রোজা তাকওয়ার অনুশীলন করায়

আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে এবং পরকালের শাস্তির ভয়ে যাবতীয় অসদাচরণ থেকে বিরত থাকা বা এ ব্যাপারে আত্মসংযম পালনেরই নাম তাকওয়া। আল্লাহ–তায়ালা মানুষকে স্বাধীন ইচ্ছাশক্তি দান করেছেন। ন্যায় ও অন্যায় উভয় প্রকার ইচ্ছাই সে করতে পারে। তবে যদি অন্যায় করার সময় তার বিবেক তাকে বাধা দেয় এবং তাকে ন্যায় পথে পরিচালিত করে, তবে সেটাই হলো তার তাকওয়া। দৃষ্টান্তস্বরূপ বলা যেতে পারে যে একজন লোক যদি অবৈধভাবে ইন্দ্রিয় পরিতৃপ্তির সকল সুযোগ পাওয়া সত্ত্বেও আল্লাহর বিধিবহির্ভূত কাজ মনে করে তা থেকে বিরত থাকে, তবে তাকে তাকওয়া বলা হবে।

পবিত্র কোরআনে তাকওয়াকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। যার মধ্যে তাকওয়া থাকে, তাকে বলে মুত্তাকি। মুত্তাকির পরিচয় প্রসঙ্গে কোরআনে আছে, ‘যারা অদৃশ্যে বিশ্বাস করে, নামাজ কায়েম করে ও তাদেরকে যে জীবিকা দান করেছি তার থেকে ব্যয় করে, এবং যারা তোমার প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে ও তোমার পূর্বে যা অবতীর্ণ হয়েছে তাতে বিশ্বাস করে ও যারা পরলোকে নিশ্চিত বিশ্বাসী।’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ৩-৪)

তাকওয়ার প্রতি উৎসাহিত করে আল্লাহ বলেন, ‘হে বিশ্বাসীগণ, তোমরা আল্লাহকে যথার্থ ভাবে ভয় করো এবং তোমরা আত্মসমর্পণকারী না হয়ে মোরো না।’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত: ১০২)

হজরত ইরবাজ ইবনে সারিয়া (রা.) বলেন, একদিন রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাদের নিয়ে নামাজ আদায় করলেন। এরপর আমাদের দিকে মুখ ফিরে বসলেন এবং আমাদের এক উপদেশ দিলেন। এতে আমাদের চোখ সিক্ত হলো এবং অন্তর বিগলিত হলো। এক লোক বলে উঠল, হে আল্লাহর রাসুল, মনে হয় এটি বিদায়ী উপদেশ। তখন তিনি বললেন, আমি তোমাদের তাকওয়া বা আল্লাহ ভীতির উপদেশ দিচ্ছি এবং আমিরের (নেতার) কথা শুনতে ও তাঁর আনুগত্য করতে বলছি, যদিও তিনি হাবশি দাস হন।...’ (আবু দাউদ, হাদিস: ৪,৬০৯; তিরমিজি, হাদিস: ২,৬৭৬; ইবনে মাজাহ, হাদিস: ৪২)

রোজা কেবলই আল্লাহর জন্য আর আল্লাহ নিজেই রোজার প্রতিদান দেবেন। রোজার মাধ্যমে তাকওয়ার সফল অনুশীলন হয়ে থাকে। সব ইবাদতেরই উদ্দেশ্য তাকওয়া অর্জন করা। আল্লাহ বলেন, ‘হে মানুষ, তোমরা উপাসনা করো তোমাদের সেই প্রতিপালকের, যিনি তোমাদের ও তোমাদের পূর্ববর্তীদের সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা আত্মরক্ষা (মুত্তাকি) করতে পারো।’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ২১)

বিভিন্নভাবে রোজা পালনে তাকওয়ার অনুশীলন ও প্রশিক্ষণ হয়ে থাকে। প্রয়োজন শুধু সেই তাকওয়াকে ধরে রাখা আর সেই আলোকে জীবন পরিচালনা করা। ব্যক্তি, পরিবার, সমাজসহ জীবনের সব শাখা-প্রশাখায় তাকওয়ার আলোকে সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও তা বাস্তবায়ন করা। রোজা তাকওয়া অর্জনের অন্যতম মাধ্যম। রমজান তাকওয়া অর্জনের অনুশীলন ও প্রশিক্ষণের মাস।

আল্লাহ বলেন, ‘হে বিশ্বাসীগণ, তোমাদের জন্য সিয়াম (রোজার) বিধান দেওয়া হলো, যেমন বিধান তোমাদের পূর্ববর্তীদের দেওয়া হয়েছিল, যাতে তোমরা সাবধান (মুত্তাকি) হয়ে চলতে পারো।’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ১৮৩)

রোজাদার সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য পানাহার, পাপাচার থেকে বিরত থাকে। পৃথিবীর কোনো শক্তি ও ভয় নয়; সন্তুষ্টির জন্য আল্লাহকে ভয় করে। আল্লাহর স্মরণ করে। রমজান মাসে রহমত ও জান্নাতের দরজা খোলা, জাহান্নাম বন্ধ থাকে।

আল্লাহ ইবাদতের সওয়াব বাড়িয়ে দেন। নফলের সওয়াব ফরজের মতো আর ফরজের সওয়াব ৭০টি ফরজের সমান হয়ে যায়। এ মাসে আল্লাহ তাঁর ক্ষমা ও অনুগ্রহের মাত্রা বাড়িয়ে দেন। আল্লাহ প্রতিদিন ইফতারের সময় অসংখ্য ব্যক্তিকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিয়ে থাকেন। আল্লাহর শাস্তির ভয় এবং রহমতের আশার মধ্য দিয়ে দিন–রাত কাটে নামাজ, দোয়া ও কান্নাকাটির মধ্য দিয়ে। রমজানের সওয়াব, বরকত ও রহমত পূর্ণভাবে পাওয়া যায়।