মৃত্যু আসবেই। মৃত্যু থেকে পালিয়ে থাকার কোনো অবকাশ নেই। নেই চিরদিন বেঁচে থাকার কোনো উপায় বা পদ্ধতি। আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেছেন, ‘তোমরা যে মৃত্যু থেকে পালাতে চাও, সে মৃত্যুর সঙ্গে অবশ্যই তোমাদের সাক্ষাৎ হবে। তারপর তোমাদের সেই মহান আল্লাহর কাছে ফেরত পাঠানো হবে; যিনি প্রকাশ্য এবং অপ্রকাশ্য সব বিষয় জানেন এবং তিনি তোমাদেরকে তোমাদের আমল ও কাজকর্ম সম্পর্কে অবহিত করবেন।’ (সুরা জুমআ, আয়াত: ৮)
আল্লাহ তাআলা আরও ইরশাদ করেছেন, ‘তোমরা যেখানেই থাক না কেন মৃত্যু তোমাদের নাগাল পাবেই; এমনকি সুউচ্চ সুদৃঢ় দুর্গে অবস্থান করলেও।’ (সুরা নিসা, আয়াত: ৭৮)
মৃত্যু ঘটবে। তবে কার কখন মৃত্যু হবে, কীভাবে মৃত্যু ঘটবে—তা কারও জানা নেই। হাদিসে আছে, ‘মানুষের চোখের দুই ভ্রুরুর মাঝখানে মৃত্যুর তারিখ লেখা রয়েছে। কিন্তু তা কোনো মানুষই দেখতে পায় না।’ (আল হাদিস)
পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন, ‘নিশ্চয়ই কখন কেয়ামত হবে; তা শুধু আল্লাহই জানেন। তিনিই মেঘ থেকে বৃষ্টিবর্ষণ করেন এবং তিনি জানেন জরায়ুতে কী আছে। অথচ কেউই জানে না আগামীকাল তার জন্য কী অপেক্ষা করছে এবং কেউ জানে না কোথায় তার মৃত্যু হবে। শুধু আল্লাহই সর্বজ্ঞ, সব বিষয়ে অবহিত।’ (সুরা লোকমান, আয়াত: ৩৪)
মৃত্যু হবে। মরণ আসবেই। তবে অকালমৃত্যু বলতে কিছু নেই। আমরা অনেক সময় অনেকের ক্ষেত্রেই বলে থাকি, তার অকালমৃত্যু ঘটেছে। ইসলামের দৃষ্টিতে ‘অকালমৃত্যু’ বলতে কোনো কিছু নেই। কারণ, সবার মৃত্যুর দিনক্ষণ-তারিখ সবকিছু পূর্বেই নির্ধারিত। নির্ধারিত সময়েই মৃত্যুবরণ করেন সবাই। নির্দিষ্ট সময়ের একমুহূর্ত আগে বা পরে কারও মৃত্যু হয় না। একেকজন মানুষ বা প্রাণী একেক সময় মৃত্যুবরণ করলেও প্রত্যেকের মৃত্যুর সময় ও তারিখ নির্দিষ্ট। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘আমি কোনো জনপদকে ধ্বংস করিনি, কিন্তু তার নির্দিষ্ট সময় লিখিত ছিল। কোনো সম্প্রদায় তার নির্দিষ্ট সময়ের আগে যায় না এবং দেরিও করে না।’ (সুরা হিজর, আয়াত: ৪৫)
মৃত্যু বা জগৎ রূপান্তরের দুটি অবস্থা রয়েছে। এক. ভালো মৃত্যু। দুই. মন্দ মৃত্যু। কারও মৃত্যু হবে সহজ-সুন্দর এবং কারও মৃত্যু হবে কঠিন-ভয়াবহ। আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেছেন, ‘এবং যদি তুমি দেখতে মৃত্যুর সময় ফেরেশতাগণ কাফিরদের মুখমণ্ডলে ও পৃষ্ঠদেশে আঘাত করে তাদের নফস হরণ করছে এবং বলছে তোমরা দহনযন্ত্রণা ভোগ করো।’ (সুরা আনফাল, আয়াত: ৫০)
আল্লাহ তাআলা আরও ইরশাদ করেছেন, ‘ফেরেশতারা মৃদুভাবে মুমিনের প্রাণ কবজ করবে পবিত্র থাকা অবস্থায় এবং বলবে, তোমাদের প্রতি সালাম। তোমরা যা করতে, যার ফলে জান্নাতে প্রবেশ করো।’ (সুরা আন-নাহল, আয়াত: ৩২) যখন মৃত্যু উপস্থিত হবে, তখন মানুষের অন্তরের চোখ খুলে যাবে। সে তখন ভালো কাজ সম্পাদন করার জন্য আরও সময় কামনা করবে। কিন্তু তাকে আর সময় দেওয়া হবে না।
অহরহই আমরা বিপদে পড়ে, সামান্য মুসিবতে পড়লে বলে উঠি, ‘আয় মাবুদ, আমাকে উঠিয়ে নাও। মরণ দাও আমাকে।’ এমনটা বলা একেবারেই উচিত না। মৃত্যু প্রত্যাশা করাকে নিষেধ করা হয়েছে ইসলামে। রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘বিপদের কারণে তোমাদের কেউ যেন কিছুতেই মৃত্যু প্রত্যাশা না করে। কারও যদি মৃত্যু প্রত্যাশা করতেই হয়, তাহলে যেন বলে, হে আল্লাহ! আমাকে বাঁচিয়ে রাখো, যতক্ষণ আমার জন্য জীবন কল্যাণকর এবং আমাকে মৃত্যু দাও, যখন আমার জন্য মৃত্যু কল্যাণকর।’ (বুখারি)।
এ ছাড়া ইসলামি বিশ্বাস অনুযায়ী পুনর্জন্ম একটি ভ্রান্ত ধারণা। কোনো মানুষ মৃত্যুর পর পুনরায় দুনিয়ায় আগমন ইসলাম অনুমোদন করে না। মৃত্যুর পর সৎকর্মশীল মানুষের রুহ বা আত্মা ‘ইল্লিয়্যিন’ নামে একটি স্থানে থাকে। কিয়ামত পর্যন্ত আত্মা পরম শান্তিতে সেখানে অবস্থান করবে এবং হাশরের দিন বিচারকার্য শেষে জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে। আর অবিশ্বাসী ও পাপী লোকদের রুহ থাকে ‘সিজ্জিন’ নামে একটি স্থানে। এতে তারা হাশরের মাঠে বিচারকার্য শুরু হওয়ার আগপর্যন্ত অশান্তি ভোগ করতে থাকবে। বিচারকার্য শেষে তাদের জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। (সুরা মুতাফিফফীন, আয়াত নম্বর: ৭-১৮)
মিরাজ রহমান: লেখক ও গবেষক