হজরত তালহা ইবনে উবাইদুল্লাহ (রা.) কিশোর বয়স থেকেই ব্যবসায় জড়িত ছিলেন। একবার কুরাইশদের বাণিজ্য–কাফেলার সঙ্গে তিনি সিরিয়ায় যান। বসরার বাজারে এক খ্রিষ্টান পাদরির একটি ঘোষণা তাঁর জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়।
তালহা (রা.)–এর নিজের ভাষায় কথাগুলো ছিল এ রকম: আমি তখন বসরার বাজারে। একজন খ্রিষ্টান পাদরিকে ঘোষণা করতে শুনলাম, ‘হে ব্যবসায়ী সম্প্রদায়, এই বাজারে মক্কার কোনো লোক আছে?’ আমি কাছেই ছিলাম। দ্রুত কাছে গিয়ে বললাম, ‘হ্যাঁ, আমি মক্কার লোক।’ তিনি জিজ্ঞেস করলেন, ‘তোমাদের মধ্যে কি আহমদ আত্মপ্রকাশ করেছে?’ বললাম, ‘কোন আহমদ?’ তিনি বললেন, ‘আবদুল্লাহ ইবনে আবদুল মুত্তালিবের ছেলে। তিনি হবেন শেষ নবী। তিনি হিজরত করবেন কালো পাথর আর খেজুর উদ্যানবিশিষ্ট একটি ভূমির দিকে। যুবক তোমার উচিত খুব তাড়াতাড়ি তাঁর কাছে যাওয়া।’
তালহা (রা.) খুবই কৌতূহল অনুভব করতে লাগলেন। মক্কায় পৌঁছেই তিনি হজরত মুহাম্মদ (সা.)–এর সঙ্গে দেখা করে কালেমা শাহাদত পড়ে ইসলাম গ্রহণ করলেন।
ইসলাম গ্রহণের পর তিনি নানাভাবে অত্যাচারিত হন। মায়ের ইচ্ছা ছিল, তিনি হবেন গোত্রের নেতা। তাঁর মা, আত্মীয়স্বজন ও গোত্রের লোকেরা তাঁকে ইসলাম থেকে ফিরিয়ে আনার জন্য তাঁর ওপর নিষ্ঠুর নির্যাতন চালান। তবু তিনি ইসলাম প্রচারের কাজ চালিয়ে যান। মক্কার দারুল আরকামে কোরআন প্রশিক্ষণে তিনি নিয়মিত উপস্থিত থাকতেন। ইসলাম গ্রহণের পর দীর্ঘ ১৩ বছর অসীম ধৈর্যের সঙ্গে মক্কায় থাকার পর ৬২২ খ্রিষ্টাব্দে অন্য মুসলিমদের সঙ্গে তিনিও মদিনায় হিজরত করেছিলেন।
মক্কা বিজয়ের দিন তালহা (রা.) রাসুল (সা.)–এর সঙ্গে কাবা শরিফে প্রবেশ করেন। ঐতিহাসিক বিদায় হজের সময়ও তিনি রাসুল (সা.)–এর সঙ্গে ছিলেন। এই সফরে একমাত্র রাসুল (সা.) ও তালহা (রা.) ছাড়া আর কারও সঙ্গে কোরবানির পশু ছিল না।
তালহা (রা.) ছিলেন ভালোবাসা আর আন্তরিকতায় পরিপূর্ণ একজন সাহাবি। তাবুক যুদ্ধে কাব ইবনে মালিক (রা.) অংশগ্রহণ না করায় রাসুল (সা.) খুব নাখোশ হন। কাব ইবনে মালিক (রা.) নিজেও খুব অনুতপ্ত ছিলেন। পরে আল্লাহর পক্ষ থেকে যখন তাঁকে ক্ষমা করে আয়াত নাজিল হয়, তখন তালহা (রা.) সঙ্গে সঙ্গে তাঁর কাছে ছুটে যান এবং জড়িয়ে ধরেন। কাব (রা.) বলেন, ‘আমি তালহার সে ব্যবহার কখনোই ভুলব না।’ কাব (রা.)–এর সেই কঠিন মনখারাপের সময়টায় এভাবেই তালহা (রা.) তাঁর কাছে এগিয়ে গিয়েছিলেন।
হজরত তালহা (রা.) ছিলেন বিত্তশালী ব্যবসায়ী। তাঁর সম্পদ থেকে প্রচুর সম্পদ তিনি ইসলামের পথে দান করেছেন। ইতিহাসে তিনি ‘দানশীল তালহা’ নামেও পরিচিত।
রাসুল (সা.)–এর ইন্তেকালের পর হজরত আবু বকর (রা.) ও ওমর (রা.)–এর খিলাফতকালে তিনি তাঁদের চিন্তা, পরামর্শ ও কাজে সাহায্য করতেন।
হজরত উসমান (রা.)–এর হত্যাকাণ্ডের পর ৩৬ হিজরিতে ইবনে সাবা নামে এক ইহুদির চক্রান্তে সংঘটিত হয় ‘উটের যুদ্ধ’। তাতে সাবায়িদের ছোড়া একটি তির হজরত তালহার পায়ে এসে বেঁধে। ক্ষত প্রচুর রক্তক্ষরণে তাঁর শরীর রক্তশূন্য হয়ে পড়ে। ৬৪ বছর বয়সে তিনি ইন্তেকাল করেন।