হজরত দাউদ (আ.)-এর রাজত্ব ছিল বর্তমান ফিলিস্তিনসহ সমগ্র ইরাক ও সিরিয়া এলাকায়। ক্ষমতার অধিকারী হয়েও তিনি ছিলেন আল্লাহর প্রতি অনুগত ও কৃতজ্ঞ। আল্লাহ পবিত্র কোরআনে তাঁর কৃতজ্ঞতার সুনামও করেছেন। তাঁর মুজিজাগুলো ছিল অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। পর্বতমালা ও পাখিদের তাঁর অনুগত করে দেওয়া হয়েছিল। কঠিন লোহা তাঁর হাতে মোমের মতো গলে যেত। তিনি লোহাকে যেভাবে ইচ্ছা সেভাবে ব্যবহার করে নকশা গড়তে পারতেন। তৎকালীন যুগের অত্যাধুনিক বর্ম ইত্যাদি তিনিই বানাতে পারতেন। পবিত্র কোরআনে তাঁর সেই শৈল্পিক দক্ষতার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
কোরআনে আছে, ‘আর অবশ্যই আমি আমার পক্ষ থেকে দাউদের প্রতি অনুগ্রহ করেছিলাম। (আমি আদেশ করলাম,) হে পর্বতমালা, তোমরা তার সঙ্গে আমার পবিত্রতা ঘোষণা করো, এবং পাখিদেরও (এ আদেশ দিয়েছিলাম)। আর আমি তার জন্য লোহাকেও নরম করে দিয়েছিলাম, যাতে তুমি পূর্ণ মাপের বর্ম তৈরি করতে পারো, কড়াগুলো সঠিকভাবে সংযুক্ত করো আর তোমরা সৎকর্ম করো। তোমরা যা করো আমি তার প্রত্যক্ষদর্শী।’ (সুরা সাবা, আয়াত: ১০-১১)
হজরত দাউদ (আ.) তাঁর দক্ষতাকে কাজে লাগিয়েই উপার্জন করতেন। নিজের উপার্জনের টাকায় জীবিকা নির্বাহ করতেন। রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে নিজের ভরণপোষণের জন্য কিছুই নিতেন না। যদিও রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালনের বিনিময় নেওয়া অবৈধ নয়। নবীজি (সা.) সাহাবায়ে কেরামের কাছে তাঁর এই গুণের সুনাম করেছেন।
মিকদাম (রা.) সূত্রে পাওয়া একটি হাদিসে আছে, নবী (সা.) বলেন, নিজ হাতে উপার্জিত খাদ্যের চেয়ে উত্তম খাদ্য কখনো কেউ খায় না। আল্লাহর নবী দাউদ (আ.) নিজ হাতে উপার্জন করে খেতেন। (বুখারি, হাদিস: ২০৭২)
আল্লাহ হজরত দাউদ (আ.)-এর প্রতি তাঁর অনুগ্রহের কথা উল্লেখ করে কোরআনে আছে, ‘আমরা দাউদের প্রতি আমাদের পক্ষ থেকে অনুগ্রহ প্রদান করেছিলাম এই মর্মে যে হে পর্বতমালা, তোমরা দাউদের সঙ্গে আমার পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করো এবং (একই নির্দেশ দিয়েছিলাম) পাখিদেরও।’ (সুরা সাবা, আয়াত: ১০)
কোরআনে হজরত দাউদ (আ.)-এর প্রতি পাহাড়-পর্বত ও পশুপাখির আনুগত্য ও আল্লাহর তাসবিহ পাঠের কথা বলা হয়েছে।
কোরআনে আছে, ‘আর আমি সোলায়মানকে এ বিষয়ের মীমাংসা জানিয়ে দিয়েছিলাম এবং তাদের প্রত্যেককে আমি হিকমত ও জ্ঞান দিয়েছিলাম। আমি পাহাড় ও পাখিদের জন্য নিয়ম করে দিয়েছিলাম যেন ওরা দাউদের সঙ্গে আমার পবিত্র মহাকীর্তন করে। আমি ছিলাম এসবের কর্তা। আমি তাকে তোমাদের জন্য বর্ম তৈরি করতে শিখিয়েছিলাম, যা যুদ্ধে তোমাদেরকে রক্ষা করে। সুতরাং তোমরা কি হবে না? কৃতজ্ঞ হবে না। (সুরা আল আম্বিয়া, আয়াত: ৭৯-৮০)