পাপ থেকে প্রত্যাবর্তন করার নাম তওবা

আরবি ‘তওবা’ শব্দের অর্থ ‘পাপ থেকে প্রত্যাবর্তন’। পবিত্র কোরআনে তওবা বিষয়টির ওপর অত্যন্ত গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। বিগত পাপের জন্য অন্তরে অনুশোচনা ও সেই সঙ্গে ভবিষ্যতে সৎ জীবনযাপনের সংকল্পকেই ইসলামি পরিভাষায় তওবা বলা হয়। যে আন্তরিকভাবে তওবা করে তাকে ইসলাম নিষ্পাপ শিশুর সঙ্গে তুলনা করেছে।

পবিত্র কোরআনে সুরা তাহরিম-এর ৮ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, ‘হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা আল্লাহর কাছে তওবা করো—বিশুদ্ধ তওবা; হয়তো তোমাদের প্রতিপালক তোমাদের মন্দ কাজগুলো মুছে দেবেন আর তোমাদের প্রবেশ করাবেন জান্নাতে, যার পাদদেশে নদী বইবে।’ সত্যিকার তওবা দিয়েই প্রকৃত ধর্মজীবনের সূচনা করা যায়। পীরের হাতে ‘তওবা পাঠ’ করে মুরিদ হওয়া একটি রেওয়াজে পরিণত হয়েছে। কিন্তু মনে রাখা দরকার, কোনো বিশেষ বাক্য উচ্চারণকে ইসলাম তওবা বলে মনে করে না। তওবা একটি মনস্তাত্ত্বিক পরিবর্তন, যার ফলে গোটা নৈতিক জীবনই নতুন খাতে বইতে শুরু করে। তওবা অর্থ হলো ফিরে আসা। মানুষ যখন ভুল পথে যায় বা বিপথগামী হয়, তখন সেখান থেকে সঠিক পথে বা ভালো পথে ফিরে আসাকে তওবা বলা হয়। তওবার পারিভাষিক অর্থ হলো লজ্জিত হওয়া। অর্থাৎ স্বীয় কৃতকর্মে লজ্জিত হয়ে সঠিক পথে ফিরে আসা।

তওবার জন্য করণীয় হলো, স্বীয় কৃতকর্মের প্রতি লজ্জিত ও অনুতপ্ত হওয়া, সেই অপরাধ আর না করার দৃঢ়প্রত্যয় ও সংকল্প গ্রহণ করা এবং নেক আমলের প্রতি বেশি মাত্রায় মনোযোগী হওয়া। তওবা সম্পর্কে কোরআনে রয়েছে, ‘হে ইমানদাররা, তোমরা আল্লাহর কাছে খাঁটি তওবা করো, আশা করা যায় তোমাদের রব তোমাদের পাপগুলো মোচন করবেন এবং তোমাদের এমন জান্নাতগুলোয় প্রবেশ করাবেন, যার তলদেশে ঝরনাগুলো প্রবহমান।’ (সুরা-৬৬ তাহরিম, আয়াত: ৮)। ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা তওবাকারীদের ও পবিত্রতা অর্জনকারীদের ভালোবাসেন।’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ২২২)। ‘(হে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আপনি বলুন, (আল্লাহ বলেন) হে আমার বান্দারা! যারা নিজেদের সত্তার প্রতি সীমাহীন জুলুম করেছ, তোমরা আল্লাহর রহমত হতে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা সব গুনাহ ক্ষমা করে দেবেন; নিশ্চয়ই তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’ (সুরা জুমার, আয়াত: ৫৩)।

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘হে মানব সকল! তোমরা আল্লাহর দিকে ফিরে আসো, নিশ্চয় আমি প্রতিদিন ১০০ বার তওবা করি।’ (মুসলিম)। তিনি আরও বলেন, ‘সকল আদম সন্তানই গুনাহগার, গুনাহগারদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ হলো তওবাকারীরা। (তিরমিজি, ইবনে মাজা, দারেমি)। তওবার সুফল সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘গুনাহ থেকে তওবাকারী, বেগুনাহ ব্যক্তির মতো।’ (ইবনে মাজা, বায়হাকি)।

আল্লাহর হক আল্লাহ ক্ষমা করবেন; কিন্তু বান্দার হক বান্দা ক্ষমা না করলে আল্লাহ ক্ষমা করবেন না। তাই তাওবা ইস্তিগফারের সঙ্গে সঙ্গে বান্দার হক পরিশোধ করা বা ক্ষমা চেয়ে নেওয়া অবশ্যকর্তব্য।

কোনো অন্যায় করার পর ভুল বুঝতে পারলে তখনই আল্লাহর কাছে তওবা করুন। আল্লাহ সবাইকে তওবা করার নির্দেশ দিয়েছেন। তওবায় আল্লাহর নেয়ামত ও সন্তুষ্টি মেলে। আল্লাহর কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা করে ফিরে যাওয়ার পথ তওবা। তওবাকারীকে আল্লাহ দান করেন অসংখ্য নিয়ামত।

হজরত আনাস ইবনে মালিক (রা.) বর্ণনা করেছেন যে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, আল্লাহ তাঁর বান্দার তওবায় সেই ব্যক্তির চেয়েও বেশি খুশি হন, যার উট গভীর মরুভূমিতে হারিয়ে যাওয়ার পর আবার সে তা ফিরে পায়। (বুখারি ও মুসলিম)

সাইয়েদুল ইসতেগফার পড়ে তওবা করুন, ‘আল্লাহুম্মা আন্তা রাব্বি লা ইলাহা ইল্লা আন্তা খালাক্কতানি ওয়া আনা আবদুকা ওয়া আনা আলা আহ্দিকা ওয়া ওয়াদিকা মাসতাতাতু আউজুবিকা মিন শাররি মা সানাতু আবুউলাকা বিনিমাতিকা আলাইয়্যা ওয়া আবুউলাকা বিজাম্বি ফাগফিরলি ফা-ইন্নাহু লা ইয়াগফিরুজ জুনুবা ইল্লা আন্তা।’

অর্থাৎ, ‘হে আল্লাহ! তুমিই আমার প্রতিপালক। তুমি ছাড়া কোনো ইলাহ নেই। তুমিই আমাকে সৃষ্টি করেছ। আমি তোমারই বান্দা। আমি যথাসাধ্যভাবে তোমার সঙ্গে প্রতিজ্ঞা ও অঙ্গীকারে আবদ্ধ। আমি আমার সব কৃতকর্মের কুফল থেকে তোমার কাছে আশ্রয় চাই। তুমি আমাকে তোমার যে নেয়ামত দিয়েছ, তা স্বীকার করছি। আর আমার করা গুনাহর কথাও স্বীকার করছি। তুমি আমাকে ক্ষমা করো। কারণ, তুমি ছাড়া আর কেউ (আমার) গুনাহ ক্ষমা করতে পারবে না।’