ইমাম মালেক (রা.) ছিলেন তাঁর সময়ের শ্রেষ্ঠ বিজ্ঞজনদের একজন। তিনিই সেই ইমাম, যিনি চার মাজহাবের একটি ‘মালেকি মাজহাব’ প্রবর্তন করেছিলেন। ফিকহ তথা কোরআনের নিয়মকানুন সম্পর্কে তাঁর এত গভীর জ্ঞান ছিল যে তিনি কোনো বিষয়ে ফতোয়া জারি করতে পারতেন।
ইমাম মালেক (রা.) একদিন আসরের পর মসজিদে এলেন। কিছুক্ষণ পরই মাগরিবের আজান দেবে। মসজিদে আসার পর তিনি বসে পড়লেন। মালেকি মাজহাব অনুযায়ী আসরের নামাজের পর মাগরিবের আগ পর্যন্ত কোনো নামাজ পড়ার বিধান নেই। তিনি এটাই বিশ্বাস করেন এবং তাঁর মতে এটাই সঠিক নিয়ম।
এদিকে একটি ছোট ছেলে ইমাম মালেক (রা.)-এর কাছে এসে বলল, ‘আপনি মসজিদে এসেছেন অথচ আদব শেখেননি। মসজিদে আসলে দুই রাকাত নামাজ পড়তে হয়।’ এই বলে সে হাদিসের বই খুলে দেখাতে লাগল। সে বলল, ‘এই দেখুন হাদিস।’ অথচ সে তখনকার সবচেয়ে বড় মুহাদ্দিসের সঙ্গে কথা বলছিল।
ছেলেটির কথা শুনে ইমাম মালেক (রা.) কোনো কথাই বললেন না, তিনি দাঁড়িয়ে দুই রাকাত নামাজ আদায় করে নিলেন।
এতক্ষণ মসজিদের সবাই এই কাণ্ড দেখছিল। সবাই জানে মসজিদে এসে মাগরিবের আগে নামাজ পড়া উচিত না, এটি তাদের মাজহাবে নেই। অথচ ইমাম নিজেই নামাজ পড়তে শুরু করেছেন।
ইমাম মালেকের অনুসারীরা তাঁকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, ‘ছেলেটি যখন আমাকে নামাজের কথা বলল, তখন হঠাৎ আমার একটি আয়াত মনে পড়ে গেল।’ ‘যখন তাদের বলা হতো, নত হও। তারা নত হতো না।’ (সুরা মুরসালাত, আয়াত: ৪৮) ইমাম মালেক বলেন, ‘আমি জানি এই সময় নামাজ পড়ার নিয়ম নেই, তবে আমার ভয় হলো, আমি যদি সেই ছেলের কথা না রাখি, তাহলে আল্লাহ আমাকে একদিন এই ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করবেন যে নামাজের কথা বলার পরও আমি নামাজ পড়িনি কেন।’ এই ঘটনা থেকে অনেক কিছু শেখার আছে। ইমাম মালেক (রা.) ছিলেন যুগশ্রেষ্ঠ আলেম। তিনি চাইলে সেই ছেলেকে উচিত শিক্ষা দিতে পারতেন। তাকে তার ভুল ধরিয়ে দিতে পারতেন। তিনি এমনটা করেননি। তিনি উল্টো নিজের ভুলের কথা ভেবেছেন, যা প্রকৃত জ্ঞানীর আচরণ। আমাদের মধ্যে অনেকেই আছেন, যাঁরা মানুষের উপদেশ গ্রহণ করতে চান না। বিশেষ করে ভালো কোনো উপদেশ যদি ধমকের সুরে দেওয়া হয়, তখন আমরা রেগে যাই। আমরা মেনে নিতে পারি না। অথচ ইমাম মালেক (রা.) এত উন্নত চরিত্রের অধিকারী ছিলেন যে তিনি ছোটদের উপদেশকেও গুরুত্ব দিয়ে শুনতেন।
অনুবাদ: সাজিদ আল মাহমুদ