একজন অসাধারণ শিক্ষক

আমরা সেই মায়ের গল্প শুনেছি, যিনি তাঁর সন্তানকে বাঁচাতে কোরআনের সাহায্য নিয়েছিলেন। এরপর আমরা সেই বিজ্ঞ বিচারকের কথা শুনলাম, যিনি বাইজেন্টাইনদের বিতর্কে হারিয়েছিলেন। ইসলামের এসব মানুষ কিন্তু এমনি এমনি তৈরি হননি। তাঁরা ছিলেন তীব্র জ্ঞানপিপাসু। তাঁদের জানার আগ্রহ এসেছিল আমাদের নবী মুহাম্মদ (সা.)–এর কাছ থেকে। তিনি বলেছিলেন, ‘দোলনা থেকে কবর পর্যন্ত জ্ঞান অন্বেষণ করো।’ তাঁর থেকে সাহাবিরা এবং সাহাবিদের থেকে তাবেয়িরা এ শিক্ষা লালন করেছিলেন।

সাহাবিদের যুগে শিশুরাও বড়দের পাশে বসে থাকত জানার উদ্দেশ্যে। প্রশ্ন করতে তারা কোনো দ্বিধা করত না। ইসলামের পণ্ডিতেরা শিশুদের কতটা গুরুত্ব দিতেন, একটি ঘটনা থেকে সেটা বোঝা যায়।

ঘটনাটি বর্ণনা করেছেন একজন তাবেয়ি আবদুল্লাহ ইবনে হারেস (রহ.)।

ইবনে হারেস (রহ.) বলেন, ‘আমি যখন ছোট ছিলাম তখন বিভিন্ন সাহাবি ও তাবেয়ির পাশে বসে থাকতাম। তাঁরা কী বলছেন, তা মনোযোগ দিয়ে শুনতাম। সে সময় প্রসিদ্ধ তাবেয়ি ছিলেন কাব ইবনে আহবার (রহ.)। তিনি ছিলেন ইহুদি আলেম। পরে ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন। মহানবী (সা.)–কে সরাসরি দেখার সৌভাগ্য তাঁর হয়নি। হজরত উসমান (রা.)–এর খেলাফতের সময় তিনি ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন। তাঁর কাছে অনেক মুসলিম জ্ঞান শিক্ষা করতে আসত।

একদিন কাব (রহ.) সুরা আমবিয়ার তাফসির করছিলেন। যেখানে অনেকের মধ্যে আমি বসা ছিলাম। একটি আয়াত ছিল এমন, ‘(ফেরেশতারা) তারা দিনরাত আল্লাহর পবিত্রতা ও মহিমা বর্ণনা করে এবং ক্লান্ত হয় না।’ (সুরা আম্বিয়া, আয়াত: ২০)

আয়াতটি শুনে আমি একটু জোরে বলে ফেললাম, ‘এটা কীভাবে সম্ভব, ফেরেশতারা কীভাবে একটানা আল্লাহর প্রশংসা করতে পারে। তাদের তো অনেক কাজ থাকে। তাদের বাণী পৌঁছে দিতে হয়, আমলনামা লিখতে হয়। আরও কত কাজ।’

কাব ইবনে আহবার (রহ.) আমার কথা শুনে ফেললেন। তিনি আমাকে কাছে ডাকলেন। এরপর আমার কপালে একটি চুমু দিয়ে বললেন, ‘তুমি যে শ্বাস নাও একটু পরপর। একই সঙ্গে অন্যান্য কাজও তো করো। শ্বাস নেওয়ার সময় খেলতে যাও, শ্বাস নিয়ে পড়াশোনা করো, কথা বলো, খাও। তোমার কি কোনো সমস্যা হয়?’

আমি বললাম, ‘না, কোনো সমস্যা হয় না।’

একইভাবে ফেরেশতারাও আল্লাহর প্রশংসা করেন। তারা আল্লাহর প্রশংসা না করে থাকতেই পারেন না। তারা কখনো ক্লান্তও হন না।

আমাদের অনেকের হয়তো শিক্ষককে প্রশ্ন করার বাজে অভিজ্ঞতা হয়েছে। প্রশ্ন করার কথা বললেও অনেক শিক্ষক প্রশ্নের উত্তর দিতে চান না। অনেকে উত্তরের সঙ্গে দু–একটা কথা শুনিয়ে দেন। ইসলামের শিক্ষকেরা এমন ছিলেন না। তাঁরা ছোটদের কথা সমান গুরুত্ব দিয়ে শুনতেন। তাঁদের স্নেহের সঙ্গে বুঝিয়ে দিতেন। তাঁদের এই শিক্ষাব্যবস্থা থেকে বড় মাপের তাবেয়িদের জন্ম হয়েছিল, যাঁরা ইসলামের পতাকা সমুন্নত রেখেছিলেন দীর্ঘকাল।

অনুবাদ: সাজিদ আল মাহমুদ