ধর্ম

নিরাপত্তা, শান্তি ও স্থিতিশীলতায় ইসলামের নির্দেশনা

ইসলাম মানে আল্লাহর ইবাদতে আনুগত্যে আত্মসমর্পণ করা। সালাম মানে শান্তি। ইসলামের উদ্দেশ্য দুনিয়ায় শান্তির সমাজ স্থাপন করা। শান্তির জন্য চাই সম্মানজনক সহাবস্থান। শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের জন্য অপরিহার্য পূর্বশর্ত হলো ইনসাফ বা ন্যায় প্রতিষ্ঠা। ন্যায়বিচার ও ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত করাই হলো ইনসাফ। যিনি ইনসাফ করেন, তিনি মুনসেফ বা হাকিম তথা বিচারক। ‘আল্লাহ তাআলা হলেন সব বিচারকের শ্রেষ্ঠ বিচারক।’ (সুরা-৯৫ তিন, আয়াত: ৮)

ইনসাফের বিপরীত হলো জুলুম। জুলুম অর্থ নিপীড়ন, নির্যাতন, অন্যায়, অত্যাচার, অবিচার। পবিত্র কোরআনে উল্লেখ আছে, জুলুমের কারণে পৃথিবীর প্রাচীন শক্তিধর ছয়টি জাতি—কওমে নুহ, কওমে আদ, কওমে সামুদ, কওমে লুত, কওমে ফেরাউন ও আহলে মাদইয়ান আল্লাহর আজাবে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে।

আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আমি ধ্বংস করেছি কত জনপদ! যেগুলোর বাসিন্দা ছিল জালিম, এসব জনপদ ও তাদের ঘরের ছাদসহ ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছিল এবং কত কূপ পরিত্যক্ত হয়েছিল ও কত সুদৃঢ় প্রাসাদও।’ (সুরা-২২ হজ, আয়াত: ৪৫)। ‘কত বাগ–বাগিচা, কত ঝরনাধারা, কত ফল-ফসল এবং কত উন্নত স্থান তারা ছেড়ে গেছে এবং কত নিয়ামত, যার ভোগে তারা মগ্ন ছিল। এভাবেই অন্য কোনো জাতিকে আমি এগুলোর উত্তরাধিকার দান করেছি, কিন্তু তাদের শোকে কাঁদেনি আসমান ও জমিন, আর তাদের দেওয়া হয়নি কোনো অবকাশ।’ (সুরা-৪৪ দুখান, আয়াত: ২৫-২৮)। ‘আর যদি তুমি দেখতে, যখন জালিমরা মৃত্যুযন্ত্রণায় থাকে, এমতাবস্থায় ফেরেশতারা তাদের হাত প্রসারিত করে (বলে) তোমাদের জান বের করো; আজ তোমাদের প্রতিদান দেওয়া হবে লাঞ্ছনার আজাব, কারণ, তোমরা অহংকার করতে।’ (সুরা-৬ আনআম, আয়াত: ৯৩) 

‘তাদের যে উপদেশ দেওয়া হয়েছিল তারা যখন তা বিস্মৃত হলো, তখন আমি তাদের জন্য সবকিছুর দ্বার উন্মুক্ত করে দিলাম, অবশেষে তাদের যা দেওয়া হলো যখন তারা তাতে উল্লসিত হলো তখন অকস্মাৎ তাদের পাকড়াও করলাম। ফলে তখন তারা নিরাশ হলো। অতঃপর জালিমদের মূলোৎপাটন করা হলো, সকল প্রশংসা আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের জন্য।’ (সুরা-৬ আনআম, আয়াত: ৪৪-৪৫)

ইনসাফ বা ন্যায়নীতি পরিত্যাগ করাই জুলুম। ইসলামের জন্য হলো ইহজগতে শান্তি ও পরজগতে মুক্তি নিশ্চিত করা। জালিম ও জালিমের সহযোগীদের এই জগতে অশান্ত লাঞ্ছনা ও মন্দ পরিণতি এবং পরকালে ভয়াবহ কঠিন শাস্তির দুঃসংবাদ রয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আর তোমরা জালিমদের প্রতি ঝুঁকে পড়বে না, জালিমদের সহযোগী হবে না, তাহলে আগুন (জাহান্নাম) তোমাদের স্পর্শ করবে।’ (সুরা-১১ হুদ, আয়াত: ১১৩) 

আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের শাস্তি, আজাব ও গজবের পাকড়াও যেদিন আসবে, সেদিন জালিমকে বাঁচানোর কেউ থাকবে না। কোরআন মাজিদে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তাদের (জালিমদের) সাবধান করে দাও আসন্ন দিন সম্পর্কে, যখন দুঃখ–কষ্টে তাদের প্রাণ ওষ্ঠাগত হবে। জালিমদের জন্য কোনো অন্তরঙ্গ বন্ধু নেই এবং যার গ্রহণযোগ্য কোনো সুপারিশকারীও নেই।’ (সুরা-৪০ মুমিন, আয়াত: ১৮)। ‘আমি জালিমদের জন্য আগুন প্রস্তুত করে রেখেছি, যার বেষ্টনী ওদের ঘিরে রাখবে। আর যদি ওরা পানির জন্য ফরিয়াদ করে, তবে ওদের পুঁজের মতো পানি দেওয়া হবে, যা ওদের চেহারা পুড়ে ফেলবে। কতই না নিকৃষ্ট পানীয় এবং কতই না নিকৃষ্ট বিশ্রামস্থল!’ (সুরা-১৮ কাহাফ, আয়াত: ২৯)। ‘জালিমদের জন্য কোনো সাহায্যকারী নেই।’ (সুরা-৩ আলে ইমরান, আয়াত: ১৯২) 

শান্তি, নিরাপত্তা ও সফলতার জন্য জুলুম থেকে বিরত থাকতে হবে এবং জুলুমমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে হবে। জুলুম করা থেকে বাঁচার উপায় হলো, লোভ–লালসা, ক্ষমতার লিপ্সা, হিংসা, প্রতিশোধস্পৃহা ও ক্রোধ সংবরণ করা

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘জুলুম কিয়ামতের দিন অন্ধকাররূপে আবির্ভূত হবে।’ (বুখারি: ২৪৪৭) 

জুলুমের মূল অর্থ হলো কোনো কিছু অপাত্রে রাখা। অযোগ্যদের দায়িত্ব দেওয়াও জুলুম। (লিসানুল আরব, ইবনু মানযূর)। ‘জালিম অপরাধীরা কখনো সফল হয় না।’ (সুরা-৬ আনআম, আয়াত: ১৩৫, সুরা-১২ ইউসুফ, আয়াত: ২৩৪, সুরা-২৮ কাসাস, আয়াত: ৩৭)

শান্তি, নিরাপত্তা ও সফলতার জন্য জুলুম থেকে বিরত থাকতে হবে এবং জুলুমমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে হবে। জুলুম করা থেকে বাঁচার উপায় হলো লোভ–লালসা, ক্ষমতার লিপ্সা, হিংসা, প্রতিশোধস্পৃহা ও ক্রোধ সংবরণ করা। 

মুফতি মাওলানা শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী

যুগ্ম মহাসচিব, বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতি; সহকারী অধ্যাপক, আহ্ছানিয়া ইনস্টিটিউট অব সুফিজম

smusmangonee@gmail.com