হজরত আলী (রা.)–র সাহসে এসে মিশেছে পাণ্ডিত্ব

হুদাইবিয়ার সন্ধি ইসলামের ইতিহাসে একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা। এ সন্ধির লেখক ছিলেন হজরত আলী ইবনে আবু তালিব (রা.)। রাসুল (সা.)–এর যুগের সব যুদ্ধেই আলী (রা.)–র সাহসিকতা ও বীরত্বের পরিচয় দিয়েছিলেন। এ কারণে রাসুল (সা.) তাঁকে হায়দার বা সিংহ উপাধি দিয়েছেন। খন্দকের যুদ্ধের সময় রাসুল (সা.) আলী (রা.)–কে জুলফিকার নামের একটি তলোয়ার দেন।

আলী (রা.) ছিলেন রাসুল (সা.)–এর আপন চাচাতো ভাই, রাসুল (সা.)–এর চাচা আবু তালিবের ছেলে। রাসুল (সা.)–এর নবুয়ত প্রাপ্তির সময় তাঁর বয়স ছিল ১০ বছর। সে সময় তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন। কিশোরদের মধ্যে তিনি ছিলেন প্রথম মুসলিম। রাসুল (সা.)–এর প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে তিনি শিক্ষা লাভ করেন। তিনি ছিলেন কোরআনের হাফেজ এবং একজন শ্রেষ্ঠ মুফাসসির। আলী (রা.) নিজেই বলেছেন, কোরআনের এমন কোনো আয়াত নেই, যা নিয়ে আমি রাসুল (সা.)–এর সঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা করিনি।

রাসুল (সা.)–এর হিজরতের সময় আলী (রা.) গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। অবিশ্বাসীদের যেন সন্দেহ না হয়, এ জন্য আলী (রা.)–কে নিজের বিছানায় শুইয়ে দিয়ে রাসুল (সা.) আবু বকর (রা.)–কে সঙ্গে নিয়ে রাতের অন্ধকারে মদিনায় রওনা দেন। সুবহে সাদিকের সময় মক্কার লোকজন রাসুল (সা.)–এর ঘরে আসে এবং দেখতে পায় আলী (রা.) তাঁর বিছানায় শুয়ে আছেন।

খলিফা নির্বাচিত হওয়ার পরপরই তিনি ইসলামি রাষ্ট্রের রাজধানী মদিনা থেকে ইরাকের কুফায় স্থানান্তর করেন। তিনি ন্যায়পরায়ণতার সঙ্গে তাঁর শাসনকাজ পরিচালনা করেছেন। হিজরি ৩৭ সনে সংঘটিত সিফফিনের যুদ্ধে আলী (রা.)–র খুব প্রিয় একটি বর্ম হারিয়ে যায়। হঠাৎ একদিন তিনি তাঁর বর্মটি কুফার বাজারে এক অমুসলিমকে বিক্রি করতে দেখেন। তিনি লোকটিকে তাঁর বর্মটি ফিরিয়ে দিতে বলেন। কিন্তু লোকটি বর্ম ফিরিয়ে দিতে রাজি হলো না। বর্মটি জোর করে নিয়ে নিতে পারলেও তিনি তা করলেন না। আইন অনুযায়ী লোকটির বিরুদ্ধে কাজির আদালতে মামলা করেন। কাজিও কঠোর ন্যায়বিচারক। তিনি আলী (রা.)–র দাবির সমর্থনে প্রমাণ চাইলেন।

আলী (রা.) কোনো প্রমাণ দিতে পারলেন না। ফলে কাজি অমুসলিম লোকটির পক্ষে মামলার রায় দিলেন। মুসলিম জাহানের শাসকের এমন ন্যায়পরায়ণতা লোকটিকে খুব বিস্মিত করল। এ মামলার প্রভাব লোকটির ওপর এতটাই পড়েছিল যে সে মুসলমান হয়ে যায়। লোকটি বলে ওঠে, যে ধর্ম এমন সুন্দর শিক্ষা দেয়, সে দ্বীন অবশ্যই সত্য! আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, বর্মটি আমিরুল মুমিনিনের। সিফফিন যুদ্ধে যাওয়ার সময় উটের পিঠ থেকে বর্মটি পড়ে গেলে আমি তা তুলে নিই। লোকটি ইসলাম গ্রহণ করায় আলী (রা.) খুব খুশি হয়ে বর্মটি তাকে উপহার হিসেবে দিয়ে দেন।

আলী (রা.) ছিলেন জ্ঞানের ভান্ডার। সে যুগের শ্রেষ্ঠ আরব কবিদের মধ্যে তিনিও ছিলেন একজন। দিওয়ানে আলী নামে তাঁর একটি কবিতার সংকলন পাওয়া যায়, তাতে ১ হাজার ৪০০ শ্লোক আছে। তিনি ছিলেন একজন সুবক্তা। ‘নাহজুল বালাগা’ নামে তাঁর বক্তৃতার একটি সংকলন আছে। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৬৩ বছর।