কোরআনের মানুষ

সুরা ফাতিহা: নিরাময়ের অনন্য ঘটনা

 পুণ্যবানদের জীবনে সুরা ফাতিহা কীভাবে প্রভাব বিস্তার করেছিল, সে সম্পর্কে অনেক গল্প ও হাদিস আছে। তবে শুরুতে প্রিয় একটি হাদিস সবার সঙ্গে ভাগ করে নিই।

সুরা ফাতিহা সম্পর্কে হাদিস

আবু সাঈদ আল খুদরি (রা.) বলেন, একবার একদল সাহাবি ভ্রমণ করছিলেন। তাঁরা একটি অমুসলিম গোত্রের সাক্ষাৎ লাভ করলেন। গোত্রটিকে তাঁরা তাদের আতিথেয়তা করতে বললেন। কিন্তু তারা কঠোর আচরণ করল এবং তাঁদের আশ্রয় দিতে রাজি হলো না। এক অর্থে তারা সাহাবিদের নিজের পথ দেখে নিতে বলল। আবু সাঈদ (রা.) বলেন, ‘আমরা একরকম প্রত্যাখ্যাত বোধ করছিলাম। বাইরে আমরা তাঁবু খাটানোর সিদ্ধান্ত নিলাম। এভাবে আমরা একটি রাত পার করলাম।’

পরদিন এই গোত্রের লোকেরা এসে বলল, ‘আমাদের প্রধানকে সাপে কামড় দিয়েছে। তোমাদের কাছে কি এমন কোনো ওষুধ আছে, যা এর নিরাময় করতে পারে, অথবা এমন কেউ কি আছে যে রুকিয়া করতে পারে?’

আবু সাঈদ (রা.) বলেন, ‘আমি তখন উত্তর দিয়েছিলাম, তোমরা আমাদের সাহায্য করোনি, আমাদের আশ্রয় দাওনি, কাজেই আমরা তোমাদের জন্য কিছুই করব না যতক্ষণ না তোমরা আমাদের এর বিনিময়ে অর্থ দাও। তোমরা আমাদের প্রত্যাখ্যান করেছ। এ কারণে তোমাদের গোত্র থেকে আমাদের দূরে রাত কাটাতে হয়েছে। কাজেই কাজটি আমরা করব অর্থের বিনিময়ে।’

গোত্রটি তাতে রাজি হলো। তারা বলল, ‘বিনিময়ে আমরা তোমাদের একটি ভেড়ার পাল দেব।’

আবু সাঈদ (রা.) বলেন, ‘আমাদের মধ্যে এক সাহাবি এই প্রধানের কাছে গেলেন। তিনি উম্মুল কুরআন, অর্থাৎ সুরা ফাতিহা পাঠ করতে শুরু করলেন। তারপর তিনি ওই প্রধানের ক্ষতস্থান থুতু দিয়ে মালিশ করে দিলেন। এভাবে তিনি তা করতেই থাকলেন যতক্ষণ না তিনি ভালো বোধ করতে শুরু করলেন।’

গল্পের শিক্ষা হলো: সমগ্র কোরআন একটি শিফা—একটি নিরাময়, তবে তা আধ্যাত্মিকভাবে। কিন্তু যা সুরা ফাতিহাকে অনন্য করে তোলে, তা হলো এটা আধ্যাত্মিক নিরাময় তো বটেই, এমনকি শারীরিক নিরাময়ও। আমরা নিজেরা যখন অসুস্থ থাকি, আমাদের সন্তানসন্ততি যখন অসুস্থ থাকে, তখন এই সুরা তিলাওয়াত করা যায়।

গোত্রটির প্রধান ছিলেন একজন অমুসলিম। কাজেই এই হাদিসটি থেকে এই শিক্ষা পাওয়া যায় যে অমুসলিমের সুস্থতার জন্যও দোয়া করা যায়, তাদের নিরাময়ের জন্য চেষ্টা করা যায়, এমনকি তাদের ওষুধের ব্যবস্থা করা যায়।

আবু সাঈদ (রা.) বলেন, সুরা ফাতিহা পড়ার পর গোত্রপ্রধান সুস্থ হয়ে উঠল। কাজেই তারা খুশি হয়ে একটি ভেড়ার পাল এনে সাহাবিদের দিল। সাহাবিরা প্রশ্ন করলেন, ‘একটু দাঁড়ান, এটা কি আমাদের জন্য হালাল? ভেড়ার পালটি দেওয়ার জন্য আমরা আপনাদের প্রশংসা করি, কিন্তু আমরা এটি নিতে পারব না যতক্ষণ না আমরা রাসুলের (সা.) কাছে যাই এবং তাঁকে জিজ্ঞাসা করি, এটা গ্রহণ করা আমাদের জন্য জায়েজ হবে কি না।’

আবু সাঈদ (রা.) বলেন, ‘আমরা তাদের ছেড়ে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে গেলাম। আমরা আমাদের অবস্থা সম্পর্কে রাসুলকে (সা.) জানালাম। রাসুল (সা.) হাসতে লাগলেন। বললেন, “আপনারা কীভাবে জানলেন যে সুরা ফাতিহা কাউকে নিরাময় করতে পারে? অর্থাৎ, আমি তো আপনাদের কখনো শেখাইনি যে সুরা ফাতিহা নিরাময় হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে, আপনারা কীভাবে এর ব্যবহার জানলেন?”’

রাসুল (সা.) এরপর হাসতে হাসতে বললেন, ‘আপনারা ভেড়ার পালটি গ্রহণ করার জন্য সেখানে যান এবং আমার জন্যও এর একটি অংশ বরাদ্দ করুন।’

এখন গল্পের শিক্ষা হলো: সমগ্র কোরআন একটি শিফা—একটি নিরাময়, তবে তা আধ্যাত্মিকভাবে। কিন্তু যা সুরা ফাতিহাকে অনন্য করে তোলে, তা হলো এটা আধ্যাত্মিক নিরাময় তো বটেই, এমনকি শারীরিক নিরাময়ও। আমরা নিজেরা যখন অসুস্থ থাকি, আমাদের সন্তানসন্ততি যখন অসুস্থ থাকে, তখন এই সুরা তিলাওয়াত করা যায়।

আমরা আশা করি, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা সুরা ফাতিহার মাধ্যমে আমাদের নিরাময় করবেন, আমাদের মর্যাদাকে উন্নীত করবেন এবং আমাদের কুরআনের মানুষে পরিণত করবেন।

অনুবাদ: ফাহমিনা হাসানাত