ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রহ.) সম্পর্কে আগেও আমরা শুনেছি। তিনি ছিলেন ‘হাম্বলী মাজহাব’-এর প্রবর্তক। তাঁর জীবন কেটেছে অনেক দুঃখ-কষ্টের ভেতর দিয়ে। মুসলিম শাসকদের বিরুদ্ধে কথা বলায় তাঁকে কারাগারেও যেতে হয়েছিল।
ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রহ.) সাধারণ মানুষদের হামলার শিকারও হয়েছিলেন। তাঁকে নিয়ে মানুষ বাজে মন্তব্য করত। তবে শেষ পর্যন্ত মুসলিমরা তাঁকে চিনতে পারে। এরপর তাঁর জনপ্রিয়তা বহুগুণে বেড়ে যায়। বাদশাহরাও তাঁকে মেনে নিতে বাধ্য হন। জীবনের শেষ কিছু বছর তিনি শান্তিতে ছিলেন।
ইমাম আহমদ (রহ.)-এর ছেলে সালেহ বলেন, ‘আব্বার কাছে প্রায়ই মানুষ আসতেন ক্ষমা চাইতে। ইমাম আহমদ (রহ.) সবাইকে ক্ষমা করে দিয়েছিলেন কোনো শর্ত ছাড়াই। বিশেষ করে যাঁরা তাঁকে দীর্ঘদিন কষ্ট দিয়ে এসেছিলেন, তাঁরা কাঁদতে কাঁদতে তাঁর কাছে আসতেন এবং তিনি ক্ষমা করে দিতেন।’
আমি একদিন আব্বাকে জিজ্ঞাসা করলাম, ‘আচ্ছা, যাঁরা আপনার কাছে ক্ষমা চাইতে আসছেন, তাঁরা মাফ পেয়ে গেলেন। আর যাঁরা ইতিমধ্যে মারা গেছেন, তাঁরা তো কোনো দিন ক্ষমা চাননি। তাঁদের কী হবে?
ইমাম আহমদ (রহ.) বললেন, ‘আমি তাঁদেরও ক্ষমা করে দিয়েছি।’
আমি বললাম, ‘কিন্তু কেন, তাঁরা তো আপনার কাছে ক্ষমাও চাননি।’
ইমাম আহমদ এবার সুরা শুরার ৪২ নম্বর আয়াত তিলাওয়াত করলেন, ‘যে মন্দ কাজ করে তার প্রতিফল হলো অনুরূপ মন্দ কাজ। যে ক্ষমা করে এবং আপস করে নেয়, তার পুরস্কার আল্লাহর কাছে রয়েছে; নিশ্চয়ই তিনি অত্যাচারীদের পছন্দ করেন না।’
প্রখ্যাত তাবেয়ি হাসান আল বশরী (রহ.) এই আয়াতের ব্যাখ্যা দিয়েছেন। তিনি বলেন, আল্লাহ তাআলা কেয়ামতের কঠিন দিনে সব জাতিকে একসঙ্গে নিয়ে আসবেন। সবাই দাঁড়িয়ে থাকবে নতজানু অবস্থায়। আল্লাহ বলবেন, ‘আমার নির্দেশ না আসা পর্যন্ত কেউ দাঁড়াবে না। যারা আমার থেকে কিছু পাওনা আছ শুধু তারাই দাঁড়াও।’
হাসান বশরী (রহ.) বলেন, সেদিন তাঁরাই আল্লাহর সামনে দাঁড়াবেন, যাঁরা মানুষকে বিনা শর্তে ক্ষমা করে দিয়েছিলেন।
ইমাম আহমদ (রহ.) বলেন, ‘আমিও তাঁদের একজন হতে চাই, যাঁরা সেদিন দাঁড়াতে পারবেন।’
ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রহ.) তাঁর ছেলেকে বললেন, ‘দেখো, একজন আদর্শ মানুষের উচিত না এমন কিছু করা, যাতে কেয়ামতের দিন তাঁর জন্য অন্য কেউ শাস্তি পাবে। তোমারও উচিত মানুষকে ক্ষমা করে দেওয়া, যাঁরা তোমাকে কষ্ট দেয়, তাঁদেরও। এর বিনিময়ে সেদিন তুমি আল্লাহর সামনে সম্মানিত হবে।’
অনুবাদ: সাজিদ আল মাহমুদ