তখন ইবনে আব্বাস (রা.) তেলাওয়াত করলেন, যখন ইবরাহিম বলেছিল, ‘হে আমার প্রতিপালক! আপনি মৃতকে কীভাবে জীবিত করবেন, তা আমাকে দেখান।’ আল্লাহ বললেন, ‘তুমি কি বিশ্বাস করো না?’ ইবরাহিম বলল, ‘নিশ্চয়ই, তবে যাতে আমার অন্তর স্বস্তি লাভ করে (এ জন্য তা দেখতে চাই)।’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ২৬০)

এর আগে ইবরাহিম (আ.)–এর সঙ্গে বাদশা নমরুদের সাক্ষাৎ হয়েছিল। নমরুদকে তিনি বলেছিলেন, ‘আমার স্রষ্টা হলেন আল্লাহ, যিনি জীবন দিতে পারেন আবার নিতেও পারেন।’ নমরুদ বলে উঠল, ‘এটা তো আমিও পারি।’ এরপর সে জেল থেকে একজন মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিকে মুক্ত করে দিল এবং আরেকজন নিরপরাধ কয়েদিকে মৃত্যুদণ্ড দিল। ইবরাহিম (আ.) বুঝলেন নমরুদ আসলে মাথামোটা। এরপর তিনি বললেন, ‘আমার স্রষ্টা আল্লাহ, তিনি সূর্যকে পূর্ব থেকে উদিত করে পশ্চিম দিক থেকে অস্ত নেন।’ এ কথা শুনে নমরুদ বোকা বনে গিয়েছিল। অর্থাৎ ইবরাহিম (আ.) পরিপূর্ণ ইমান নিয়ে কথা বলেছিলেন। কিন্তু এরপরও তিনি অন্তরের প্রশান্তির জন্য আল্লাহর কাছে অলৌকিকত্ব দেখতে চাইলেন।

আল্লাহ তাঁর বান্দার এই আকুতি রেখেছিলেন। আল্লাহ তাআলা ইবরাহিম (আ.)–কে একটি পাখি টুকরা টুকরা করে কেটে তা পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে রেখে আসতে বললেন। একটু পর সেই টুকরাগুলো জোড়া লেগে ইবরাহিম (আ.)–এর চোখের সামনে পাখিটি জীবিত হয়ে উড়ে গেল।

হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) এই আয়াতটির কথাই বলছিলেন। ইবরাহিম (আ.) একজন নবী হয়েও অন্তরের প্রশান্তি কামনা করছিলেন, যা প্রমাণ করে আমাদের অন্তরে এ ধরনের প্রশ্ন আসাটা স্বাভাবিক। তার জন্য আল্লাহ আমাদের শাস্তি দেবেন না। যেমন এক হাদিসে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহ তাআলা আমার উম্মতের ওই কথাগুলো ক্ষমা করে দেবেন, যা সে নিজের সঙ্গে বলেছে এবং যতক্ষণ না সে এই কথাগুলো কাজে রূপান্তর করে।’