মহানবী (সা.)-এর শক্তিমত্তা

মহানবী (সা.)-এর মনোবল কোন উচ্চতর সীমা স্পর্শ করেছিল, সীরাত পাঠ করলে সেটা জানা যায়। তার তুল্য কর্মশক্তির অধিকারী মানুষ সেকালেও ছিল বিরল। শারীরিক শক্তি, প্রত্যয়ের শক্তি, সঙ্কটকালে ধৈর্যের শক্তি, লাগাতার রোযা রাখার শক্তি, নামাজে আল্লাহর সামনে দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকার শক্তি, কঠিন পরিস্থিতি মোকাবেলার শক্তি—এমনকি এই শক্তির প্রাচুর্য ও নবীনত্ব বহাল ছিল বয়সে প্রবীণ হওয়ার পরেও। তাঁর শক্তির উদাহরণ অগুণতি। আমরা কয়েকটি দৃষ্টান্ত উল্লেখ করছি।

খন্দকের যুদ্ধের সময়কার ঘটনা স্মরণ করুন। মুসলমানেরা তীব্র ঠাণ্ডা উপেক্ষা করে ভোরবেলায় পরিখা খনন করছেন। এক সময় তারা একটি বিরাটকায় ভারি পাথরের মুখোমুখি হলেন। সবাই মিলে সব চেষ্টা করেও পাথরটি সরাতে পারলেন না। অগত্যা নবীজি(সা.)কে বিষয়টি জানালেন। তিনি বললেন, আমি নেমে দেখছি। তিনি যখন নামার জন্য উঠে দাঁড়ালেন, তাঁর পেটে তখন পাথর বাঁধা। তিনদিন ধরে কিছু খেতে পাননি। তারপরও কোদাল হাতে নেমে এলেন। পাথরে আঘাত করলেন। বৃহৎ পাথরটা চূর্ণ-বির্চূণ হয়ে গেল। (বুখারি, হাদিস: ৪,১০১)

কেউ কেউ এই ঘটনায় মুজিজার কথা উল্লেখ করে থাকেন। এ বিষয়ে সিরাত এক গবেষকের বক্তব্য হলো, পাথর ভাঙার সময় যে আলোকশিখা বেরিয়ে এসেছে এবং তাতে তিনি বিভিন্ন জনপদের ছবি দেখেছেন, সেটাকে তো মুজিযা বলতে হবে। কিন্তু পাথর ভাঙাটাকে মুজিযা হিসেবে কেউ সমর্থন করেননি।

চাচা আবু তালিব ও স্ত্রী খাদিজা (রা.) মারা যাওয়ার পরে যখন তিনি মক্কায় নিরাশ্রয় ও অসহায় পড়েছিলেন, সেই কঠিন সময়ে একাকী তাঁর তায়েফ গমনের কথা স্মরণ করা যায়। তখন তিনি এমন কাউকে খুঁজছিলেন, যিনি দ্বীন প্রচারে তাঁকে সাহায্য করবেন। অথচ বিনিময়ে সেখানেও তিনি অবর্ণনীয় শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের মুখে পড়েছেন। সব সহ্যও করেছেন। উপরন্তু আল্লাহর কাছে নিপীড়কদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন।

এই ঘটনা তার মানসিক স্থৈর্য ও শারীরিক সক্ষমতা উভয় দিকেরই প্রমাণ বহন করে।

এ ছাড়া ওমর (রা.)–র বর্ণনা থেকে নবীজি(সা.) র জীবনের প্রায় শেষ সময়ে নবম হিজরির একটি ঘটনা জানা যায়। তখন ওমরের বয়স ছিল নবীজির (সা.) চেয়ে কম। সে-সময় নবীজি (সা.) তাঁর স্ত্রীদের ইচ্ছার অধিকার দিয়েছিলেন। ওমর (রা.) তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। নবীজি (সা.) তখন উঁচু একটি ঘরে অবস্থান করছিলেন। ওমর (রা.) সেখানে উঠলেন একটি খেজুরের ডাল ধরে, যেখানে সিঁড়ির মতো ধাপ ধাপ করা ছিল। ওমর (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) নামলেন, আমিও নামলাম। আমি নেমেছি খেজুর ডাল ধরে। আর তিনি নামলেন, কিন্তু কিছু না ধরলেন না; যেন তিনি সমতল ভূমিতেই হাঁটছেন। (মুসলিম, হাদিস: ১৪৭৯)

এতে করে জীবনের শেষ পর্যন্ত তাঁর সমান উদ্যম ও শক্তিমত্তা বহাল থাকার কথা আমরা বুঝতে পারি।

নবীজি (সা.) নিজে শক্তিশালী ছিলেন, শক্তির প্রত্যাশা করেছেন এবং শক্তি অর্জনে উৎসাহ দিয়েছেন। এর অর্থ এ নয় যে, তিনি দুর্বলকে অবজ্ঞা করেছেন। তিনি নিজেই বলেছেন, শক্তিশালী মুমিন আল্লাহর কাছে দুর্বল মুমিনের চেয়ে উত্তম ও অধিক প্রিয়। আর কল্যাণ উভয়ের মধ্যেই রয়েছে। তোমার যা উপকার আসবে তা কামনা করো। আল্লাহর কাছে সাহায্য চাও। অক্ষমতা প্রকাশ কোরো না। তোমার কোনো বিপদ এলে এ কথা বলো না যে যদি এমন এমন করতাম! বরং বলো, আল্লাহ নির্ধারণকারী। তিনি যা চান তাই করেন। কেননা, ‘যদি’ শব্দটি শয়তানের দরজা খুলে দেয়। (মুসলিম, হাদিস: ২,৬৬৪)

সাদ ইবনে আবু ওয়াক্কাস (রা.) কোনো কারণে ভাবতেন, নিম্নস্তরের লোকজনের ওপর তার শ্রেষ্ঠত্ব রয়েছে। নবীজি (সা.)তাকে বললেন, তোমাদের সাহায্য করা হয় এবং রিজিক দেওয়া হয় কেবল তোমাদের দুর্বলদের কারণে। (বুখারি, হাদিস: ২,৮৯৬)