হজরত আদম (আ.)কে সব বস্তুর নাম শিখিয়ে দেন আল্লাহ

হজরত আদম (আ.) বিশ্বের প্রথম নবী। কোরআনে তাঁর নাম ১৯ বারের বেশি এসেছে। আল্লাহ হজরত আদম (আ.)–কে সব বস্তুর নাম শিখিয়েছি দেন। এর পর ফেরেশতাদের সামনে বিভিন্ন বস্তু তুলে ধরে বলেন, যদি তোমরা তোমাদের ধারণায় সঠিক হয়ে থাকো, তাহলে আমাকে এসব বস্তুর নাম বলে দাও। ফেরেশতারা বলল, হে আল্লাহ, আপনি পবিত্র। আমরা ততটুকুই জানি, যতটুকু আপনি শিখিয়েছেন। নিশ্চয় আপনি মহাজ্ঞানী, প্রজ্ঞাবান। (সুরা বাকারা, আয়াত: ৩১-৩২)

এরপর আল্লাহ ফেরেশতাদের আদেশ করলেন হজরত আদম (আ.)–কে সেজদা করতে। সব ফেরেশতা সেজদায় লুটিয়ে পড়ল, কিন্তু শয়তান সেজদা করল না।

আল্লাহ ফেরেশতাদের বললেন, আমি পৃথিবীতে আমার একজন প্রতিনিধি প্রেরণের ইচ্ছা করছি। ফেরেশতারা বলল, ‘হে আল্লাহ! আপনি পৃথিবীতে এমন সম্প্রদায়কে প্রতিনিধি বানাতে চাচ্ছেন, যারা মন্দ কাজ করবে এবং রক্তপাত ঘটাবে। আমরাই তো আপনার প্রশংসা করার সঙ্গে সঙ্গে আপনার তাসবিহ পাঠ করছি এবং পবিত্রতা বর্ণনা করছি।’ ফেরেশতাদের এ কথা শুনে আল্লাহ তাআলা বললেন, আমি যা জানি, তোমরা তা জানো না। (সুরা বাকারা, আয়াত: ৩০)

আল্লাহ হজরত আদম (আ.)-কে বললেন, ‘তুমি ও তোমার স্ত্রী জান্নাতে থাকো। যা ইচ্ছা খাও।’ এরপর বিশেষ একটি গাছ দেখিয়ে আল্লাহ বললেন, ‘তোমরা এর কাছেও যাবে না। অন্যথায় জালিমদের অন্তর্ভুক্ত হবে।’ এই বলে আল্লাহ পরীক্ষা করে দেখলেন, হজরত আদম (আ.) আল্লাহর কথা মানেন নাকি তা ভুলে গিয়ে শয়তানের চক্রান্তে ফেঁসে যান।

শয়তান আগে থেকেই অখুশি ছিল। কারণ তাঁর কারণেই সে আল্লাহর দরবার থেকে বিতাড়িত হয়েছে; আল্লাহর অভিশাপ তার ওপরে পড়েছে। তাই সে শপথ করেছে, ‘আমি হজরত আদম (আ.) আর তাঁর সন্তানদের কিয়ামত পর্যন্ত পথভ্রষ্ট করতে থাকব, যাতে তারা আল্লাহর কথা না মানে এবং মন্দ কাজ করতে থাকে।’

ইবলিস হজরত আদম এবং তাঁর স্ত্রী হজরত হাওয়া (আ.)-কে কুমন্ত্রণা দিতে লাগল, ‘তোমরা এই নিষিদ্ধ গাছের ফল খাও। এ গাছের ফল খেলে তোমরা মানুষ থেকে ফেরেশতায় রূপান্তরিত হবে। ফলে তোমরা কখনোই আর জান্নাত থেকে বের হবে না।’

হজরত আদম ও তাঁর স্ত্রী হজরত হাওয়া (আ.) শয়তানের কুমন্ত্রণার শিকার হয়ে নিষিদ্ধ গাছের ফল খেলেন। সঙ্গে সঙ্গে তাদের শরীর থেকে জান্নাতের পোশাক খসে পড়ল। গাছের পাতা দিয়ে তাঁরা নিজেদের শরীর ঢাকলেন।

আল্লাহ হজরত আদম (আ.)-কে বললেন, ‘আমি তোমাকে বলেছিলাম, এ গাছের কাছেও না যেতে এবং শয়তানের কথায় কান না দিতে, সে তোমাদের শত্রু। কিন্তু তোমরা তার কথা শুনেছ এবং ফল খেয়ে ফেলেছ। এখন তোমরা জান্নাত থেকে বেরিয়ে পৃথিবীতে চলে যাও এবং সেখানেই বসবাস করো।’

জান্নাত থেকে বের হয়ে যাওয়া এবং শয়তানের কবলে পড়ার কারণে হজরত আদম (আ.) খুব দুঃখ পেলেন। দীর্ঘকাল আল্লাহর কাছে কেঁদে কেঁদে ক্ষমা চাইলেন। অবশেষে আল্লাহর দয়া হলো। তিনি হজরত আদম (আ.)–কে একটি দোয়া শিখিয়ে দিলেন, ‘হে আমাদের রব, আমরা নিজেদের ওপর জুলুম করেছি। যদি আপনি আমাদের ক্ষমা না করেন, তাহলে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হব।’

হজরত আদম (আ.) কেঁদে কেঁদে এই দোয়া করতে থাকেন। আল্লাহ অপরিসীম দয়ালু। হজরত আদম (আ.) তাঁর সন্তানদের অনবরত বোঝালেন, ‘তোমরা কখনো শয়তানের কুমন্ত্রণায় কান দেবে না। সে আমাদের শত্রু। খারাপ কাজের জন্য সব সময় সে আমাদের প্রলুব্ধ করতে থাকে। আর শুনে রাখো, সব সময় আল্লাহর ইবাদত করবে, তাঁর আনুগত্য করবে, সত্য বলবে। কারও ওপর জুলুম করবে না। ভালো কাজে একে অন্যকে সহযোগিতা করবে।’

আল্লাহর কাছে এ প্রার্থনার পর হজরত আদম (আ.) এবং হজরত হাওয়া (আ.) দুনিয়ায় বসবাস করতে থাকেন। রাতদিন একাগ্রচিত্তে ইবাদতে নিয়োজিত থাকেন। তাঁদের অনেক সন্তান–সন্ততি জন্মগ্রহণ করেছিল।