ফতোয়া (ফতওয়া বা ফাতওয়া) আরবি শব্দ। ধর্মীয় আইন বিশেষজ্ঞ অথবা মুফতি কর্তৃক প্রদত্ত বা প্রকাশিত বিধান। এর উদ্দেশ্য একজন বিচারক বা একজন ব্যক্তি কর্তৃক উত্থাপিত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের উত্তর দান। ফতওয়ার প্রয়োজন হয়ে পড়ে তখনই, যখন কোনো ব্যক্তি বা কোনো বিচারক পবিত্র পবিত্র কোরআন ও হাদিস থেকে প্রাপ্ত শরিয়ায় ও আগের ফিকাহ গ্রন্থাদিতে কোনো উদ্ভূত সমস্যার সন্তোষজনক সমাধানে উপনীত হতে পারেন না।
ইসলামের প্রাথমিক সময় থেকে ইমাম ও মুফতিদের প্রদত্ত অনেক ফতওয়া সংগৃহীত হয়েছে। এগুলোই ফিকাহ নামে পরিচিত। যখন একজন মুফতি ফিকাহ সাহিত্যে তাঁর বিশদ জ্ঞান সত্ত্বেও কোনো সংকটপূর্ণ সমস্যার সমাধানে ব্যর্থ হন, তখন তাঁর অনুরোধে ফকিহরা (ফিকাহ শাস্ত্রবিদগণ) পবিত্র কোরআন ও হাদিসের আলোকে সমস্যাটি সমাধানের জন্য ইজতিহাদ (সর্বাঙ্গীণ প্রচেষ্টা) পরিচালনা করেন এবং সর্বসম্মতিক্রমে (ইজমা) একটি সিদ্ধান্তে উপনীত হন এবং প্রয়োজনে পূর্বসিদ্ধান্তগুলোর সঙ্গে সামঞ্জস্য বিধান করে যুক্তি ও সাদৃশ্য (কিয়াস)-ভিত্তিক সিদ্ধান্তও গ্রহণ করেন। এ ধরনের সিদ্ধান্তগুলোই ফাতওয়া। এগুলো মাসআলা নামেও অভিহিত হয়, তবে সব মাসআলা ফতওয়া নয়।
উমাইয়া ও ‘আব্বাসি’ আমলে প্রখ্যাত ও জ্ঞানী ধর্মবেত্তাদের পুরোভাগে আসা পর্যন্ত ইসলামের প্রথম যুগে কাজিরা ফতওয়া জারি করতেন। আধুনিককালে কোনো কোনো মুসলিম রাষ্ট্রে ইসলামের খ্যাতিমান আইন ব্যাখ্যাকারীদের নিয়ে ফতওয়া কমিটি গঠিত হয়েছে। মিসর, তুরস্ক, পাকিস্তান, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, মরক্কো, জর্দান, সুদান, সৌদি আরব ও আরব আমিরাতের কমিটিগুলোর অভিজ্ঞতা ফতওয়া অনুশীলনের কিছু বৈশিষ্ট্য উদ্ঘাটন করেছে। প্রথমত, শুধু ব্যক্তির মতের ওপর নির্ভর করে ফতওয়া দেওয়া হয়নি; দ্বিতীয়ত, এগুলো জরুরি ক্ষেত্রে যখন প্রয়োজন হয়েছে তখনই কেবল দেওয়া হয়েছে; তৃতীয়ত, উল্লিখিত দেশগুলোর চলমান আইনের সঙ্গে ফতওয়াগুলো সংগতিপূর্ণ। কয়েকটি ফতওয়া গ্রন্থের নাম হলো: ফাতওয়া কাজি খান , ফাতওয়া শামি , ফাতওয়া আলমগিরি ।
সূত্র:‘ফতোয়া ’যার যা ধর্ম, মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান, প্রথমা প্রকাশন, ২০১৪