স্ত্রীর সঙ্গে পরামর্শ করে হজে যাওয়ার প্রস্তুতি নিই। মসজিদুল হারাম ইসলামের জন্য অত্যন্ত নিদর্শনপূর্ণ একটি মসজিদ। মক্কায় মসজিদুল হারাম যে কতটা বৃহৎ মসজিদ, তা সরাসরি না গেলে অনুভব করা অসম্ভব।
হজে গেলে প্রথমে ওমরাহ করতে হয়। ওমরাহর ফরজ তিনটি—ইহরাম বাঁধা, তাওয়াফ করা ও সাফা-মারওয়ায় সাঈ করা। মক্কায় পৌঁছেই অত্যন্ত ব্যস্ততার মধ্য দিয়ে ওমরাহর কাজগুলো করতে হয়। আমাদের মোয়াল্লেমের পরামর্শমতো ওমরাহ করি। যখন ইহরামের কাপড় পরার সময় এল, তখন মোয়াল্লেমের শেখানো পদ্ধতিতে তা ঠিকমতো পরতে পেরে ভালো লাগছিল। আরও ভালো লাগছিল, যখন মনে হলো আমাদের প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) একইভাবে এ রকম কাপড় পরে হজ করেছিলেন। এই ইহরামের কাপড়ই বোধ হয় পৃথিবীতে একমাত্র কাপড়, যা মুসলমানদের ভেদাভেদ ভুলে সবাইকে একই কাতারে নিয়ে আসে।
ছোটবেলা থেকেই কাবাঘরের ছবি দেখে আসছি। কিন্তু সরাসরি নিজের চোখে কাবাঘর দেখার অনুভূতি অন্য রকম। কাবাঘর চোখের দৃষ্টিসীমায় আসার সঙ্গে সঙ্গে শরীরের মধ্যে কেমন যেন এক শিহরণ তৈরি হয়। নিজের অজান্তেই চোখ ভরে পানি চলে আসে। কাবা শরিফ দেখার সেই সময়ের অনুভূতি কখনোই ভুলে যাওয়ার নয়। নামাজে দাঁড়ালেও প্রায় সময় কাবাঘরের কথা মনে আসে, তখন আবার হজে যাওয়ার জন্য মনটা অস্থির হয়ে ওঠে।
হাজরে আসওয়াদ পবিত্র পাথর। প্রথমবার হজে গিয়ে অনেক চেষ্টার পরে মহান আল্লাহ তাআলার রহমতে চুম্বন করার সুযোগ হয়েছিল। চুম্বনকালের সেই অনুভূতি বর্ণনা করার মতো নয়। মনে হচ্ছিল, আমিও রাসুল (সা.)–এর চুম্বন করার জায়গায় চুম্বন দিতে পেরেছি।
মাকামে ইবরাহিমের কাছে বেশ কয়েকবার নামাজ পড়ার সুযোগ হয়েছিল।
জমজমের পানি খাওয়ার অনুভূতি বর্ণনা করার মতো নয়।
সাফা–মারওয়ায় সাঈ করতে শুরু করলে আমি হজরত ইবরাহিম (আ.)–এর সময়ের স্মৃতি মনে করে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়ি। মনে পড়ে হজরত ইসমাইল (আ.)–কে রেখে বিবি হাজেরা (আ.) কীভাবে দুই পাহাড়ে ছোটাছুটি করছিলেন।
জাবালে নূর, যেখানে রাসুল (সা.)–এর ওপর প্রথম ওহি নাজিল হয়েছে। আমি খুব কাছ থেকে পাহাড়টি দর্শন করেছি।
জান্নাতুল মাআলায় বিভিন্ন সম্মানিত সাহাবির কবর রয়েছে।
জিন মসজিদ দেখার অনুভূতি অত্যন্ত আনন্দময়।
৭ জিলহজ রাতে হজের নিয়ত করে এবং ইহরামের কাপড় পরে আমরা মিনায় যাওয়ার প্রস্তুতি গ্রহণ করি। পরবর্তী সময়ে গাড়ি এলে আমরা মিনার জন্য রওনা হই।
মিনায় পৌঁছে প্রথম দর্শনে তাঁবুর সারি দেখা যায়। সারি সারি তাঁবু দেখে চোখ ধাঁধিয়ে যায়।
মিনায় অবস্থানকালে কোরআন তিলাওয়াতসহ আল্লাহ তাআলার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেছি।
আরাফাতে অবস্থানকালে আমরা আল্লাহ তাআলার ইবাদত–বন্দেগিতে ব্যস্ত ছিলাম। মিনায় গিয়ে কঙ্কর নিক্ষেপ করি।
আমাদের মোয়াল্লেমের তত্ত্বাবধানে আগে থেকেই কোরবানির পশু প্রস্তুত রাখা হয়েছিল। পরবর্তী কাজ চুল কাটা সম্পন্ন করি।
পরবর্তী সময়ে পায়ে হেঁটে সুড়ঙ্গ পথে তাওয়াফে জিয়ারতের জন্য
মক্কায় যাই।
তাওয়াফে জিয়ারত শেষ করে আমরা সাফা-মারওয়ায় সাঈ করি। মিনায় অবস্থান করে নামাজ পড়ি। ১২ তারিখ মিনা থেকে ফিরে আসি।
আমরা যেহেতু মিকাতের বাইরে থেকে এসেছি, তাই আমাদের জন্য মক্কা ত্যাগ করার আগে বিদায়ী তাওয়াফ করা ওয়াজিব। বিদায়ী তাওয়াফ মূলত অত্যন্ত বেদনাদায়ক একটি কাজ। তাওয়াফকালে কোনো অবস্থাতেই চোখের পানি ধরে রাখা যায় না। এভাবেই আমাদের হজ
শেষ হয়।