হজের প্রস্তুতি

হজযাত্রীদের জন্য কিছু পরামর্শ

মক্কার তাপমাত্রা মে থেকে অক্টোবর পর্যন্ত সাধারণত ৩২-৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের চেয়েও গরম হতে পারে, তাই বেশি বেশি পানি ও জুস পান করুন, যাতে আপনি সুস্থ থাকেন। বিভিন্ন কোম্পানি এ সময় বিনা মূল্যে খাবার, পানি ও জুস সরবরাহ করে থাকে, এগুলো অবশ্যই গ্রহণ করবেন।

খাবারদাবার: মক্কা ও মদিনায় সব ধরনের খাবার পাওয়া যায়। বিভিন্ন ইন্টারন্যাশনাল ফাস্টফুড চেইন কেএফসি, পিত্জাহাট, আলবাইক থেকে শুরু করে বাংলাদেশি খাবারের দোকান, সবই রয়েছে—একটু খুঁজে বের করে নিতে হবে, বাঙালি ভাইদের জিজ্ঞেস করুন।

টাকা: ঢাকা থেকে সৌদি রিয়াল নিয়ে আসাটাই ভালো; পথে যেকোনো সময় কাজে লাগবে। ডলার ভাঙানোর জায়গা অবশ্য রয়েছে; আপনি চাইলে কিছু রিয়াল ও বাকিটা ডলার নিয়ে আসতে পারেন।

শপিং: মনে রাখবেন, ওমরাহ ও হজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত শপিংয়ে বের হবেন না। আপনি যে উদ্দেশ্যে মক্কা গিয়েছেন, সেটি আগে সম্পন্ন করুন। ওমরাহ ও হজ শেষে জায়নামাজ, আতর ইত্যাদি কিনতে অবশ্যই ভুলবেন না। আর নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস কেনার জন্য ক্লক টাওয়ারের ‘বিন-দাউদ’ সুপারস্টোরে সবই পাবেন।

সিম কার্ড: হাজিদের অনেক সময় স্পেশাল সিম কার্ড দেওয়া হয়; তবে আপনি আপনার হাজি আইডি কার্ড দেখিয়ে এখানকার সিম কার্ড কিনে নিলেই ভালো। আর বিভিন্ন তিন, চার ও পাঁচ তারকা হোটেলে ওয়াইফাই থাকে, সেটিও ব্যবহার করতে পারেন। তবে মনে রাখবেন, সৌদি আরবে বেশির ভাগ সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাপ যেমন ওয়াটসঅ্যাপ ও ভাইবার ভিডিও কল কাজ করে না। যে দুটি অ্যাপে ভিডিও কল এখনো করা যাচ্ছে, তা হলো ফেসবুক মেসেঞ্জার ও বোটিম। তাই এই অ্যাপগুলো জেদ্দা যাওয়ার আগেই ইনস্টল করে নিলে ভালো।

মুঠোফোনে সেলফি: হজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত সেলফি তুলবেন না। আপনার হজের উদ্দেশ্য নষ্ট করবেন না। হজ শেষে যত খুশি সেলফি তুলুন।

ছয়টি আজান: মক্কায় আপনি ছয়টি আজান শুনতে পাবেন; প্রথম আজানটি আসলে তাহাজ্জুদের; তবে তাহাজ্জুদের সালাতে কোনো জামাত হয় না।

জানাজা নামাজ: মক্কায় প্রায় প্রতিটি জামাতের নামাজের পরই জানাজা নামাজ হবে। এগুলো অবশ্যই আদায় করুন।

মদিনায় যাওয়া: হজ শেষে আপনি অবশ্যই মদিনায় যাবেন; তবে এটি হজের অংশ নয়। অনেকেই মদিনায় ৪০ রাকাত নামাজ আদায়ের বিশেষ সওয়াবের কথা বলেন; আসলে এটির কোনো সহিহ সনদ নেই, এটি কোরআন ও সুন্নাহ দ্বারা সমর্থিত নয়।

মসজিদে নববিতে অবশ্যই নামাজ আদায় করবেন প্রতি ওয়াক্ত জামাতের সঙ্গে; আর দোয়া চাইবেন আল্লাহর কাছে, রাসুলের কাছে অবশ্যই নয়।

সম্ভব হলে ‘রিয়াদুল জান্নাহ’তে নামাজ আদায় করুন। আজকাল ‘রিয়াদুল জান্নাহ’তে ঢোকার জন্য আগেভাগেই অনলাইনে অ্যাপয়েন্টমেন্ট করতে হয়, যার কনফারমেশন কাগজটি রাসুল (সা.)-এর রওজায় ঢোকার সময় দেখাতে হয়। এ ব্যাপারে আপনার এজেন্সির সহায়তা নিন।

 ‘রিয়াদুল জান্নাহ’ জান্নাতের একটি অংশ এবং এটি মসজিদে নববিতে রাসুলের রওজার পাশে চিহ্নিত একটি স্থান; এখানে নামাজ আদায় করার সওয়াব অনেক।

 ‘রিয়াদুল জান্নাহ’ থেকে বের হওয়ার সময় রাসুল (সা.)-এর রওজা জিয়ারত করুন; প্রথমেই রয়েছে রাসুল (সা.)–এর কবর, তারপর আবুবকর (রা.) ও সবশেষে রয়েছে উমর (রা.)–এর কবর। বাঁ পাশ দিয়ে পার হওয়ার সময় সবাইকে আলাদাভাবে সালাম দিন।

মসজিদে নববির পাশেই রয়েছে ‘জান্নাতুল বাকি’, এখানে শায়িত আছেন অনেক বিখ্যাত নবী ও সাহাবিরা এবং বিবি খাদিজা (রা.) বাদে রাসুলের (সা.) বিবিগণ। তবে এখানে নারীদের প্রবেশ নিষেধ; তাই নারীরা ফেন্সের বাইরে থেকে দেখুন আর দোয়া করুন।

এ ছাড়া মদিনায় রয়েছে অনেক ঐতিহাসিক স্থান ও মসজিদ যেমন মসজিদে কুবা, মসজিদে কিবলাতাইন—এগুলো ঘুরে দেখতে পারেন।