মুসলমানদের বিশ্বাস, আল্লাহ ১০ মহররম বিশ্বব্রহ্মাণ্ড সৃষ্টি আরম্ভ করেন। আবার ওই একই দিনে আদম (আ.)–কে সৃষ্টি করা হয়, নুহ (আ.)–এর নৌকা মহাপ্লাবনের পর মাটি স্পর্শ করে, ইব্রাহিম (আ.) নমরুদের অগ্নিকুণ্ড থেকে মুক্ত হন, লুত (আ.)–এর শহর ধ্বংস হয়, ইয়াকুব (আ.) ইউসুফ (আ.)–এর সঙ্গে মিলিত হন, ইউনুস (আ.) মাছের পেট থেকে তিন দিন ও তিন রাত পর মুক্তি লাভ করেন।
দিনটি মুসলিম বিশ্বে শোকের দিন হিসেবে পালিত হয়। মহানবী (সা.)-এর দৌহিত্র এবং হজরত আলী (রা.)-র জ্যেষ্ঠ পুত্র ইমাম হাসান (রা.)–এর সঙ্গে মুয়াবিয়ার এই মর্মে সন্ধি হয়েছিল যে মুয়াবিয়ার মৃত্যুর পর হাসান (রা.)–এর ছোট ভাই ইমাম হোসেন (রা.) খলিফা হবেন। কিন্তু সে প্রতিশ্রুতি রক্ষিত হয়নি। ৬০ হিজরির ৯ মহররম ফোরাত নদীর তীরে কারবালা প্রান্তরে ইমাম হোসেন (রা.) সপরিবার ইয়াজিদ বাহিনী দ্বারা অবরুদ্ধ হন। শেষে দুই দলের মধ্যে যুদ্ধে ইমাম হোসেন (রা.) এবং পরিবারের প্রায় সব পুরুষ শাহাদাতবরণ করেন। হোসেন (রা.)–কে হত্যা করে সিমার তাঁর কর্তিত শির দামেস্কে ইয়াজিদের দরবারে উপহার দিতে নিয়ে যায়।
এই মর্মন্তুদ ঘটনার স্মরণে ১০ মহররম দিনটি মুসলিম বিশ্বে প্রতিবছর শোক ও শ্রদ্ধার সঙ্গে পালন করা হয়। কারবালার এই বিয়োগান্ত ঘটনার আগে অবশ্য ১০ মহররম দিনটি আনন্দের দিন হিসেবে বিবেচিত হতো। কারণ, বেশ কয়েকটি শুভ ঘটনার স্মৃতি এদিনের সঙ্গে জড়িত। হজরত মুসা (আ.) ফেরাউনের জুলুম থেকে এদিনে পরিত্রাণ লাভ করেছিলেন তাঁর অনুসারীদের নিয়ে। ইব্রাহিম (আ.) নমরুদের অগ্নিকুণ্ড থেকে এদিনে মুক্তি পান। এমন অনেক তাৎপর্যময় ঘটনা ঘটেছিল এই দিনে।
মুসলমান নর–নারীরা অনেকেই আশুরা উপলক্ষে রোজা রাখেন। কারবালার মর্মন্তুদ ঘটনা অবলম্বনে বাংলা ভাষায় মীর মশাররফ হোসেন তিন খণ্ডে তাঁর ‘বিষাদ-সিন্ধু’ উপন্যাসটি রচনা করেছেন।