ইসলামী সংস্কৃতির বিকাশ নিয়ে আলোচনা

অস্ট্রিয়ান ঐতিহাসিক ও আরব-বিশেষজ্ঞ গুস্তাভ এডমন্ড ফন গ্রুনেবাম ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি নিয়ে অনেক কাজ করেছেন। লিখেছেন এক ডজনের বেশি বই, লিখেছেন অনেক প্রবন্ধ। ইসলাম: এসেজ ইন দ্য নেচার অ্যান্ড গ্রোথ অব আ কালচারাল ট্র্র্যাডিশন নামের বইটিতে সংকলিত হয়েছে তাঁর রচিত ১২টি প্রবন্ধ। এসব প্রবন্ধে তিনি ইসলামী সভ্যতার তিনটি দিক নিয়ে আলোকপাতের চেষ্টা করেছেন: ১. একটি অভিন্ন সংস্কৃতির অন্তর্ভুক্ত হওয়ার বিষয়ে মুসলমানদের মধ্যে চেতনাবোধ বিকশিত হওয়া; ২. সাহিত্য, রাজনৈতিক মতবাদ, বিজ্ঞানের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গী এবং নগর কাঠামোর মধ্য দিয়ে মুসলিম সভ্যতার একতার প্রয়াস; এবং ৩. অন্যান্য সভ্যতার সঙ্গে ইসলামের মিথস্ক্রিয়া।

গ্রুনেবাম মনে করেন, সভ্যতাগুলোর সাধারণ প্রকৃতি বোঝার ক্ষেত্রে ইসলাম কিছু গুরুত্বপূর্ণ উপাদানের জোগান দেয়।

খুব অল্প সময়ের মধ্যেই একটি গোষ্ঠীভিত্তিক সংস্কৃতি থেকে একটি বৈশ্বিক সভ্যতায় রূপ নেয়ার কারণে ইসলাম অত্যন্ত সুস্পষ্ট সঙ্গতি ধারণ করেছে। পাশাপাশি বিকাশের বিভিন্ন পরযায়ে বিশ্বের অন্যান্য সভ্যতার মোকাবিলা করেছে।

আবার মরুভূমির যাযাবর মানসিকতা থেকে শহুরে বণিকের মানসিকতায় উত্তরণ এবং সংকীর্ণ গোত্র ও গোষ্ঠীর পরিধি থেকে একটি বৈশ্বিক ধর্ম ও সংস্কৃতিতে রূপান্তর ঘটার মতো জটিল বিষয় কিভাবে ব্যাখ্যা করা সম্ভব? লেখক এ প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা করেছেন এ বইতে।

গ্রুনেবামের আরেকটি অভিমত হলো, ইহুদি ও খিস্টান ধর্মতত্ত্ব, গ্রিক দর্শন, পারসিক প্রশাসন ও সাহিত্য, ভারতীয় গণিত ও জ্যোতির্বিদ্যা থেকে নানা কিছু আহরণ করার মধ্য দিয়ে ইসলাম বাইরের বিভিন্ন উৎস থেকে আত্মস্থ করার সক্ষমতা দেখিয়েছে। যদিও কিছু ক্ষেত্রে বাইরে থেকে নেয়ার বিষয়টি স্বীকার করায় কুণ্ঠা পরিলক্ষিত হয়। তবে লেখক এও বলেছেন যে এ বিষয়টি শুধু ইসলামের ক্ষেত্রে এককভাবে প্রযোজ্য নয়। সব সভ্যতা ও সংস্কৃতিই বাইরের বিভিন্ন উৎস থেকে বিভিন্ন কিছু গ্রহণ করে নিজেদের মতো সাজিয়ে নিয়েছে।

বইটি প্রথম প্রকাশ হয়েছিল ১৯৫৫ সালে, যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোগে। লন্ডন থেকে এটি প্রকাশ করেছিল রুটলেজ অ্যান্ড কেগান পল লিমিটেড। ১৯৬১ সালে এর একটি পরিবর্ধিত সংস্করণ বের হয়। এরপর বিভিন্ন সময়ে পুনর্মুদ্রিত হয়েছে।


ইসলাম: এসেজ ইন দ্য নেচার অ্যান্ড গ্রোথ অব আ কালচারাল ট্র্র্যাডিশন
, গুস্তাভ এডমন্ড ফন গ্রুনেবাম, রুটলেজ অ্যান্ড কেগান পল লিমিটেড এবং অক্সফোর্ড, লন্ডন, ১৯৬৯