মসজিদে নববি, মদিনা
মসজিদে নববি, মদিনা

মক্কা–মদিনা ছাড়া সর্বত্রগামী দজ্জাল

দজ্জাল  বা  দাজ্জাল  শব্দটির অর্থ মহাপ্রবঞ্চক। শেষ যুগে মানুষকে প্রতারণা করতে যার আবির্ভাব ঘটবে। পবিত্র কোরআনে দজ্জাল শব্দটি নেই। তবে হাদিসে দজ্জালের উল্লেখ আছে। হজরত মোহাম্মদ (সা.) দজ্জালের যে বিবরণ দিয়েছেন তা থেকে ধারণা করা হয়, দজ্জালের ডান চক্ষু অন্ধ থাকবে। তা ছাড়া তার দেহ হবে স্থূল, গাত্রবর্ণ লোহিত ও মাথার চুল কুঞ্চিত। তার অন্ধ চোখটিকে একটি ভাসমান আঙুলের মতো দেখাবে। তার কপালে ‘কাফির’ শব্দটি লেখা থাকবে, যা কেবল মুমিনরাই দেখতে পাবেন। দজ্জালের আবির্ভাবের আগে তিন বছর ভীষণ দুর্ভিক্ষ হবে। দজ্জাল বের হবে খোরাসান থেকে। দজ্জালের কোনো সন্তানসন্ততি থাকবে না। দজ্জালের সঙ্গে থাকবে আগুন ও পানি।

মসজিদুল হারাম, মক্কা

কোনো মুমিন যখন তাকে রব বলতে অস্বীকার করবে, তখন সে তাকে আগুনে নিক্ষেপ করবে, কিন্তু তাতে ওই মুমিন ব্যক্তি মহাশান্তি লাভ করবে। আর যে ব্যক্তি তাকে রব বলে মানবে, তাকে সে তার পানির মধ্যে নিক্ষেপ করবে। কিন্তু তাতে সে জ্বলন্ত আগুনে পুড়তে থাকবে। দজ্জালকে আল্লাহ এই ক্ষমতা দেবেন যে হত্যা করার পর তাকে সে একবার মাত্র পুনর্জীবিত করতে পারবে। পুনর্জীবিত হওয়ার পর দজ্জাল তাকে আর দ্বিতীয়বার হত্যা করতে সক্ষম হবে না। দজ্জাল মক্কা ও মদিনা ছাড়া পৃথিবীর সব নগরেই প্রবেশ করতে পারবে। মদিনায় ওই সময় সাতটি প্রবেশদ্বার থাকবে; কিন্তু দজ্জাল তার কোনো দ্বার দিয়েই প্রবেশ করতে না পেরে ফিরে যাবে। দজ্জাল ৪০ বছর বা মতান্তরে ৪০ দিন ক্ষমতাসীন থাকবে। তারপর মরিয়মপুত্র ঈসা (আ.) প্যালেস্টাইনে অবতরণ করে তাকে হত্যা করবেন।

প্রত্যেক নবী তাঁর অনুসারীদের দজ্জাল সম্বন্ধে সতর্ক করে গিয়েছেন। দজ্জালের দক্ষিণ চক্ষু অন্ধ হবে; আর এ তো নিশ্চিত যে আল্লাহ অন্ধ নন। এ থেকেও স্পষ্ট যে তার রব হওয়ার দাবি মিথ্যাচার ছাড়া আর কিছুই নয়। প্রাথমিক যুগের খ্রিষ্টানদের সাহিত্যে যিশুখ্রিষ্টবিরোধী যে ব্যক্তির উল্লেখ রয়েছে তার বিবরণ এ রকম: ‘সে দান গোত্রের স্বেচ্ছাচারী রাজা হবে। জেরুজালেমে সে নিজ রাজ্য স্থাপন করবে এবং সেখানেই সে তার সৈন্যসামন্তসহ যিশুখ্রিষ্টের হাতে নিহত হবে।’

আর হাদিসে বলা হয়েছে, কিয়ামতের আগে মক্কার সাফা পর্বত বিদীর্ণ হবে এবং তা থেকে শুক্রবারে ৬০ গজ দীর্ঘ একটি প্রাণী বের হয়ে আসবে। তার কাছে সুলায়মান (আ.)-এর মোহর ও মুসা (আ.)-এর লাঠি থাকবে। সে ওই লাঠি দিয়ে মুমিনদের আঘাত করলে তাতে তাদের মুখমণ্ডল উজ্জ্বল হয়ে উঠবে এবং তখন সবাই তাদের মুমিন বলে চিনতে পারবে। আবার সে তার মোহর দিয়ে যখন কারও নাকের ওপর ‘কাফির’ শব্দ সিলমোহর করে দেবে, তখন সবাই তাকে কাফির বলে চিনতে পারবে।

সূত্র: ‘দজ্জাল’, যার যা ধর্ম, মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান, প্রথমা প্রকাশন, ২০১৪