রোজা কি ভেঙে গেল?

সকালে টুথপেস্ট দিয়ে দাঁত ব্রাশ করা আমাদের সবারই অভ্যাস। পবিত্র রমজানের সকালেও অনেকেই টুথপেস্ট দিয়ে দাঁত ব্রাশ করেন। কারও কারও মনে সন্দেহও জেগে ওঠে, টুথপেস্ট দিয়ে দাঁত ব্রাশ করলে রোজা ভেঙে যায় না তো?

রোজা থাকা অবস্থায় চোখে ওষুধের ড্রপ ব্যবহারের কী বিধান বা রোজা রেখে ইনহেলার ব্যবহার করা যাবে কি না, ইনজেকশনও কি নেওয়া যায়—এসব নিয়েও রোজদারদের নানা প্রশ্ন। আমরা সেগুলোর উত্তর খোঁজার চেষ্টা করছি।

চোখের ড্রপ ব্যবহার

রোজা থাকা অবস্থায় চোখের বা কানের ড্রপ ব্যবহার করা যাবে। এ কারণে রোজা ভাঙবে না। এমনকি কানের বা চোখের ওষুধের স্বাদ যদি গলায় অনুভূত হলেও রোজা ভাঙবে না। কারণ, এসব পানাহারের বিষয় নয়।

কান বা চোখ পানাহারের পথও নয়। এ কারণেই চোখে বা কানে ওষুধ ব্যবহার করলে রোজা ভাঙবে না।

দাঁত ব্রাশ করা

অনেক ফকিহ বলেছেন, টুথপেস্ট দিয়ে দাঁত ব্রাশ করলে রোজা ভাঙে না। কারণ, টুথপেস্ট তো আমরা খাই না। তবে ব্রাশ করার সময় সতর্ক থাকতে হবে যে পেস্ট পেটে চলে না যায়। কোনো কোনো ফকিহ আবার বলেন, টুথপেস্ট দিয়ে ব্রাশ করলে রোজা মকরুহ হয়ে যায়। ভেঙে যাওয়ার কথা কেউ বলেননি।

কারও মনে সন্দেহ হলে সাহ্‌রি খেয়ে ভালো করে পেস্ট দিয়ে দাঁত ব্রাশ করে নেওয়া যায়। ইফতারের পরও চাইলে পেস্ট দিয়ে দাঁত ব্রাশ করা যায়। দিনের বেলা তারা পেস্টের বদলে মিসওয়াকও ব্যবহার করতে পারেন। রমজান মাসে অনেকেই রোজা রেখে দাঁত ব্রাশ করেন না, মিসওয়াকও করেন না। এটা মোটেই ঠিক নয়।

সারা দিন প্রতি ওয়াক্ত নামাজের আগে মিসওয়াক ব্যবহার করা যায়। রাসুল (সা.) মিসওয়াক ব্যবহার করতেন। তাই মিসওয়াক করা সুন্নত। হাদিসে আছে, মিসওয়াক করে নামাজ পড়লে তা উত্তম।

সুনানে আবু দাউদে যায়েদ বিন খালেদ আলজুহানী (রা.) বরাতে এক হাদিসে তিনি বলেন, ‘আমি রাসুলুল্লাহ (সা.) কে বলতে শুনেছি—আমার উম্মতের জন্য কষ্টের আশঙ্কা না হলে তাদের ওপর মিসওয়াককে প্রতি নামাজের জন্য ফরজ করে দিতাম।’

রোজা রেখে কুলি করা, নাকে পানি দিয়ে পরিষ্কার করা, পরিচ্ছন্ন হওয়ার জন্য গোসল করা, মিসওয়াক করা—এসবে সমস্যা নেই।

ইনহেলার নেওয়া

এ বিষয়ে ধর্মশাস্ত্রজ্ঞ অভিজ্ঞ চিকিৎসকেরা বলে থাকেন, ইসলাম অসম্ভব বাস্তবানুগ ধর্ম। তাই এর নিয়মকানুনের যুক্তির দিকটি দেখা উচিত। রোজা একই সঙ্গে সংযম শিক্ষা, শরীর ও মনকে ভোগের বদলে ত্যাগের অভিমুখ করা এবং দরিদ্রদের সঙ্গে সহানুভূতি দেওয়ার একটি অনুশীলন। এ সময় আমরা এমন কিছু করতে পারি না, যা সরাসরি পাকস্থলীতে যায় কিংবা অন্য কোনো উপায়ে শরীরে প্রবেশ করে শরীরকে পুষ্টি দিতে পারে বা চাঙা করে তোলে।

এ বিবেচনায় তাঁরা বলেন, ইনহেলার নিলে রোজা ভাঙার কারণ ঘটে না। কারণ, আমাদের কণ্ঠনালির শারীরবৃত্তীয় ধরনই এমন যে ইনহেলার পাকস্থলীতে যায় না, ফুসফুসে যায়। তাই রোজা রেখে ইনহেলার নিলে অসুবিধা নেই।

তবে নিয়মিত ইনহেলার ব্যবহারকারীদের মধ্যে যাঁরা সাহ্‌রির সময় এটি ব্যবহার করে ইফতার পর্যন্ত চলতে পারেন, তাঁরা সেভাবে চললেই উত্তম। যাঁরা ইনহেলার ব্যবহার না করলে অসুস্থ হয়ে পড়বেন, তাঁরা তা ব্যবহার করে রোজা রাখতে পারেন।

ইনজেকশন বা টিকা নেওয়া

ইনহেলারের নেওয়ার মতো একই যুক্তিতে ইনজেকশন বা টিকা নিলেও রোজা ভাঙার কারণ ঘটে না। কারণ, ইনজেকশন বা টিকার তরল আমাদের পাকস্থলীতে যায় না।

তবে সব ইনজেকশনের বেলায় এ নিয়ম প্রযোজ্য হবে না। প্রযোজ্য হবে শুধু রোগ নিরাময় বা নিয়ন্ত্রণ রাখার জন্য নেওয়া ইনজেকশনের ক্ষেত্রে। কোনো কোনো ইনজেকশন আমরা শরীরের পুষ্টির জন্য নিয়ে থাকি। যেমন স্যালাইন, ভিটামিন বা মিনারেলস। এসব ইনজেকশন নিলে রোজা ভেঙে যাবে।

সবশেষে

অসুস্থতার জন্য নিয়ত থাকা সত্ত্বেও কেউ রোজা রাখতে অপারগ হতে পারেন। আবশ্যকভাবে ওষুধ খাওয়ার কারণেও। সে ক্ষেত্রে রোজা রাখা বিধেয় নয়। আল্লাহ সব বোঝেন ও জানেন। এ ক্ষেত্রে পরে নিয়ম অনুযায়ী কাজা রোজা আদায় নিলেই হবে।